জিপিএ-৫ পেলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাবেন না ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪১ AM , আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৪০ PM
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সদ্য ঘোষিত ফলাফলে ১০ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছেন। রবিবার (২৬ নভেম্বর) প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। অথচ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সব মিলিয়ে আসন রয়েছে ৪৯ হাজারের মতো। সে হিসেবে জিপিএ-৫ ধারী অন্তত ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন পাবেন না।
অবশ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় আসন রয়েছে পাঁচ লাখের বেশি। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যর হিসাবে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগ পাবেন সবাই। তবে শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য হবে তীব্র লড়াই। এ ছাড়া স্নাতক পর্যায়ে দেশে প্রায় ১৩ লাখ আসন আছে। ফলে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থী না পাওয়ায় প্রায় আড়াই লাখ আসন ফাঁকা থেকে যাবে।
জানা গেছে, এইচএসসি ও সমমানে ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের মূল টার্গেট থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়লগুলোতে আসন রয়েছে ৪৯ হাজার। সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার। ফলে জিপিএ-৫ পেলেও অনেক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাবেন না।
শুধু তাই নয়, জিপিএ-৫ পাওয়া অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পাবেন না। কম জিপিএ নিয়েও অনেকে পাবলিকে চান্স পাবেন। ফলে সুযোগ না পাওয়া জিপিএ-৫ ধারীর সংখ্যা বাড়বে। তবে তাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজে ভর্তির সুযোগ থাকবে। অনেকে দেশের বাইরেও পড়াশোনো করতে যাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও এ ধরনের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে সর্বমোট আসন আছে ৪৯ হাজার ২৫৫টি। দেশে ৯৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু থাকলেও হাতেগোনা ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয়।
যদিও এসব প্রতিষ্ঠানে সবার ভর্তির আর্থিক সঙ্গতি নেই, তবু এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করলে ২০ হাজার আসন যোগ করা যায়। এছাড়া মেডিকেল ও ডেন্টালে আসন আছে ১২ হাজার ও দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাজীপুরের আইইউটি ও চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন) ৪৪০টি। শিক্ষার্থীদের অনেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর বিশেষায়িত কারিগরি শিক্ষায় ভিড়ে যায়।
এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ৬শ এবং ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিকাল কলেজে ৬৫৪টি আসন আছে। যারা ইসলামি বিশেষজ্ঞ হতে চায় তাদের জন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্সে ভর্তির জন্য প্রায় ৬ হাজার আসন আছে। সবমিলে আসন সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৯০ হাজার। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, ভর্তি পরীক্ষায় সবগুলোতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাই সুযোগ পাবে।
রোববার সকালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফল তুলে দেন শিক্ষা বোর্ডগুলো চেয়ারম্যানরা। দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
জানা গেছে, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাস করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন পরীক্ষার্থী। আর পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিলেন ১৩ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী।
নয়টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় দশমিক ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। গতবছর নয়টি সাধারণ বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় ৮৪ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিলেন। গতবছর শুধু এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৫ জন শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছিলেন ১৩ লাখ ৫৯ হাজার পরীক্ষার্থী। গত ১৭ আগস্ট থেকে এ পরীক্ষা শুরু হয়ে চলে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীরা ফল পাবেন বলে জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে এগিয়ে আছেন ছাত্রীরা। চলতি বছর উত্তীর্ণ ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ হাজার পরীক্ষার্থীরা মধ্যে ছাত্রী ৫ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি ও ছাত্র ৫ লাখ ২৮ হাজারের বেশি জন। এইচএসসি ও সমমানে মোট পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। পাসের হারেও এগিয়ে ছাত্রীরা। ছাত্রীদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ছাত্রীদের থেকে বেশি সংখ্যক ছাত্র অংশ নিয়েছিলেন। পরীক্ষায় অংশ নেয়া মোট ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ছিলেন ৬ লাখ ৮৯ হাজার ও ছাত্রী ছিলেন ৬ লাখ ৬৮ হাজার।