ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: ভিডিও ধারণ করা মোবাইলের হদিস মিলছে না

নির্যাতনের শিকার ছাত্রী ও ইবি লোগো
নির্যাতনের শিকার ছাত্রী ও ইবি লোগো  © ফাইল ফটো

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর র‌্যাগিংয়ের ঘটনার ভিডিও ধারণ করা মোবােইলের এখনও হদিস মেলেনি। মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইবি থানার ওসি বরাবর লিখিত চিঠি  দিয়েছিলেন। তবে ফোনটি পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে ধোয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। 

জানা যায়, ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে এই ঘটনায় জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো উদ্ধার হয়নি অভিযুক্ত হালিমা খাতুন উর্মীর মোবাইলে করা নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপ এবং ধারণকৃত সেই মোবাইল ফোন। উদ্ধার কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২০ মার্চ) ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননূর যায়েদ বিপ্লব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুনের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের সত্যতার প্রমাণ পান হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করারও প্রমাণ মেলে। পরে ১ লা মার্চ জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে বহিষ্কার, ভুক্তভোগীকে তার পছন্দমতো সিট বরাদ্দ দেয়া ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই দিনই শেখ হাসিনা হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করে প্রশাসন। পরে ৪ মার্চ নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। 

বহিষ্কৃতরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগ সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি ও ফিন্যান্স বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। অন্তরা বাদে সকলেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। তারা সকলেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই ঘটনায় গত ১লা মার্চ পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এদিকে গত ৬ মার্চ  হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনার কপি হাতে পায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রায়ের কপিতে ছাত্রী নির্যাতনের ভিডিও ধারণকৃত মোবাইল ফোন উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। যেখানে চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উর্মীর নাম উঠে আসে। তার মোবাইল দিয়েই সেদিন নির্যাতনের ভিডিও করা হয়। পরে মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য ৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইবি থানা বরাবর লিখিত আবেদন দেয়া হয়। এরপর থেকে ভিডিও ধারণকৃত সেই মোবাইল উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

অভিযোগ ওঠে, ঘটনার রাতে চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী হালিমা আক্তার ঊর্মির স্মার্টফোনে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করা হয়। জানা যায়, ঊর্মি ‘অপ্পো সি-ওয়ান’ মডেলের একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন। ওই ফোনেই ভিডিও ধারণ করা হয় বলে দাবি ভুক্তভোগীর। এদিকে ঘটনার পর থেকে আর সেই ফোন ব্যবহার করছেন না অভিযুক্ত ঊর্মি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ডায়না চত্বরে অনুষ্ঠানে স্টেজ পারফরম্যান্স করার সময় ফোনটি হারিয়ে গেছে বলে জানায় ঊর্মি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, গত ৬ মার্চ উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনার কপি আমাদের হাতে আসে। তাতে যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয় তা সবগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। গত ৭ মার্চ মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইবি থানার ওসি বরাবর লিখিত চিঠি প্রদান করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনার পর মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য ইবি থানা বরাবর আবেদন দেয়া হয়েছিল। পরে থানা থেকে ওই সংক্রান্ত বেশকিছু তথ্য চাওয়া হয়। পরে তথ্যগুলো সংগ্রহ করে থানায় পাঠানো হয়। কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অগ্রগতি হলে জানানো হবে।

এ বিষয়ে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননূর যায়েদ বিপ্লব বলেন, চিঠি হাতে পেয়েই আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের আইটি টিম কাজ করছে। ফোনটি উদ্ধার হলেই জানানো হবে।


সর্বশেষ সংবাদ