আপনি আগুনের কাছে থাকলেন না কেন: সাংবাদিককে প্রক্টর

প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিক এবং সহকারী প্রক্টর কাজী এম আনিছুল ইসলাম
প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিক এবং সহকারী প্রক্টর কাজী এম আনিছুল ইসলাম  © ফাইল ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) পাহাড়ে আগুন লাগার ঘটনায় প্রক্টরের মন্তব্য জানতে গেলে সাংবাদিককে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের বিরুদ্ধে। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় লালন চত্বরে আগুন লাগার ঘটনায় মন্তব্য জানতে চাইলে খোলা কাগজের কুবি প্রতিনিধি মো. হাছিবুল ইসলাম সবুজকে হেনস্তা করেন তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় লালন চত্বরে আগুন দেখতে পান শিক্ষার্থীরা। এসময় পাহাড়ের বিভিন্ন অংশের গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ আগুন জ্বলে কালো বর্ণ ধারণ করে আশপাশের গাছপালাও। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে না পারলেও শিক্ষার্থীরা বলছেন, মাদকসেবীদের গাঁজার আগুন থেকেই এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শেখ মাহবুব বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় আগুন লাগার ঘটনাটি আমি দেখেছি। সম্ভবত গাঁজা থেকেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল আগুন। পাহাড়ের ওই অংশটিতেই মাদকসেবীরা বেশি যাতায়াত করে। বহিরাগতদের আনাগোনাও বেশি সেখানে।

আরো পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষকের তালা

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, প্রায়সময়ই পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও প্রশাসন এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। যেকোনো সময় বড় কোনো দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে যান খোলা কাগজের কুবি প্রতিনিধি মো. হাছিবুল ইসলাম সবুজ। তিনি ঘটনাটির ভিডিও ধারণ করেন এবং এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিককে মুঠোফোনে কল দেন। এসময় ওমর সিদ্দিকী বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। এসময় তিনি আগুন লাগার বিষয়টি স্বাভাবিক দাবি করে নিরাপত্তাকর্মী পাঠাচ্ছেন বলেও জানান। 

তবে কিছুক্ষণ পর পুনরায় প্রতিবেদককে কল দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন প্রক্টর। এরপরেই সাংবাদিককে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। সেখানে ছাই দেখতে পেয়ে অগ্নিকাণ্ডকে আগের কোনো সময়ের ঘটনা দাবি করেন তাঁরা। প্রতিবেদক নিজের কাছে ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত আছে দাবি করলে তার ওপর চড়াও হয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আপনি আগুনের (আগুন লাগার পর) কাছে থাকলেন না কেন? আগুন কি হাত দিয়ে (আগুন) নিভিয়েছেন? আগুন লাগলে মাটি ঠাণ্ডা কেন?’

একই সময়ে সাথে থাকা সহকারী প্রক্টর কাজী এম আনিছুল ইসলাম প্রতিবেদকের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এটা যে আজকের ঘটনা তার প্রমাণ দেখান। এখান থেকে ধোঁয়া উড়ছে না কেন? ঘটনাস্থলে কি আপনি এসেছিলেন?' পরে ভিডিও ফুটেজ দেখানো হলে তিনি প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘ভিডিওটি যে আজকের সেটির কী প্রমাণ আছে আপনার কাছে?’

আরো পড়ুন: ছিনতাইকালে হাতে-নাতে আটক সেই ৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করল ঢাবি

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক হাছিবুল ইসলাম সবুজ বলেন, অগ্নিকাণ্ড দেখেই আমি ভিডিও ফুটেজ নিয়ে প্রক্টরকে ফোন দেই। শুরুতে তিনি স্বাভাবিক ব্যবহার করলেও পরবর্তীতে আমার সাথে রূঢ় আচরণ করেন। অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে আমাকে হেনস্তা করেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। 

তবে প্রতিবেদকের ওপর চড়াও হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সহকারী প্রক্টর কাজী এম আনিছুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগুন অবশ্যই লেগেছে। তবে আমার ধারণা এটা অনেক আগের। যাচাই-বাছাই (বিষয়টি) করার জন্য তথ্য জানতে চেয়েছি। আগুন লাগার ক্ষেত্রে প্রতিবেদকের শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকা উচিত ছিলো। সে ঘটনাস্থল থেকে চলে গেল কেনো?

একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কোনো সাংবাদিক হেনস্তা করিনি।’

উল্লেখ্য, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে কুবির পাহাড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালের ১৪ মার্চ  কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার পাশের পাহাড়ে আগুন লাগলে পরিচ্ছন্নতার জন্য আগুন দেওয়া হয়েছে দাবি করে কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের ১৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পাশের একটি পাহাড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তখন বহিরাগত মাদকসেবীদের দ্বারা এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০২২ সালের অগ্নিকাণ্ডেও প্রশাসন একই কথা বলেছিল। তবে মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence