শিক্ষক নিয়োগ

পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে কুবি প্রশাসনের ‘অভিনব’ বিজ্ঞপ্তি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

নির্দিষ্ট এক প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান নীতিমালা লঙ্ঘন করে একই সাথে দুই নীতি অনুসরণ করে ‘অভিনব’ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এ বিজ্ঞপ্তি কোনোভাবেই বিধিসম্মত নয় বলে বলে মন্তব্য করেছে ইউজিসি। এ বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের কার্যালয়ে গিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও প্রতিবেদকের সাথে দেখা করতে রাজি হননি তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার সুপারিশের কারণে নীতিমালা লঙ্ঘন করে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। সুপাশিকৃত ওই প্রার্থী মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফল ৩ দশমিক ৬ এর নিচে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী ওই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে আবেদনের জন্য উভয় পরীক্ষার ফলাফল ন্যূনতম ৩ দশমিক ৭ থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ জামিনুর রহমান স্বাক্ষরিত ইউজিসির নির্দেশিকায় এ ফলাফলকে ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫ নির্ধারণ করে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ যোগ্যতা একই বা বেশি হলে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন আবশ্যক নয় বলছে ইউজিসি।

আরও পড়ুন: কিছু উপাচার্যের দায়িত্ব পরিবারের লোকদের চাকরি দেয়া: রাষ্ট্রপতি

গত ২ নভেম্বর রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যমান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা অনুসারে যোগ্যতা নির্ধারণের পর বাড়তি এক অনুবিধি যোগ করে বলা হয়েছে, ‘এমফিল/সমমান বা পিএইচডি ডিগ্রিধারী অথবা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম দু’বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ স্বীকৃত জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ আছে, এমন প্রার্থীদের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক নির্ধারিত যোগ্যতা প্রযোজ্য হবে।’

তবে ইউজিসির যে নির্দেশিকার কথা অনুবিধিতে যোগ করা হয়েছে, ওই নির্দেশিকায় এ যোগ্যতাকে অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচনা করে এজন্য উল্লেখিত যোগ্যতার (বিভিন্ন পরীক্ষার ফল) কোনো শর্ত কোনোভাবেই শিথিলযোগ্য হবে না বলা হয়েছে। নির্দিষ্ট ওই প্রার্থীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’বছরের বেশি সময় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

এছাড়া, গত চার বছরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রকাশিত অন্তত পাঁচটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানেও শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালার বাইরে এ ধরনের বাড়তি কোনো অনুবিধি ছিল না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের যোগ্যতার বিষয়টি সুস্পষ্ট করার লক্ষে কর্তৃপক্ষ এ শর্তটি যুক্ত করেছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি নজিরবিহীন। কোনো অনুবিধি যুক্ত করতে চাইলে অবশ্যই স্বাভাবিক নিয়মে তা বিভাগ, অনুষদ, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে পাশ করে আসতে হবে। এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি স্পষ্টতই আইনের লঙ্ঘন। প্রশাসন এখানে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব পোষণ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান নীতিমালা ইউজিসি প্রেরিত নির্দেশিকাকে সমর্থন করলেও চলতি বছরে উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর অধ্যাপক আবদুল মঈনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবারই মার্কেটিং বিভাগকে শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির নির্দেশিকা অনুসরণ করে শিক্ষকের চাহিদা পাঠাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, রেজিস্ট্রার ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী প্ল্যানিং করে চাহিদা পাঠাতে বলেছিলেন। তবে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি সে বিষয়ে একমত না হওয়ায় শিক্ষক নিয়োগের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ীই প্ল্যানিং করে পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত যুক্ত অনুবিধির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে।

প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তির অতিরিক্ত অনুবিধি অনুযায়ী ৩ দশমিক ৫ ফলাফলধারী প্রার্থীদের বাছাই করা হবে নাকি বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী ৩ দশমিক ৭ ফলাফলধারী প্রার্থীদের নির্বাচন করা হবে-এমন প্রশ্নে প্ল্যানিং কমিটির মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান অধ্যাপক আমজাদ।

এর আগে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর আমলেও নির্দিষ্ট ওই প্রার্থীর জন্য আবেদন যোগ্যতা কমাতে বলা হয়েছিল। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব বলেন, যোগ্যতা কমানোর জন্য সেসময়ে আমাদের কাছে একটি চিঠি এসেছিল। অনুষদের নির্বাহী সভায় যোগ্যতা কমানোর পক্ষে কেউ মতামত না দেওয়ায় বিষয়টি আর সামনের দিকে এগোয়নি।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, সার্কুলার দেখে বোঝা যায় এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। নির্দিষ্ট প্রার্থীকে টার্গেট করে এরকম সার্কুলার দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ইউজিসির নির্দেশিকা অনুযায়ী নতুন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা প্রণয়নের আগে বর্তমান নীতিমালার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একইসাথে জগাখিচুড়ির মতো দু’রকম নীতিমালা গ্রহণ করতে পারে না। এ বিষয়টি আমরা খোঁজ নেব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence