১৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রথম শহীদ হন তিতুমীর

শহীদ তিতুমীর
শহীদ তিতুমীর  © ফাইল ছবি

‘‘ভাই সব, একটু পরেই ইংরেজ বাহিনী আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে। লড়াইতে হার-জিত আছেই। এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। দেশের জন্য শহীদ হওয়ার মর্যদা অনেক। বে এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে। আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে।’’

কথাগুলো কোন রাজনৈতিক নেতার মেঠ বক্তৃতা নয়। নয় কোন ভাষণ লেখকের কলম কালির ফসল।সামনে মৃত্যুদূত পেছনে নিশ্চিত মৃত্যু। অতপর তিনি দাঁড়ালেন আর রচনা করলেন স্বাধীনতার রক্তকবরী। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক কিংবদন্তি সূর্য পুরুষ শহীদ তিতুমীর। ব্রিটিশ বাহিনীর ঠিক যে বুলেটটি তিতুমীরের বুকে প্রবেশ করেছিল সেই বুলেটটি কি জানত এক ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে।

তিতুমীরের স্বপ্ন পুরণ হয়েছে ঠিকই। উদ্ধার হয়েছে দেশও কিন্তু এই মহান বিপ্লবীকে তার উপযুক্ত সম্মান কি দিতে পেরেছে তার দেশবাসী নাকি বিভিন্ন দল-উপদলের হিসাব নিকাশের মতবাদের ভীরে হারিয়ে গেছে এই মহান আত্মত্যাগ। তিতুমীর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস হিসাবে কাজ করেছে। ১৯৭১ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কলেজকে তার নাম অনুসারে সরকারি তিতুমীর কলেজ নামকরণ করা হয়।

আরও পড়ুন: শহীদ তিতুমীরের জীবনাদর্শ অনুসরণের আহ্বান

এই বিপ্লবী, মুক্তিযোদ্ধা ১৭৮২ সালে জানুয়ারী মাসের ২৭ তারিখ উত্তর চব্বিশ পরগণায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিতুমীরের প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী। তার পিতা ছিলেন সৈয়দ মীর হাসান আলি ও মাতা আবিদা রুকাইয়া খাতুন।

হাতে তরোয়ার আর ছিল হালকা অস্ত্র। প্রাণে ছিল তাজা দেশপ্রেমের ঈমান।মাত্র ১৮ বছরে কোরআনের হেফজ সম্পন্ন করে হাদিসে অগাদ জ্ঞান অর্জন করেন। পান্ডিত্য লাভ করেন বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষায়।

হাজী তিতুমীর ১৮২২ সালে হজ পালন কালে স্বাধীনতার অন্যতম দ্বিগপাল সৈয়দ আহমেদ শহীদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে বাংলার দরিদ্র কৃষকদের সাথে নিয়ে জমিদার এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ধুতির বদলে তাহ্বান্দ পরিধান শুরু করেন প্রতিবাদের প্রতিক হিসাবে।

তিতুমীর জমিদার কর্তৃক বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত ‘দাঁড়ির খাজনা’ এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধিতা করেন। লড়াই এ বারবার পরাজিত করেন জমিদারদের। ফলে লড়াইটা তীব্রতর হতে থাকে। তিতুমীর আগেই পালোয়ান হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং পূর্বে জমিদারের লাঠিয়াল হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

তিনি তাঁর বিপ্লবীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলেন। ৫০০০ হাজার কৃষকের এক বিশাল বাহিনী ও বারসাতের কাছে নারিকেলবাড়িয়ায় চেতনার বাতিঘর বাঁশের কেল্লা গড়ে তোলেন ১৮৩১ সালের ২৩ অক্টোবর। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট কেল্লা ছিল এটি।

১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের আক্রমণ করে। সাধারণ তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার সৈন্যরা ব্রিটিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। চল্লিশ জন বিল্পবীর শহীদ হন দেশ রক্ষার যুদ্ধে।

৪৯ বছর বয়সে ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর বাঁশের কেল্লায় শহীদ হন তিতুমীর। তিনি সর্বপ্রথম ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তিতুমীর বাহিনীর প্রধান গোলাম মাসুমকে ফাঁসি দেওয়া হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বাশেঁরকেল্লা।


সর্বশেষ সংবাদ