বিসিএসের জন্য ছেড়েছেন ৩ চাকরি, ভাইভা দেননি বাংলাদেশ ব্যাংকেও, কিন্তু সেই বিসিএসের গেজেটেই বাদ সবুজ

সবুজ সূত্রধর
সবুজ সূত্রধর  © সংগৃহীত

সবুজ সূত্রধর। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন ৪৩তম বিসিএসের পশুসম্পদ ক্যাডারে।  তবে প্রথম গেজেটে নাম থাকলেও বাদ পড়েছেন বিসিএসের দ্বিতীয় গেজেট থেকে। বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় যোগদান করেননি তিনটি সরকারি চাকরিতে, এমনকি ভাইভা দেননি বাংলাদেশ ব্যাংকেও।

সবুজ সূত্রধরের বাড়ি সিলেট জেলার খাড়ুকোনা গ্রামে। বাবা রসময় সূত্রধর ২০ বছর প্রবাসে ছিলেন। তবে করোনার সময় দেশে এসে ভিসা জটিলতায় আর ফিরে যেতে পারেননি। বর্তমানে কৃষি কাজ করেন সবুজের বাবা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবুজ দ্বিতীয় সন্তান। পরিবারের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তিনি।

সবুজ বলেন, ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৪৩তম বিসিএসে পশুসম্পদ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত ৪৩তম বিসিএসের  গেজেট তালিকায় আমার নাম থাকলেও গত ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত দ্বিতীয় গেজেটে কোন এক অজানা কারণে আমি বাদ পড়ি।

তিনি জানান, ২০১৮ সাল ভিত্তিক কম্বাইন্ড ব্যাংকের পরীক্ষায় রূপালী ব্যাংকের অফিসার জেনারেল (১০ম গ্রেড) হিসাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হই যেটার যোগদানের তারিখ ছিল ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি। কিন্তু ২০২৩ সালে ২৬ ডিসেম্বর ৪৩তম বিসিএসে পশুসম্পদ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় সেখানে যোগদান করিনি। তারপর ২০২০ সাল ভিত্তিক সমন্বিত ব্যাংক পরীক্ষায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার (৯ম গ্রেড) হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হই সেখানেও একই কারণে যোগদান করা হয়নি। এছাড়াও আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার জেনারেল (১০ম গ্রেড) পদে ভাইভার জন্য মনোনীত হলেও সেটাতে অংশগ্রহণ করিনি। 

অন্যের কথা চিন্তা করে এই চাকরিগুলোতে যোগদান করেননি জানিয়ে সবুজ বলেন, ‘আমি জানতাম আমি এই চাকরিগুলোতে জয়েন না করলে প্যানেলের মাধ্যমে অন্য কেউ জয়েন করতে পারবেন। অন্যের রিজিকের চিন্তা করতে গিয়ে আজকে আমার নিজের রিজিক অনিশ্চিত।’ 

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা-মা কোন রকম ভাবে স্বাক্ষর দিতে পারেন। সেই পরিবার থেকে আমি প্রথম শ্রেণির চাকরি পেয়েছিলাম। একটা সময় আমি ছিলাম আমার গ্রামের ছেলেমেয়েদের অনুপ্রেরণা। আর আজকাল আমার গ্রামে যেতে ভয় হয় কখন জানি মানুষের কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হই। আজকাল নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়, আফসোস হয় সত্যি কি বাবা-মায়ের জন্য কিছু করতে পারবো !’

সবুজ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যে বৈষম্যের জন্য আমাদের ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে, সেই দেশে কেন আমি বৈষম্যের শিকার হয়ে আড়ালে অগোচরে চোখের পানি ফেলছি? একটা বিসিএসের লিখিত পাস করতে কত নির্ঘুম রাত্রি যাপন করতে হয় তা শুধু পরীক্ষার্থীরাই জানেন। যখন আমি চাকরিতে পোস্টিং কোথায় হবে ভাবছিলাম, তখন জানলাম গেজেটভুক্তই হইনি। এখন আমার সহকর্মীরা চাকরিতে নিয়োজিত আর আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরছি গেজেটের জন্য। বছরের পর বছর অমানবিক পরিশ্রম করার পর আজকে কেন আমি রাস্তায়?’

তিনি আরও বলেন, ‘এসএসসি এবং এইচএসসি দুই পরীক্ষাতেই জিপিএ-৫ পেয়েছি। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিভিএম-এ সিজিপিএ- ৩.৬৬ এবং মাস্টার্সে সিজিপিএ ৩.৯৫ পাই। ভার্সিটির কোনো পরীক্ষায় কখনো অকৃতকার্য হইনি, ক্লাসেও নিয়মিত ছিলাম। এছাড়া ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে নাম আসে আমার। ৪৪ তম বিসিএসে ভাইভা দিব। ভার্সিটিতে পড়াকালীন আমার কোনো ধরনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল না। এমনকি আমি কখনো হলে ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহী মামলাও নেই, তবুও বাদ পড়লাম।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence