চাকরির ইন্টারভিউতে সাফল্য পেতে যেসব ভুল এড়িয়ে চলবেন

চাকরির ইন্টারভিউ যেন ভালো হয়, চাকরিটা নিশ্চিত হয়, তার জন্য বেশ কিছু বিষয় অবশ্যই জানতে হবে
চাকরির ইন্টারভিউ যেন ভালো হয়, চাকরিটা নিশ্চিত হয়, তার জন্য বেশ কিছু বিষয় অবশ্যই জানতে হবে  © প্রতীকী ছবি

সময় বদলেছে, বদলেছে চাকরির বাজারও। এখনকার প্রতিযোগিতা যেন এক যুদ্ধের মতো। প্রতিদিন হাজারো তরুণ–তরুণী দৌড়াচ্ছে একটি ভালো চাকরির জন্য। যেন সোনার হরিণের খোঁজে ছুটছেন তারা। আবেদন, লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ—সব মিলিয়ে পথটা মোটেও সহজ নয়। ধাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইন্টারভিউ। এখানেই হয় চূড়ান্ত বাছাই। তাই এই ধাপটি সামান্য ভুলে নষ্ট হয়ে যাওয়া মানে, হাতছাড়া হয়ে যাওয়া কাঙ্ক্ষিত সুযোগ।

আপনার চাকরির ইন্টারভিউ যেন ভালো হয়, চাকরিটা নিশ্চিত হয়, তার জন্য বেশ কিছু বিষয় অবশ্যই জানতে হবে। চলুন জেনে নিই ইন্টারভিউ বোর্ডে আমরা যেসব সাধারণ ভুল করি এবং সেগুলো এড়ানোর উপায়।

১. পেশাদার পোশাকের অভাব

ইন্টারভিউর ক্ষেত্রে পোশাকই প্রথম বার্তা দেয় আপনার সম্পর্কে। অনেকেই এ ব্যাপারে উদাসীন থাকেন, যা বড় ভুল। স্মার্ট, পরিপাটি, ইস্ত্রি করা পোশাক পরুন। রঙে হালকা, স্টাইলে মার্জিত রাখুন। মনে রাখবেন ‘আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী।’

২. দেরিতে পৌঁছানো

দেরি করে উপস্থিত হওয়া মানেই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ছাপ। ইন্টারভিউর দিনে অন্তত আধঘণ্টা আগে উপস্থিত থাকুন। কোনো অনিবার্য কারণে দেরি হলে তা আগে থেকে জানিয়ে দিন। এটাই পেশাদার মনোভাব।

৩. বোর্ডে পানির বোতল নিয়ে যাওয়া

ইন্টারভিউ কক্ষে পানির বোতল বা চুইংগাম নিয়ে প্রবেশ অশোভন। প্রয়োজন হলে বাইরে পানি পান করে নিন। ভেতরে যাওয়ার পর মনোযোগ রাখুন শুধু কথোপকথনে।

৪. নিজের রেজিউম না জানা

নিজের জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে ধারণা না থাকা সবচেয়ে বিব্রতকর ভুলগুলোর একটি। রেজিউমের প্রতিটি তথ্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। মিথ্যা তথ্য কখনোই দেবেন না। মিথ্যা তথ্য বোর্ডে সহজেই ধরা পড়ে যায়।

৫. প্রতিষ্ঠান ও পদ সম্পর্কে ধারণা না থাকা

যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য গেছেন, অন্তত সেটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা জরুরি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রতিষ্ঠান–সংক্রান্ত খবর বা ওয়েবসাইট থেকে আগে পড়ে নিন। এতে আপনার আগ্রহ ও পেশাদারিত্ব ফুটে ওঠে।

৬. ফোন ব্যবহার

ইন্টারভিউ চলাকালে ফোন বাজা বা দেখা একেবারেই অনুচিত। ফোনটি আগে থেকেই বন্ধ বা সাইলেন্ট রাখুন। ‘ভাইব্রেশন’ মোডও নয়, কারণ তার শব্দও বিরক্তিকর হতে পারে।

৭. অতিরিক্ত কথা বলা

অতিরিক্ত কথা বললে অপ্রয়োজনীয় কিছু বলে ফেলার ঝুঁকি থাকে। প্রশ্ন শুনে সংক্ষেপে, পরিষ্কারভাবে উত্তর দিন। আত্মবিশ্বাসী হন, কিন্তু বাগাড়ম্বর নয়।

৮. আগের কর্মস্থল নিয়ে খারাপ বলা

আগের প্রতিষ্ঠান বা বস সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করা মারাত্মক ভুল। এতে আপনার মানসিকতার নেতিবাচক দিক প্রকাশ পায়। পেশাদারদের মতো সংযমী থাকুন।

 ৯. মনোযোগ হারানো বা রেগে যাওয়া

দীর্ঘ ইন্টারভিউয়ে ধৈর্য হারানো বা বিরক্ত হওয়া অনুচিত। কখনো কখনো নিয়োগকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে আপনাকে রাগিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া পরখ করতে পারেন। আপনাকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করতে পারেন। সেখানে ঠান্ডা মাথায় উত্তর দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

১০. বাচনভঙ্গি ও অঙ্গভঙ্গিতে অরুচি

আপনার কথা বলার ভঙ্গি, হাতের ব্যবহার, চোখের দৃষ্টি সব কিছুই ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। নাক খোঁচানো, পা নাড়ানো, বারবার থুতু ফেলা এসব মুদ্রাদোষ থেকে দূরে থাকুন।

১১. অহেতুক তর্ক

নিজেকে প্রমাণ করতে গিয়ে তর্কে জড়ানো বিপজ্জনক। মতের অমিল হলে শান্তভাবে নিজের অবস্থান জানান, কিন্তু বিতর্কে যাবেন না।

১২. প্রশ্ন করতে না জানা

ইন্টারভিউ শেষে প্রার্থীকে সাধারণত জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনার কোনো প্রশ্ন আছে?’ এটি সুযোগ নিজের আগ্রহ প্রকাশের। প্রতিষ্ঠানের কাজ, দায়িত্ব বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করুন। বেতন বা ছুটি নিয়ে প্রশ্ন নয়।

চাকরির ইন্টারভিউ শুধু উত্তর দেওয়ার জায়গা নয়। এটি নিজেকে উপস্থাপনের শিল্প। আত্মবিশ্বাস, সৌজন্য ও প্রস্তুতি—এই তিন গুণই আপনাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করবে। একটু সচেতনতা, কিছুটা প্রস্তুতি হয়তো বদলে দিতে পারে আপনার পেশাজীবনের গল্প।


সর্বশেষ সংবাদ