১৬ দিন ধরে হদিস মিলছে না সাত শিক্ষার্থীর

কুমিল্লার নিখোঁজ ৭ শিক্ষার্থী
কুমিল্লার নিখোঁজ ৭ শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ৭ শিক্ষার্থী গত ২৩ আগস্ট থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী।  এ ব্যাপারে নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের পরিবার থানায় জিডি করেছেন। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব-পুলিশ। 

নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের  অনার্স তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম আলামিন (২৩), অনার্স প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯), এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইমরান বিন রহমান (১৭) ও সামি (১৮), কুমিল্লা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম (১৮) ও নিহাল আবদুল্লাহ (১৭) এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স শেষ করা সরতাজ ইসলাম নিলয় (২৩)।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা সবাই পূর্বপরিচিত। বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় তারা খুব বেশী টাকা-পয়সা, সেলফোন কিংবা পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে যায়নি। নিখোঁজ সবাই খুবই ধার্মিক। পড়াশোনার বাইরে অন্য বিষয়ের প্রতি তাদের তেমন আগ্রহ ছিল না। কারও সাথে তাদের কোনো শত্রুতাও নেই।

আরও পড়ুন: লেখাপড়ার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় চায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ

এ ব্যাপারে কুমিল্লা র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, 'গত ২ সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ ৭ শিক্ষার্থীর বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। তবে তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।'

কুমিল্লা শহরের ঝাউতলা বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, তার ছেলে আমিনুল ইসলাম ২৩ আগস্ট কান্দিরপাড়ে যাওয়ার কথা বলে আর বাসায় ফেরেনি। এ বিষয়ে র‍্যাব-পুলিশকে জানানো হয়েছে। তবে এখনো ছেলের খোঁজ মেলেনি।

কুমিল্লা শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান জানান, তার ছেলে ইমরান বিন রহমানের তাবলীগের প্রতি কিছুটা ঝোঁক রয়েছে। তবে পড়াশোনা, কলেজ, কোচিং সেন্টার আর মসজিদ ছাড়া সে কোথায় যায় না। তবে অনলাইন ক্লাসের নাম করে মোবাইলে রাত জেগে বিভিন্ন ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল ও আলোচনা শুনতো।

'কয়েক মাস আগে ইমরানের কাছ থেকে সেলফোনটি নিয়ে নেই। এরপরও সে স্কুল শিক্ষক মায়ের কাছ থেকে সময়ে সময়ে মোবাইল নিয়ে অনলাইন ক্লাস করতো, আর ফাঁকে ফাঁকে ধর্মীয় আলোচনা শুনতো। গত ২৩ আগস্ট দুপুরে আমাকে সে বলে, আমি আজ কোচিং থেকে রেলস্টেশন মসজিদে তাবলীগের বয়ান শুনতে যাব। ফিরতে দেরি হবে, আম্মুকে বলো না। ওইদিন রাত ৮টা পর্যন্ত বাসায় না ফেরায় সারারাত খোঁজ করে না পেয়ে পরদিন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি করি। পরে র‌্যাবকে অবহিত করি', বলেন তিনি।

অন্যদের অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন।

নিখোঁজ ৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে নিলয় ও নিহাল সম্পর্কে খালাতো ভাই। অভিভাবকরা ধারনা করছেন নিলয়ের নেতৃত্বে বাকি ৬ জন বাড়ি ছেড়েছেন চলে গেছেন।

নিহালের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ২৪ আগস্ট ভোরে চাঁদপুর শহরের রেলস্টেশন সংলগ্ন চাঁদপুর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে হোটেল ম্যানেজার তাকে ফোন করে জানান, নেহালসহ তার বন্ধুদের সেই হোটেলে দিয়ে গেছে পুলিশ।

'হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাকে ফোন করে বলে যে, আপনার ছেলেকে নিয়ে যান। তখন আমি আমার ভায়রার ছেলে নিলয়ের সঙ্গে কথা বললে সে জানায়, আপনাদের আসতে হবে না। আমরা এখুনি চলে আসতেছি। কিন্তু তারপর আর খবর নেই। এই নিয়ে আজ ১৫ দিন হলো ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না', জানান তিনি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সফিকুল ইসলাম জানান, '২৩ আগস্ট রাত পৌনে ২টার দিকে থানার এসআই খায়রুল ইসলাম ৫ জন ছেলেকে এনে বললেন, তারা বাড়ি থেকে অভিমান করে চলে এসেছে। তাদের অভিভাবকদের ফোন দিয়ে জানিয়ে দেন, যাতে সকালে তারা এসে নিয়ে যায়। পরদিন সকাল ৬টায় আমার শিফট শেষ হলে আমি দিনের শিফটের ম্যানেজার হেদায়েত উল্লাহর কাছে তাদের বুঝিয়ে দিয়ে যাই। পরে শুনেছি, আমি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর নাকি তারা হেদায়েত উল্লাহকে বলেছে, আমাদের অভিভাবক এসেছে আমরা চলে যাই। হেদায়েত উল্লাহ মনে করেছেন সত্যি সত্যি তাদের অভিভাবক এসেছে। এজন্য তিনি তাদের চলে যেতে বলেছেন।'

চাঁদপুর নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক খায়রুল ইসলাম বলেন, 'সেদিন রাতে আমাদের ফাঁড়ির ইনচার্জ মিন্টু দত্ত স্যারসহ আমরা একটা অভিযানে যাচ্ছিলাম। তখন দেখি চাঁদপুর কালীবাড়ির সামনে এই ছেলেগুলো ব্যাগ নিয়ে বসে আছে। তখন স্যার তাদের কাছে জানতে চাইলে কেউ বলে, বাসা কুমিল্লায় আবার কেউ বলে বাসা ঢাকায়, বন্ধুর বাসায় বেড়াতে এসেছিলাম, এখন গাড়ি নেই তাই বসে আছি। তখন ইনচার্জ স্যার আমাকে বললেন, তাদের ওই হোটেলে দিয়ে আসেন, সকালে অভিভাবকদের ফোন করে যাতে ছেড়ে দেয়।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) তানভীর আহমেদ জানান, 'গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক তদন্ত চলছে, এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।'


সর্বশেষ সংবাদ