বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা দিয়েই বাবার দাফন সারলেন মেয়ে

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুরা
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুরা   © প্রতীকী ছবি

বীথি আক্তার, উচ্চ মাধ্যমিকে ফল ভালো হওয়ায় স্বপ্ন দেখছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। সেই স্বপ্নের শেষ প্রান্তেও ছিলেন তিনি। দুপুরে বাবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ১২ হাজার ৮০০ টাকা নিয়ে বের হয়ে যান তিনি। 

বীথি উত্তরা ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অধিকাংশ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। এখন শুধু টাকা জমা দেবেন, তখনই বাসা থেকে একটি কল আসলো। মুঠোফোনে বীথি জানতে পারলেন, তার বাবা বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছেন। বীথি ছুটে গেলেন হাসপাতালে, অধরাই রয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন।  

ঘটনার দিন রাতে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বীথির বাবা গাজী মাজহারুল ইসলাম। বাবার দাফনে ব্যয় হয়ে যায় বীথির লালিত স্বপ্ন। অধরাই থেকেই যায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন। বাবা জীবিত না থাকায় তার স্বপ্নেরও অকাল মৃত্যু হয়েছে।  

বীথির বাবা গাজী মাজহারুল ইসলাম রাজধানীর উত্তরার রাজাবাড়ি এলাকায় ভাঙারি দোকানে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এর আগে, শনিবার দুপুরে ওই বিস্ফোরণে মাজহারুলসহ মোট আটজন দগ্ধ হন। এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মো. শরিফুল ইসলাম (৩২) মারা যান। মাজহারুল ছিলেন ওই দোকান ও গ্যারেজের মালিক।

আরও পড়ুন : ঢাবি-রাবি কখনই ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ ‘প্রাচ্যের কেমব্রিজ’ ছিল না

মাজহারুলের স্ত্রী রোকসানা আক্তার বলেন, ‘তাদের তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে তামান্না আক্তার ও যূথী আক্তারের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ে বীথি আক্তার এবার উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। ভালো ফল করায় বাবার ইচ্ছে ছিল বীথিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। বীথিরও অনেক ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার স্বপ্নটাও শেষ হয়ে গেল।’

এ সময় কথা বলতে বলতে রোকসানা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়েন। বীথি বলেন, ‘ভর্তির জন্য টাকা জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বাবার দুর্ঘটনার খবর শুনি। তাই টাকা জমা না দিয়েই ফিরে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে, টাকা জমা না দিয়ে ভালো হয়েছে। সেই টাকায় বাবার দাফন হয়েছে। এখন বাবা নেই, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নও আর দেখি না। কারণ, বাবার উপার্জনের টাকাতেই সংসার চলত।’

গ্যারেজ মালিক মাজহারুল ইসলাম ৩০ বছর ধরে রিকশার গ্যারেজ চালাতেন। করোনার সময়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এজন্য মাস ছয়েক আগে রিকশার গ্যারেজের পাশেই ভাঙারির দোকান দেন তিনি। সেই দোকানে কাজ করাকালীন হঠাৎ করেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন : ভাস্কর্যে ভাস্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বের করে বোতল খালি করার সময় এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে জানা গেছে। তবে ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। এ ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।’

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মোর্শেদ আলম বলেন, ‘গ্যারেজ ও ভাঙারির দোকানের মালিক নিজেই ভুক্তভোগী হয়েছেন। গ্যারেজে দাহ্য উপাদান কীভাবে গেছে, সেটি এখন অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সেখানে ঘটনা কেন ঘটেছে, কীভাবে ঘটেছে, কারা দায়ী—এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence