কানাডায় দেশের ৩৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিভ্রান্তি, যা বললো ইউজিসি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০২:১০ PM , আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:৪৮ PM
সম্প্রতি 'দেশের ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় কানাডায় আবেদনের যোগ্যতা হারিয়েছে' এমন একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু ওই সংবাদে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি এবং থাকার খরচ যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের তুলনায় কম হওয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য অনেকের অন্যতম পছন্দের দেশ কানাডা। আর সেই কানাডায় আবেদনের যোগ্যতা হারানোর মতো বিভ্রান্তিকর হেডলাইন ও তথ্য প্রচারের পর হতাশ হয়ে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী।
মূলত, কানাডায় স্কিল্ড ইমিগ্রেশনের জন্য বাংলাদেশীদের অর্জিত ডিগ্রির এডুকেশন ক্রেডেনশিয়াল এসেসমেন্ট (ইসিএ) বা "ডিগ্রির একাডেমিক মূল্যায়ন" করতে হয়। এই মূল্যায়ন করার জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডেনশিয়াল ইভালুয়েশন সার্ভিস (আইসিইএস) একটি। যা ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইন্সটিটিউট ওফ টেকনোলজি (বিসিআইটি) নামক কানাডিয়ান একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক মূল্যায়ন সার্ভিস। বিসিআইটি খুবই ছোট পরিসরের ডিপ্লোমা কোর্সভিত্তিক কলেজ লেভেলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাই তাদের ইসিএ ব্যাপ্তি স্বাভাবিকভাবেই সীমিত হয়ে থাকে।
আইসিইএস'র ওই তালিকায় বাংলাদেশের বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করেছে, যেখানকার শিক্ষার্থীরা কানাডায় উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন করতে অপারগ বলা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের ৩৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। যেগুলো হলো: দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়, কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়, আইবিএআইএস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, পুন্ড্রু ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিটি ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, সেন্ট্রাল ওমেন্স ইউনিভার্সিটি এবং গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
আইসিইএস ছাড়াও কানাডার বহুল পরিচিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে বাংলদেশী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত ডিগ্রি মূল্যায়ন করতে পারেন। সেগুলো হলো, ওয়ার্ল্ড এডুকেশন সার্ভিস (ডাব্লিউইএস), ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোর কম্পেরেটিভ এডুকেশন সার্ভিস (সিইএস), আইকিউএএস ইত্যাদি।
আসলে স্টুডেন্ট ভিসা ও স্কলারশিপের সাথে বিসিআইটি'র আইসিইএস কর্তৃক প্রকাশিত এই বাংলাদেশী প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির তালিকার কোনো সম্পর্ক নাই। একজন শিক্ষার্থী কানাডায় পিআর এপ্লিকেশনের সময় আইসিইএস বাদে অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের অর্জিত ডিগ্রির ইকুইভ্যালেন্স করিয়ে নিতে পারেন।
এদিকে ওই তালিকায় 'কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়' এর নাম উল্লেখ থাকায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেও তৈরি হয়েছে বিভ্রান্ত ও ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। তালিকায় উল্লেখিত নামটি মূলত ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত 'ইউনিভার্সিটি অফ কুমিল্লা' যা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক দিল আফরোজ বেগম বলেন, 'প্রকাশিত তালিকাটি কানাডা সরকার অনুমোদিত কিছু নয়। তাই চিন্তার কারণ নেই। আর এছাড়াও তালিকায় ঢাকার উত্তরার ইউনিভার্সিটি অফ কুমিল্লার নাম রয়েছে, যেটি ইউজিসির কালো তালিকাভুক্ত একটি বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এ বিষয়ে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।'
তবে নামের মিল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ওসমান ফারুক বলেন, 'ইউজিসি থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম 'University of Comilla'। আবার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এটা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে মিল থাকা উচিত নয়।'