সরকারের ই-পারিবারিক আদালত তৈরিতে ড্যাফোডিলের ছয় শিক্ষার্থী

সরকারের ই-পারিবারিক আদালত তৈরিতে ড্যাফোডিলের ছয় শিক্ষার্থী
সরকারের ই-পারিবারিক আদালত তৈরিতে ড্যাফোডিলের ছয় শিক্ষার্থী  © টিডিসি ফটো

বিচার বিভাগের নানান সংস্কারের অংশ হিসেবে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ই-পারিবারিক আদালত চালু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ই-পারিবারিক আদালত গঠনের কাজ করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সিএসই বিভাগের ছয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। সরকারের জন্য তা বিনামূল্যে সম্পন্ন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে এ সেবা উদ্বোধন করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ৩০ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রামের একটি ই-পারিবারিক আদালত যাত্রা শুরু করবে।

সফ্‌টওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ করা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কম্পিউটার এবং সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছয় শিক্ষার্থী হলেন-মোহাম্মদ মেজবাউল ইসলাম জায়ন (সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান সিএসই বিভাগের প্রভাষক), জহির রায়হান, শাফিন আহমেদ, মোহাম্মদ ইমন, জুবায়ের আমিন এবং সাদাত আলম প্রতীক।

সরকার ও ড্যাফোডিলের সহযোগিতায় কোর্ট অটোমেশন সিস্টেমের অংশ হিসেবে ছয় মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন ও বিচার বিভাগের অন্তর্গত এই কাজ সম্পন্ন হয়। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ছিলেন সিএসই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ রাশেদ হায়দার নুরি। এছাড়া ছিলেন প্রকল্প কো-অর্ডিনেটর আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. রিয়াদুজ্জামান, কনসালট্যান্ট ও সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে মো. জুলফিকার আলী, ফাইনান্সিয়াল ও অ্যাডমিন কো-অর্ডিনেটর হিসেবে সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ খায়রুল সাগীর, প্রকল্প ম্যানেজার সিএসই বিভাগের শিক্ষক মো. হাসানুজ্জামান দিপু, টিম লিড (এমএল ও এআই) ও ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে সিএসই বিভাগের শিক্ষক মো. জাহিদুল আলম।

ই-পারিবারিক আদালত চালুর ফলে সন্তান অধিকার, ভরণপোষণ, মোহরানা, বিবাহবিচ্ছেদসহ পারিবারিক বিরোধসংক্রান্ত মামলা এখন অনলাইনেই দায়ের থেকে শুরু করে আইনজীবী নির্বাচন, কোর্ট ফি প্রদান, হাজিরা দেওয়া, বিভিন্ন দরখাস্ত দাখিল, সাক্ষ্য গ্রহণ ও নথি ব্যবস্থাপনাসহ একটি মামলার প্রায় সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে।

হাজিরা দেওয়ার জন্য কোর্টে যেতে হবে না, প্রতিটি তারিখ মামলার সংশ্লিষ্ট সবাইকে এসএমএস ও ই-মেইলে জানানো হবে। আদালতের রেজিস্ট্রার, নথি বিভাজনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াও হবে কম্পিউটারের ক্লিকের মাধ্যমে ই সম্ভব হবে ই- পারিবারিক আদালতের কারণে।  এই ই-পারিবারিক আদালত মূলত বিবাহবিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, মোহরানা, ভরণপোষণ এবং সন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত–সংক্রান্ত মামলা পরিচালনা করবে।

আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব ড. উম্মে সরাবন তহুরা বলেন, “আইন উপদেষ্টা এই কাজের জন্য সময় বেঁধে দেন ছয় মাস। আইন ও বিচার বিভাগের একটি ছোট দল ছয় মাস ধরে নিরলসভাবে এই সফ্‌টওয়্যার উন্নয়ন ও পরীক্ষা–নিরীক্ষার কাজে যুক্ত হন। সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে কাজটি ছিল ‘প্রায় অসম্ভব’। কারও খাওয়া–ঘুম নেই তো, কেউ শারীরিক অসুস্থতাকে উপেক্ষা করেছেন, কেউবা সারা দিন আদালতে থেকে রাত ১২টা–১টা পর্যন্ত বসে কম্পিউটারে সফ্‌টওয়্যার পরীক্ষা করেছেন। এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে আমাদের দলের প্রত্যেককেই প্রায় সব সাপ্তাহিক ছুটির দিন কাজ করতে হয়েছে। বারবার ডিজাইন পরিবর্তন, ফ্লো চার্ট তৈরি, সিস্টেম টেস্টিং, সব মিলিয়ে এটি ছিল এক বিশাল ‘ডিজিটাল যজ্ঞ’। এই ‘ডিজিটাল যজ্ঞে’ অন্যতম প্রধান ভূমিকা রেখেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ। তারা সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় সফ্‌টওয়্যার উন্নয়নে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। রাত নেই, দিন নেই যখন যেভাবে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি, তারা নিরলস পরিশ্রম করে গেছে।”

ই-পারিবারিক আদালত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “জনগণের সেবার জন্য এই ই-পারিবারিক আদালতের উদ্যোগ। আজকের এই উদ্যোগ টিকিয়ে রাখতে পারলে তা বিপ্লব হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কাগজবিহীন একটি বিচারব্যবস্থার দিকে আমরা এগোলাম; যে নারী ও শিশুরা নির্যাতনের শিকার তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আসছে। আমাদের সরকার আর দুই–আড়াই মাস আছে, এর মধ্যে এটি ভালো দৃষ্টান্ত রেখে যাবে।”

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ও ই-পারিবারিক আদালত প্রকল্পের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ রাশেদ হায়দার নুরি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, “জাতীয় পর্যায়ে এমন একটি অবদান করার অনুভূতি আসলে অনেক ভালো অনুভূতি। যদি আমি বলি অবশ্যই এটা একটি গর্বের বিষয়। এবং এই ধরনের একটা কাজ সম্পন্ন করতে পারাটাও একটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, অনেক চ্যালেঞ্জিং, এবং সেটা যে আমরা করতে পারছি, সো ডেফিনেটলি, দ্যাটস হোয়াই আমরা আসলে সবাই খুবই এক্সাইটেড।

ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে কাজের পরিধি অনেক বড়। এটার মধ্যে বিভিন্ন লেভেলের মানুষ যুক্ত। শিক্ষার্থীদের সাথে আমার মতো ফ্যাকাল্টি, যারা কিনা পেশাদার। যেমন আমি যদি বলি, আমি নিজেও আসলে আমার ক্যারিয়ার শুরু করেছি সফ্‌টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট দিয়েই, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে, এবং আমি লম্বা সময় ইন্ডাস্ট্রিতে সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেছি। এবং আমার সাথে এখানে আরও যারা টিমে ছিলেন ফ্যাকাল্টি মেম্বার, তারা আসলে ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলেন একটা লম্বা সময়। এর সাথে আমাদের সাথে ছিল ড্যাফোডিল সফটওয়্যার, যারা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করে প্রফেশনালি। আর যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও তারা ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত। তারা রিমোট জব করেন দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন কোম্পানিতে। সুতরাং একটি প্রফেশনাল টিম এখানে ইনভলভ ছিল।”

সফ্‌টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টিমের একজন সদস্য ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী জহির রায়হান বলেন, “যখন এমন সরকারি একটি কাজ আসে, তখন ভাবতে পারিনি যে সরকারের জাতীয় একটি কাজে আমার অবদান থাকবে। আমার খুবই গর্ববোধ হয়। আমি দেশের জন্য কিছু করতে পারছি। দেশের জন্য কিছু করা সবসময়ই গর্বের।”


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence