ইউএপি’র ১১তম সমাবর্তন ২৬ জুলাই, স্বপ্নের মঞ্চে দাঁড়াচ্ছে ১,৯৭৫ গ্র্যাজুয়েট

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)-এর ১১তম সমাবর্তন
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)-এর ১১তম সমাবর্তন  © টিডিসি সম্পাদিত

জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত থাকে, যেখানে সময় যেন থমকে দাঁড়ায়। গর্বের মঞ্চে একে অপরের হাতে হাত ধরে দাঁড়ায় ত্যাগ-অধ্যবসায় আর স্বপ্ন। জুলাইয়ের প্রখর রোদে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক'র গ্র্যাজুয়েটজীবনে ভেসে আসছে তেমনই এক দিনপঞ্জি। তারিখ ২৬ জুলাই, শনিবার। এদিন রাজধানীর সেনাপ্রাঙ্গণ রঙিন হয়ে উঠবে উৎসবের আলোকচ্ছটায়, উদযাপিত হবে ইউএপি’র ১১তম সমাবর্তন। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের সমাবর্তনে ১ হাজার ৯৭৫ গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তারা বলছেন, দিনটি কেবল শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি নয়; বরং এটি নতুন জীবনের সূচনা। নতুন অধ্যায়ের শুরুপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের পথে যাত্রা শুরু করার দিন। দীর্ঘ ১৬ কিংবা তারও বেশি বছর পেরিয়ে, ঘুমহীন রাত কাটিয়ে, হাজারো সংগ্রাম শেষে এই সমাবর্তনই যেন তাদের কষ্টার্জিত স্বপ্নেরই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হয়ে উঠবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের জানা গেছে, সকাল ৯টা থেকে শুরু হতে যাওয়া এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুধু শিক্ষার্থীদের গর্বই নয়, থাকছে শিক্ষক, অভিভাবক, নীতিনির্ধারক ও গুণীজনদের সমবেত সম্মান। সমাবর্তনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের পক্ষে গ্র্যাজুয়েটদের হাতে তুলে দেবেন তাদের বহু প্রতীক্ষিত সনদপত্র।

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ঠাঁই দাঁড়িয়ে ইউএপি ক্যাম্পাস

 

এছাড়াও সমাবর্তনে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ এক ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন; যা সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে বলেই বিশ্বাস সমাবর্তনের রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েটদের। এছাড়াও সমাবর্তন বক্তা হিসেবে কথা বলবেন আন্তর্জাতিক পরিসরে খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও ও প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমান; যার ভাষণে উঠে আসবে প্রযুক্তি, নেতৃত্ব ও প্রতিযোগিতার বিশ্বায়িত বাস্তবতায় এগিয়ে যাওয়ার দিশা।

এছাড়াও সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। কথা বলবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপার্সন স্থপতি মাহবুবা হক, উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন উপাচার্যের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া।

সমাবর্তন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং স্বপ্নপূরণের একটি দিন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে ১৯৯৬ সালে। সমাবর্তন হয়েছে মোট ১০টি। এর মধ্য দিয়েই আমাদের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ব দরবার এবং জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, উপাচার্য, ইউএপি 

চ্যান্সেলর ও ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন ১৮ জন
এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ একাডেমিক সম্মান হিসেবে পরিচিত চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল পাচ্ছেন ৩ মেধাবী শিক্ষার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন ব্যচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের গাজী শাহবাজ মোহাম্মদ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিদীতা সরকার দিবা এবং একই বিভাগের রিপা রাণী বিশ্বাস। এছাড়াও সমাবর্তনে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে ভাইস-চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল দেওয়া হচ্ছে। একাডেমিক উৎকর্ষের পাশাপাশি তারা গবেষণা, উদ্ভাবন, নেতৃত্ব ও সহ-পাঠক্রমিক কর্মকাণ্ডে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। 

ক্যাম্পাস সেজেছে সমাবর্তনের আবহে

 

১১তম সমাবর্তনে প্রস্তুত ইউএপি
সমাবর্তন উপলক্ষে বিশাল আকারের লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেছে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, যাতে অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, আগত অতিথিদের জন্য পরিবহন ও পার্কিং সুবিধা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য নির্ধারিত আসন ব্যবস্থা, প্যান্ডেল ও স্টেজ নির্মাণ, অডিও-ভিজ্যুয়াল সিস্টেম, লাইভ স্ট্রিমিং সুবিধা, মেডিকেল সহায়তা বুথ, খাবার ও পানীয় সরবরাহ, এবং ভিআইপি ও ভিভিআইপি আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম অনুষ্ঠান পরিচালনায় সহায়তা করবে। সমাবর্তনের জন্য বিশেষ স্মারক ও গাউন বিতরণ কার্যক্রম মঙ্গলবার (২১ জুলাই) থেকে শুরু করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের জন্য এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।

নির্মাণ শৈলীতে নান্দনিক ইউএপি

 

ইউএপি সমাবর্তনের ইতিহাস
বিশ্ববিদ্যালয়টির এ পর্যন্ত ১০টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ৪ মে, রাজধানীর বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে। দশম সমাবর্তনের এই দীর্ঘ যাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ১৭ হাজার ৩৮৪ জন শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের তথ্য, ২০০৫ সালের ১৬ মার্চ বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ইউএপি’র সমাবর্তন যাত্রা। দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় এর ঠিক দু’বছর পর; ২০০৭-এর ২৮ মে। এছাড়াও তৃতীয় সমাবর্তন ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর, চতুর্থ সমাবর্তন ২০১০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ৫ম সমাবর্তন ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর, ৬ষ্ঠ সমাবর্তন ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল, ৭ম সমাবর্তন ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, ৮ম সমাবর্তন ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ এবং ৯ম সমাবর্তন ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবর্তনে ইউএপি গ্র্যাজুয়েটদের উচ্ছ্বাস, ১০ম সমাবর্তন থেকে

 

উপাচার্যের কথা
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান জানান, ‘সমাবর্তন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং স্বপ্নপূরণের একটি দিন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে ১৯৯৬ সালে। সমাবর্তন হয়েছে মোট ১০টি। এর মধ্য দিয়েই আমাদের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ব দরবার এবং জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

এ সময় উপাচার্য ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ১১তম সমাবর্তনে সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, অতিথি, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। 


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!