ডিআইইউ ছাত্রনেতাদের ঈদ: দায়িত্ব, ত্যাগ ও আনন্দের মিলনমেলা

ডিআইইউ শিক্ষার্থী
ডিআইইউ শিক্ষার্থী  © টিডিসি

ঈদ মানেই খুশি, আর ঈদুল আজহা মানেই ত্যাগের অনুপম সৌন্দর্যে মোড়ানো সাম্যের উৎসব। এই ঈদ শুধু কোরবানির নয়—মানবিকতা, একতা, দায়িত্ববোধ এবং আত্মশুদ্ধিরও এক অনন্য বার্তা। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ছাত্রনেতারাও এই উৎসবে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও চিন্তা দিয়ে তুলে ধরেছেন ঈদের প্রকৃত মর্ম।

ঈদ মানেই দায়িত্বশীল আনন্দ

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংগঠক মুহতাসিম ফুয়াদ জানান, প্রতিবছরের মতো এবারে ঈদ পরিবারের সান্নিধ্যে নয়, বরং সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে ঢাকাতেই কেটেছে।

তিনি বলেন, “ঈদের ছুটিতে সবাই যখন গ্রামে ছুটেছে, আমি থেকেছি এই ফাঁকা ঢাকায়। বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের দিন কাটানো, কোরবানির আয়োজন করা, একে অপরের বাসায় যাওয়া—এসব মিলেই তৈরি হয়েছে ছোট একটি কমিউনিটির বড় ঈদ।”

তিনি আরও জানান, ঈদের পরপরই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গ্রামে যাবেন, তবে জুলাই মাসে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনিক কার্যক্রম থাকায় বেশি দিন থাকার সুযোগ নেই। তাঁর মতে, ঈদ মানে শুধু উৎসব নয়, বরং দায়িত্ব পালনের ও অভিজ্ঞতা অর্জনের অনন্য সময়।

ভয়ের ঊর্ধ্বে নির্ভার ঈদ

ডিআইইউ ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল হাসান চাঁদের কাছে এবারের ঈদ ছিল এক অনন্য মুক্তির অনুভূতি। তিনি বলেন, “গত কয়েক বছরের ঈদে পুলিশি হয়রানি, গ্রেপ্তারের আশঙ্কা ছিল মাথায়। কিন্তু এবারে আমরা স্বাধীনভাবে, নির্ভয়ে পরিবার নিয়ে ঈদ করতে পেরেছি। এটাই সবচেয়ে বড় শান্তি।”

তিনি আরও জানান, ঈদের দিন শহীদদের স্মরণে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের ভাবনা রয়েছে এবং আন্দোলনে আহত ভাইদের বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গেও ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

মানবিক আয়োজনের ঈদ

ডিআইইউ বৈছাআ’র আহ্বায়ক মো. রফিকুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, “ঈদুল আজহা মানেই কোরবানির মাধ্যমে আত্মত্যাগের প্রতীকী শিক্ষা।” তিনি নিজ গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করেছেন।

ঈদের দিন সকালেই জামাত, এরপর কোরবানি। পাশাপাশি, ঈদবস্ত্র বিতরণ, পথশিশুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি এবং কোরবানির মাংস বিতরণের মতো মানবিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “এই ঈদ যেন শুধু আনন্দের নয়, বরং শান্তি, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার বার্তা ছড়িয়ে দেয় সবার মাঝে।”

সহমর্মিতা আর গ্রামের সুবাসে ঈদ

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ডিআইউ প্রতিনিধি মো. শামীম মাতুব্বরের ঈদ কেটেছে মাদারীপুরের নিজ গ্রামে। তাঁর কাছে কুরবানির ঈদ মানেই আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পূর্ণতা পাওয়া এবং গরিব-অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানো।

তিনি বলেন, “ঈদের দিন শুরু হয় কবর জিয়ারত দিয়ে। এরপর পশুকে গোসল করানো, নামাজ শেষে কোরবানি, এবং তারপরই গরুর গোশত দ্রুত বিতরণ—এটাই আমাদের গ্রামের ঈদের রুটিন। এমন অনেক মানুষ আছেন যারা সারা বছর গরুর গোশত কিনে খেতে পারেন না, কিন্তু কোরবানির ঈদে সবার ঘরেই গোশত রান্না হয়।”

তিনি দেশবাসীকে আহ্বান জানান, যাতে কোরবানির শিক্ষাকে কেন্দ্র করে সমাজের দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো হয় এবং ঈদের আনন্দ সত্যিকার অর্থেই সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

ডিআইইউ-এর ছাত্রনেতারা শুধু নিজেদের ঈদ আনন্দেই সীমাবদ্ধ থাকেননি—তাঁরা মানবিক দায়িত্ব, সামাজিক সম্প্রীতি এবং আত্মত্যাগের চেতনায় ঈদ উদযাপন করেছেন। কারও কাছে ঈদ মানে ছিল দায়িত্ব পালন, কারও কাছে পরিবারভিত্তিক পুনর্মিলন, আবার কারও কাছে সমাজের অবহেলিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো।


সর্বশেষ সংবাদ