ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার মানচিত্রে এক উজ্জ্বল নাম

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি  © টিডিসি ফটো

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)—সবুজ ঘাসে মোড়ানো প্রাঙ্গণ, ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অগণিত গাছগাছালি আর নীরব প্রকৃতির কোলে দাঁড়িয়ে থাকা নান্দনিক এক ক্যাম্পাস। আধুনিক স্থাপত্যশৈলী ও টেকসই পরিকল্পনার ছোঁয়ায় ঢাকার উপকণ্ঠে সুবিশাল পরিসরে গড়ে ওঠা ক্যাম্পাসটি যেন শিক্ষালয়ের বাইরেও পরিবেশ, প্রযুক্তি ও জ্ঞানের এক অপূর্ব সম্মিলন।

প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘চিন্তা, সৃজন ও সম্ভাবনার উন্মুক্ত আঙিনা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি; যেখানে প্রতিটি ক্লাস, ল্যাব-লাইব্রেরিতে আর করিডোরে চলে নিঃশব্দ জ্ঞানের গল্প। প্রকৃতির সৌন্দর্য আর প্রযুক্তির পরিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা এই ক্যাম্পাসকে করে তুলেছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য আদর্শ এক ইনস্টিটিউটে। এখানে যেমন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা পাঠ্যক্রম রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈচিত্র্যময় সহশিক্ষা ও গবেষণার অবারিত সুযোগ। যা শিক্ষার্থীদের শুধু চাকরি নয়, জ্ঞাননির্ভর ভবিষ্যতের জন্যও প্রস্তুত করছে সমানতালে।’

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেল—অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠ, ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক হোস্টেল, শিক্ষকদের স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট (আবাসন), গলফ কোর্স, নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট টার্মিনাল, টেনিস ফিল্ড, বাস্কেটবল কোর্ট, গ্রিন গার্ডেন, ফুড কোর্ট, রেস্টুরেন্ট, জিমনেসিয়াম, উদ্যান, সুপারশপ, সুইমিং পুল, মসজিদ এবং অডিটোরিয়ামে সাজানো প্রতিষ্ঠানটির নান্দনিক রূপ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই)-এর গত মাসে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিং ২০২৫’-এ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা বুয়েটের সঙ্গে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। শুধু র‍্যাংকিং নয়, দেশের প্রথম সারিতে উঠে আসা এই শিক্ষাঙ্গণটি প্রমাণ করেছে—মানসম্মত শিক্ষা, উৎকর্ষ  গবেষণা, আন্তর্জাতিকীকরণ ও টেকসই উন্নয়নের দিক থেকে সত্যিই অনন্য। প্রতিষ্ঠান কর্তাদের বক্তব্য, ড্যাফোডিলে শিক্ষার অর্থ শুধু সনদ অর্জন নয়; বরং নিজের ভেতরের সম্ভাবনাকে খুঁজে পাওয়া, নতুন কিছু ভাবা এবং গড়াই এর মূল উদ্দেশ্য।

প্রতিষ্ঠা ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, সমাজসেবার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার মধ্য দিয়ে জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি। প্রথম অস্থায়ী ক্যাম্পাসটি রাজধানীর ধানমন্ডিতে যাত্রা করলেও দুই যুগের কম সময়ের ব্যবধানে এটি এখন সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় ‘ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটি’র ৩০ একর জমির উপর দাঁড়িয়ে; আয়তনের দিক থেকে যা দেশের সর্ববৃহৎ ক্যাম্পাস। সম্প্রতি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেল—অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠ, পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থীদের পৃথক হোস্টেল, শিক্ষকদের স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট (আবাসন), গলফ কোর্স, নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট টার্মিনাল, টেনিস ফিল্ড, বাস্কেটবল কোর্ট, গ্রিন গার্ডেন, ফুড কোর্ট, রেস্টুরেন্ট, জিমনেসিয়াম, উদ্যান, সুপারশপ, সুইমিং পুল, মসজিদ এবং অডিটোরিয়ামে সাজানো প্রতিষ্ঠানটির নান্দনিক রূপ। এ ছাড়া আড্ডা দেওয়া জন্য ক্যাফেটেরিয়া, ক্যান্টিন, ঝুপড়ির দোকানের পাশাপাশি রয়েছে কয়েক ডজন চত্বর; যেখানে প্রায় সময়ই শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আড্ডা ও গ্রুপ স্টাডি করতে দেখা যায়। এখানের অধিকাংশ ভবনই কয়েক তলা বিশিষ্ট। প্রতিটি ভবনই অত্যাধুনিক অবকাঠামো ও গবেষণা-নির্ভর শিক্ষাদানের গতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তৈরি। 

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস

‘ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যক্রম শেষ করেই থেমে থাকে না, তারা পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলে। তারা তাদের বাবা-মায়ের যত্ন নিতে জানে, শিক্ষকদের সম্মান করতে জানে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষা এবং কমিউনিটির সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকতে জানে।সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম, স্বেচ্ছাসেবা, ত্রাণ তৎপরতা, রক্তদান, বৃক্ষরোপণ বা পরিবেশ-সচেতনতা— প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের এগিয়ে দেয় নির্দ্বিধায়।’

বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের গর্ব
বর্তমানে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি টাইমস হায়ার এডুকেশন র‍্যাংকিং ২০২৫ অনুসারে বাংলাদেশের সব স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। একই অবস্থান দ্য ইন্টার ডিসিপ্লিনারি সায়েন্স র‍্যাংকিংস ২০২৫-এ। কিউএস র‍্যাংকিং ২০২৪-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান এবং বিশ্বের শীর্ষ ১০০০ (এক হাজার) বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে দেশের অন্যতম এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ ছাড়াও স্কোপাস ইনডেক্স প্রকাশনা ২০২৪-এ ড্যাফোডিল দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম এবং সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।

১১ লাখ বইয়ের ভাণ্ডার ৭০ হাজার বর্গফুটের লাইব্রেরিতে
শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য ৭০,০০০ বর্গফুট আয়তনের লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছে ড্যাফোডিল; যেখানে প্রায় ১১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০টি বই এবং ই-রিসোর্স মজুত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক এবং কর্মীরাও অনায়াসে ব্যবহার করতে পারছেন বিপুল ভাণ্ডার সমৃদ্ধ এই গ্রন্থাগারটি। এখানের পাঠকক্ষও যেন যে-কোনো ধরনের অডিটোরিয়ামের বসার আসন ছাড়িয়ে গেছে। গ্রন্থাগার সংশ্লিষ্টেদের তথ্যনুযায়ী, একসাথে ১,৫০০ জন শিক্ষার্থীর বসার সুযোগ রয়েছে তাদের গ্রন্থাগারে। সুযোগ রয়েছে বই বাসায় নিয়ে পড়ারও। সার্কুলেশন, ক্যাটালগিং এবং প্রসেসিং, রেফারেন্স, বাংলাদেশ কর্নার ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডি সেন্টার, সংবাদপত্র ও সাময়িকী বিভাগ, কাজী নজরুল এডুপ্লেক্স, রবীন্দ্রনাথ জ্ঞান পার্ক, ফটোগ্যালারি, লাইব্রেরি ক্যাফে, ন্যাপিং জোন, মাইন্ড ম্যাপিং প্লেস এবং সাইলেন্ট জোন ক্যাটাগরিতে ভাগ নান্দনিক এই গ্রন্থাগার যেন যে-কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে হার মানায়।

৫০ প্রোগ্রাম, ১,২৪০ শিক্ষক; ভিত গড়ছে ‘ডিআইইউ অ্যালামনাই’
২২তম বছরে দাঁড়িয়েছে ডিআইইউ অ্যালামনাই সংখ্যা বর্তমানে অর্ধলাখ ছাড়িয়ে গেছে। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী এক সেতুবন্ধন; যা পড়াশোনা শেষে ডিআইইউ গ্রাজুয়েটদের পেশাগত জীবন গঠন ব্যাপকভাবে সহায়তা করছে। বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানালেন, ড্যাফোডিলের সাবেক শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এর সরকারি চাকরি বিশেষ বিসিএস ক্যাডার ও বেসরকারি খাত, বহুজাতিক কোম্পানি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোয় তাদের অবদান স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতেও সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন ডিআইইউ অ্যালামনাই।

ড্যাফোডিল শিক্ষকদের বড় একটি অংশ পিএইচডিধারী; যা তাদের শিক্ষা ও গবেষণার মানকে অনন্য করে তুলেছে। এছাড়াও অনেক শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রির জন্য শিক্ষা ছুটিতেও রয়েছে; যার প্রভাব রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির র‍্যাংকিংয়ে। পার্টনারশিপ রয়েছে দেশ-বিদেশের ৬০০টি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ড্যাফোডিলে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ হাজারের অধিক; যার বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ১,২৪০ জন। ৬টি অনুষদের বিপরীতে ২৯টি বিষয়ের ওপর স্নাতক প্রোগ্রাম চালু রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। স্নাতকোত্তর রয়েছে আরও ১৮টি বিভাগে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ড্যাফোডিল শিক্ষকদের বড় একটি অংশ পিএইচডিধারী; যা তাদের শিক্ষা ও গবেষণার মানকে অনন্য করে তুলেছে। এছাড়াও অনেক শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রির জন্য শিক্ষা ছুটিতেও রয়েছে; যার প্রভাব রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির র‍্যাংকিংয়ে। পার্টনারশিপ রয়েছে দেশ-বিদেশের ৬ শতাধিক স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।

‘গবেষণা, উদ্ভাবন, আবাসিক হলের সুবিধা, ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরির মতো উপাদানের সমন্বয়ে আমাদের ক্যাম্পাস একটি উন্নতমানে পৌঁছেছে। পাশাপাশি আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও এই ক্যাম্পাসকে করেছে অনন্য।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গণে ‘গ্রিন ক্যাম্পাস’র পথিকৃৎ
টাইমস হায়ার এডুকেশনে দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় উঠে আসার ক্ষেত্রে ড্যাফোডিলের পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে দেশের অন্যতম অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়; যা ‘গ্রিন ক্যাম্পাস’ উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে গবেষণা, শিক্ষা, বৃক্ষরোপণ, পানি সংরক্ষণ এবং সৌরশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও ড্যাফোডিল দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়; যারা জাতিসংঘের পরিবেশবান্ধব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি (UN Commitment to Sustainable Practices)-এ স্বাক্ষর করেছে।

‘গবেষণা, উদ্ভাবন, আবাসিক হলের সুবিধা, ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরির মতো উপাদানের সমন্বয়ে আমাদের ক্যাম্পাস একটি উন্নতমানে পৌঁছেছে। পাশাপাশি আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও এই ক্যাম্পাসকে করেছে অনন্য।’ —অধ্যাপক ড. এম. লুৎফর রহমান, উপাচার্য, ডিআইইউ

উন্নত ল্যাব, আবাসন ও পরিবহন—সুযোগ-সুবিধায় পূর্ণ প্যাকেজ
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, ড্যাফোডিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০টিরও বেশি বাস সুবিধা রয়েছ। যেগুলো রাজধানী ঢাকার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করেছে। ধানমন্ডি, মিরপুর, উত্তরা, টঙ্গি, বাইপাইল, ধামরাই, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, বাসাবো, ইসিবি থেকে নিয়মিত ক্যাম্পাসে চলাচল করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাজে ব্যবহৃত হয় এমন প্রায় ১৫০টি ল্যাব রয়েছে ড্যাফোডিলে; যার প্রতিটিই শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য উন্মুক্ত। শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এখানের ক্যান্টিন, কাফেটেরিয়া, দোকানপাট। ফলে শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরাই এখানে সকল কিছু পরিচালনা করে থাকছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫টি আবাসিক হল (৩টি ছাত্র হল ও ২টি ছাত্রী); আছে এগুলোর এক্সটেনশন ভবনও। হলগুলোয় থাকা শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৭ হাজারেরও বেশি। অ্যাকাডেমিক ভবনের প্রতিটি কর্নারে রয়েছে ক্যান্টিন; যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই গল্প-আড্ডা কিংবা গ্রুপ স্টাডিতে মেতে উঠতে পারে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোটেল ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজেদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নিয়মিত খাবার তৈরি এবং বিক্রি করে থাকেন।

সমাবর্তনে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীরা

নজর কেড়েছে ‘এক ছাত্র, এক ল্যাপটপ’ উদ্যোগ
ডিজিটাল শিক্ষাতেও বেশি অগ্রগামী ড্যাফোডিল। করোনা মহামারির সময়েও ‘Blended Learning Center’ এবং ‘GoEdu’ প্ল্যাটফর্ম চালু করে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান সময়েও ড্যাফোডিল উন্নত বিশ্বের আদলে অনলাইন ডিগ্রি ও প্ল্যাটফর্ম-ভিত্তিক শিক্ষা চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ড্যাফোডিলের ‘এক শিক্ষার্থী, একটি ল্যাপটপ’ প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্যই হলো শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত রাখা। ল্যাপটপ ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজে অনলাইন রিসোর্স, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার, আর্থিক লেনদেনের তথ্য, এবং অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারে। শিক্ষার্থীরা ৫ম সেমিস্টারে পৌঁছালে ল্যাপটপ পাওয়ার জন্য নোটিফিকেশন পাবেন। ভিডিও রিজিউম, গুগল সাইট তৈরি এবং ফিডব্যাক জমা দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স থেকে ল্যাপটপ গ্রহণ করে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনে উচ্ছ্বসিত শিক্ষাজীবন
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে এক ঝাঁক সক্রিয় সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন; যা শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের বাইরে তাদের সৃজনশীলতা, নেতৃত্ব ও সহযোগিতার দক্ষতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল দক্ষতা অর্জনই করেন না, বরং ক্যাম্পাসজুড়ে একটি প্রাণবন্ত পরিবেশ গড়ে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১টি ক্লাব এবং ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন রয়েছে, যারা নিয়মিত নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রতিটি ক্লাব ও সংগঠন একটি নির্বাহী কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়, যার মেয়াদ সাধারণত এক বছর। শিক্ষক মডারেটরের তত্ত্বাবধানে ক্লাবগুলো শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ইভেন্টে যুক্ত করে, যা তাদের শৃঙ্খলা, দলগত কাজ এবং ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী করে তোলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সট্রা কারিকুলাম কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫টি সংগঠন কাজ করে থাকে। এগুলো হলো— এম্প্লয়এবিলিটি ৩৬০, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, চেঞ্জ টুগেদার। ক্লাব রয়েছে ৫১টি। এর মধ্যে ডিআইইউ কম্পিউটার অ্যান্ড প্রোগ্রামিং ক্লাব, ডিআইইউ রোবোটিক্স ক্লাব, চেঞ্জ টুগেদার ক্লাব, ডিআইইউ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, ডিআইইউ কারাতে-ডো ক্লাব, ডিআইইউ চেস ক্লাব, ডিআইইউ বিজনেস অ্যান্ড এডুকেশন ক্লাব, সোশ্যাল বিজনেস স্টুডেন্টস' ফোরাম, ডিআইইউ কমিউনিকেশন ক্লাব, ডিআইইউ ব্লাড ডোনারস ক্লাব, ডিআইইউ ভলান্টারি সার্ভিস ক্লাব, ড্যাফোডিল প্রথম আলো বন্ধুসভা, সোসাইটি ফর ইয়াং বিজনেস লিডারস, ডিআইইউ মার্কেটিং ক্লাব, ডিআইইউ ক্রিয়েটিভ পার্ক, অল স্টারস ড্যাফোডিল, ডিআইইউ রোটা‌র‌্যাক্ট ক্লাব,ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কালচারাল ক্লাব অন্যতম।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস

এসব ক্লাবের কার্যক্রম ক্যাম্পাসে নিয়মিত আয়োজন, সেমিনার ও কর্মশালার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন আড্ডা ও ভাবনার জায়গাগুলোতেও এর প্রভাব পড়ে। শাওলিনের খোপ, কাঁঠালতলা, বনমায়া, পাইথনের স্ট্রিটসহ ক্যাম্পাসের জনপ্রিয় ঝুপড়ির দোকানগুলোতে প্রতিদিনই চলে ক্লাব সদস্যদের গল্প, পরিকল্পনা আর বন্ধুত্বের আড্ডা। সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্লাব ও সংগঠনগুলো শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প শেখার প্ল্যাটফর্মই নয়, বরং তাদের ক্যারিয়ার গঠনের পথেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স পরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এক কথায় বলতে গেলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সেরা তার শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের জন্য এবং কিছু বিশেষ সুযোগ- সুবিধার জন্য; যা ড্যাফোডিলকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করতে পারে। 

বিজনেস অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অনুষদের এই সহযোগী ডিন আরও জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমেও ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা অতুলনীয়। নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করা, প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ—সব কিছুতেই শিক্ষার্থীরা সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। তারা শুধু ডিগ্রিধারী নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন, প্রযুক্তি-দক্ষ ও দায়িত্বশীল নাগরিক গড়ে তোলে। এটাই ড্যাফোডিলকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বিশ্বমানের সবুজ ক্যাম্পাস, ‘ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ’ প্রকল্প, বাধ্যতামূলক ‘আর্ট অব লিভিং’ কোর্স, ৪৮টির বেশি স্টুডেন্ট ক্লাব, স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সাপোর্ট, কারিগরি ও চাকরি-সংশ্লিষ্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রম, এবং শক্তিশালী ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার—এসবই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের করে তোলে কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের পাঁচ শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি, আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ, স্টুডেন্ট ও ফ্যাকাল্টি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, এবং নিয়মিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দিচ্ছে বৈশ্বিক মানচিত্রে। উদ্ভাবন ও গবেষণার ক্ষেত্রে ড্যাফোডিলের অবস্থান অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ ১২০০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ এবং বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্যই এর প্রমাণ।

বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ড্যাফোডিল। গবেষণা, উদ্ভাবন, আবাসিক হলের সুবিধা, ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরির মতো উপাদানের সমন্বয়ে গড়া এই ক্যাম্পাস ইতোমধ্যেই উন্নতমানে পৌঁছেছে। পাশাপাশি দনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও এই ক্যাম্পাসকে করেছে অনন্য।

ড. মিজানের ভাষ্য, শিক্ষা, গবেষণা, প্রযুক্তি, মানবিকতা ও নেতৃত্ব—এই পাঁচ স্তম্ভের ওপর দাঁড়ানো ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিই হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

নেতৃত্বের আয়নায় ড্যাফোডিল
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম মাহবুব-উল-হক মজুমদার বলেন, প্রতিবছর আমরা দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে র‍্যাংকিংয়ে অবস্থান করে থাকি। এবার আমরা বুয়েটের সাথে দ্বিত্বভাবে প্রথম হয়েছি। এটা নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনন্য সাফল্য। 

তিনি জানান, আমাদের র‍্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে গবেষণা এবং পড়াশোনা পরবর্তী ক্যারিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও অন্যান্য কিছু ফ্যাক্টরও ভূমিকা রেখেছে। শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সরকারি বিধির পাশাপাশি প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার জন্য ন্যূনতম পিএইচডি পোগ্রামে এনরোল হওয়ার নিয়ম করে দিয়েছে। সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পিএইচডিধারী হতে হয়। এসব গুণাগুণ থাকলে শিক্ষকদের অ্যাকাডেমিক আর কিছু বাকি থাকে না। তবে লিডারশিপ গঠনের কিছু বিষয় থাকে। যা বাকি সময়ে তারা অর্জন করে নিতে পারে।

অধ্যাপক ড. এম. লুৎফর রহমান

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. লুৎফর রহমান জানান, আমরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আছি। গবেষণা, উদ্ভাবন, আবাসিক হলের সুবিধা, ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরির মতো উপাদানের সমন্বয়ে আমাদের ক্যাম্পাস একটি উন্নতমানে পৌঁছেছে। পাশাপাশি আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও এই ক্যাম্পাসকে করেছে অনন্য। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ এই ক্যাম্পাসে এনে দিয়েছে এক আলাদা সৌন্দর্য। পিএইচডিধারী ও পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকাও আমাদের অ্যাকাডেমিক পরিবেশকে করেছে আরও সমৃদ্ধ।


সর্বশেষ সংবাদ