প্রেসিডেন্সী ইউনিভার্সিটির সিএসই ফেস্ট

প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার মূল কারিগর মানুষের মেধা: অধ্যাপক ড. কায়কোবাদ

  © সংগৃহীত

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কম্পিউটার বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেছেন, মানুষের সার্থকতা তার মেধায়, মননে। সেরা হতে তাই সম্পদের প্রাচুর্য নয়, প্রয়োজন মেধার বিকাশ। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার মূল কারিগর মানুষের মেধা। 

সোমবার (১৮ নভেম্বর) ঢাকার প্রেসিডেন্সী ইউনিভার্সিটির সিএসই ফেস্ট-২০২৪ অনুষ্ঠানে দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই ডিপার্টমেন্টের হলেও অধ্যাপক কায়কোবাদের মতো দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বের আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে সেমিনারটি একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে অবসরের পর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হিসেবে কাজ করছেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। 

ড. কায়কোবাদ বলছেন, বিশ্বের উন্নত দেশ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তুলনায় আমরা কোনো দিকেই কম মেধাবী নই। বিশ্বমঞ্চে আমরাও বিজয়ের নিশান উড়িয়েছি। তাই বাংলাদেশি হিসেবে হীনমন্যতায় ভোগার কিছু নেই। নাগরিক উন্নত হলে দেশও উন্নত হয়। শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী নাগরিক হয়ে ওঠার আহ্বান জানান এ জ্ঞানতাপস।

তিনি বলেন, আজ থেকে ১২৫ বছর আগে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন। সারা পৃথিবীর অন্তত তিনজন আবিষ্কারকের একজন ছিলেন তিনি। কত বড় মাপের আবিষ্কার ছিল সেটা! মুন্সিগঞ্জের একজন বাঙালি সেটা করেছিলেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানে, এমনকি মহাপরাধীন ভারতবর্ষে আমাদের যে শ্রেষ্ঠত্ব ছিল, তা আমরা ভুলতে বসেছি। আরেকটা অনুপ্রেরণার কথা বলি। দুই বন্ধু সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মেঘনাদ সাহা। 

সদ্য স্নাতক এই দুজন সেই সময় যথেষ্ট দুর্বোধ্য আইনস্টাইনের ‘আপেক্ষিকতা তত্ত্ব’ জার্মান ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। প্রশান্ত মহলানবিশের ঐতিহাসিক অবতারণিকাসহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালে সেটা আবার প্রকাশ করেছে। ওটাই ছিল প্রথম ইংরেজি অনুবাদ। মজার বিষয় হলো, ইংরেজিতে অনুবাদের জন্য তো জার্মান ভাষা জানতে হবে। আবার আপেক্ষিকতা তত্ত্বও বুঝতে হবে ভালোভাবে। এটা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। আর কোনো ইংরেজও তখন সে কাজ করেননি। এটাই ছিল বাঙালির শ্রেষ্ঠত্ব।
একটি চৈনিক প্রবাদ আছে, ‘এক বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে চাইলে ফসল ফলাও, দশ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে চাইলে বৃক্ষরোপণ করো, কিন্তু শত বছরের কথা ভাবলে শিক্ষায় বিনিয়োগ করো’, বক্তব্যে জানান ড. কায়কোবাদ। 

আমাদের শিক্ষা খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করা খুব জরুরি জানিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গুণী এই শিক্ষাবিদ বলেন, যদি দেশকে এগিয়ে নিতে হয়, তাহলে জ্ঞান–বিজ্ঞানের চর্চার কোনো বিকল্প নেই। তার মতে, বাঙালিরা এক সময় বিজ্ঞান চর্চায় উন্নত দেশগুলোর চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। বর্তমান যোগাযোগ প্রযুক্তির যে জয়জয়কার তার মূলে রয়েছে মহান বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর বেতার আবিষ্কার। 

এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে বিজ্ঞান চর্চার বন্ধ্যাত্ব তুলে ধরেন তিনি। বক্তব্যে ড. কায়কোবাদ বলেন, নিজেদের জ্ঞান চর্চায় আত্মতুষ্টিতে না ভোগে বৈশ্বিক জ্ঞান ভান্ডারের কষ্টিপাথরে নিজেদের যাচাই করে নিতে হবে।

'একজন মানুষ শুধু দেশের নাগরিক নন, বিশ্ব নাগরিকও বটে। আমরা তো আমাদের ছেলেমেয়েদের মেধার সম্মানটা করতে পারছি না। তবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেমের বীজ বপন করা গেলে ওরা কোনো না কোনোভাবে দেশকে সাহায্য করবেই, যেটা ভারতে হয়। বিদেশে থাকলেও তারা নানাভাবে ভারতকে সহযোগিতা করে'--উল্লেখ করেন অধ্যাপক কায়কোবাদ। 

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, অনেক ছাত্রের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে ভারতীয় একজন প্রফেসর আরেকজন প্রফেসরকে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে নেন। এ রকম বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ নানাভাবে তাঁরা একজন অপরজনকে সাহায্য করেন। আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি এখনো এতটা এমন নয়। এমনটা হওয়ার জন্য আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেশপ্রেমের বীজ বপন করতে হবে। যেমন কোরিয়ায় দেশের জন্য সেবা দিতে হয়। বিভিন্ন দেশে এই নিয়ম চালু আছে। জাপানেও আছে। দেশসেবার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে আমাদের কিশোর-তরুণ-যুবকদের মধ্যে দেশের প্রতি মমত্ববোধ তৈরি হতো।

তিনি বলেন, হাজার বছর আগে আর্কিমিডিস কীভাবে একটা সমস্যার সমাধান করেছেন, তা আমি এখনো পারি না। অর্থাৎ মানুষ কত মেধাবী হতে পারে, ভাবুন! আমরা মস্তিষ্কের ওই পরিমাণ চর্চা করি না, যেটা তাঁরা করেছেন। যেমন আলবার্ট আইনস্টাইন খুব চিন্তা করতে পছন্দ করতেন। আমরা তো ও রকম চিন্তা করি না। আমাদের দেশে যত রকম কুইজ কম্পিটিশন আছে, সেগুলোর প্রায় সবই তো মুখস্থবিদ্যা থেকে দিতে হয়। যেমন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদের নাম কী? ওটার নাম যা–ই হোক, তাতে কী? তাতে কিছু আসে যায়? আমার এই বিদ্যা শিখে কোনো দিন কোনো কাজে লাগবে? বরং যেসব সমস্যার উত্তর চিন্তা করে বের করতে হয়, সেসব চিন্তা করলে মস্তিষ্কের ডেভেলপমেন্ট হয়। কিন্তু সে রকম কুইজ আমরা আয়োজন করি না। আমাদের এমন কুইজ করতে হবে, যাতে কিছুক্ষণ চিন্তা করে উত্তর দিতে হবে। আর চিন্তার অভ্যাস করতেই বই পড়া জরুরি।

তার মতে, মহাপরাধীন ভারতে বাংলাদেশের মানুষ প্রমাণ করেছিল তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা আছে। দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিবিদ গোখেল বলেছিলেন, ‘হোয়াট বেঙ্গল থিংকস টুডে, ইন্ডিয়া উইল থিংক টুমোরো’। (অর্থাৎ বাঙালিরা আজ যা ভাববে, ভারত তা ভাববে আগামীকাল।) আমরা বিজ্ঞানমনস্ক জাতি ছিলাম। বিজ্ঞানে আমাদের অবদান আরও অনেক অনেক বাড়বে। এখনকার মতো সাদামাটা থাকবে না এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর ভর করে আমাদের এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশ আমাদের স্বপ্ন অনুযায়ী একসময় সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। 

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার জন্য, আমাদের গবেষণার বাস্তব-বিশ্বের প্রভাব প্রদর্শন করতে হবে। তাদের দেখাতে হবে কীভাবে তাদের কাজ সমাজে একটি পার্থক্য আনতে পারে। বাস্তব ফলাফলের সাথে গবেষণাকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্দেশ্য এবং প্রেরণার অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে পারি।

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ না হলে আমাদের দেশটা সমৃদ্ধ হতে পারবে না গুণী এই অধ্যাপক জানান, দেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিজ্ঞান শেখার কোনো বিকল্প নেই। প্রিয় শিক্ষার্থীরা, তোমরাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর মেধা-প্রজ্ঞায় দেশকে এগিয়ে নিতে গেলে গণিত ও বিজ্ঞান ছাড়া বিকল্প নেই। গুগল, অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিলাভ পুরো দেশের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে এসেছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence