বছরে ৩ সেমিস্টারে ফিরতে চায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

ইউজিসি লোগো
ইউজিসি লোগো  © ফাইল ছবি

দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে দুটি সেমিস্টার চালুর নির্দেশনা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। সেই নির্দেশনা মেনে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় বাই-সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছিল। তবে বাই সেমিস্টার পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে ট্রাই সেমিস্টার বা বছরে ৩ সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান করাতে চায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বছরে তিনটি সেমিস্টার পরিচালনার আবেদন করা হয়েছে। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখাও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। যদিও বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে,  আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যিালয়গুলোয় বছরে ৩ সেমিস্টার প্রচলিত ছিল। ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর ইউজিসির পক্ষ থেকে বছরে দুই সেমিস্টার চালু সংক্রান্ত একটি চিঠি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেজিস্ট্রারদের কাছে পাঠানো হয়।

এতে নির্দেশনা দেয়া হয়, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিন সেমিস্টারের পরিবর্তে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি (বাই-সেমিস্টার) চালুর সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে হবে। পরে তা অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়িত হয়। এখন আবার আগের মতো বছরে ৩ সেমিস্টারে ফিরতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বছরে তিনটি সেমিস্টারের যৌক্তিকতা কেমন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় এ বিষয়গুলো আমাদের দেখতে হবে। এটি ইউজিসির একার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সিভিল সোসাইটিসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

ইউজিসির ওই চিঠিতে বলা হয়, কমিশনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাই-সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং কিছুসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সুনামের সঙ্গে বাই-সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ২৪(৩) এবং ৩৫(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রোগ্রাম ও কোর্স অনুমোদনের অন্যতম শর্ত হলো ‘প্রোগ্রামটি অবশ্যই ডুয়াল সেমিস্টার ভিত্তিতে পরিচালনা করতে হবে।

মূলত, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চাহিদা অনুযায়ী কমিশন প্রণীত আউটকাম বেজড এডুকেশন (ওবিই) টেমপ্লেট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব প্রোগ্রাম বাই-সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনুরূপ বাধ্যবাধকতা রয়েছে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৭-এর ১৫ ধারার আওতায় প্রণীত বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্কেও (বিএনকিউএফ)।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। বর্ণিতা অবস্থায় দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের শিক্ষা পদ্ধতি (বাই-সেমিস্টার) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও কমিশন প্রণীত নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক বাই-সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম আবশ্যিকভাবে পরিচালনা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো।

ইউজিসির এ নির্দেশনা মেনে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাই সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান পরিচালনা শুরু করে। যদিও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ট্রাই সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করছে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যেই নতুন করে টাই সেমিস্টারে ফেরার দাবি জানাল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
 
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ট্রাই সেমিস্টার পদ্ধতির কারণে একটি সেমিস্টারের পাঠ ভালোভাবে রপ্ত করার আগেই শিক্ষার্থীদের সামনে চলে আসে আরেকটি সেমিস্টার। এভাবে  শিক্ষার্থীরা দক্ষতায় পিছিয়ে পড়ে চাকরি বাজারে গিয়ে। আবার প্রতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীকে নতুন করে ভর্তি হতে হয় বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে। তাছাড়া সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাই সেমিস্টার চালু রয়েছে।

তাদের মতে, সেমিস্টারে একটু বেশি সময় পেলে শিক্ষার্থীদের ইন ডেপথ পড়ানো যায়। শিক্ষকরাও গবেষণার জন্য কিছুটা সময় পান। কিন্তু ট্রাই সেমিস্টার চালু হলে শিক্ষার্থী খুবই কম ক্লাস করার সুযোগ পান। শিক্ষার মান আরও বাড়াতে হলে ছয় মাসের সেমিস্টারই বহাল রাখা দরকার। 

যদিও শিক্ষাবিদদের এ দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তারা বলছে, ৩ সেমিস্টার পদ্ধতিতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষিত জাতি গঠনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান সর্বজন স্বীকৃত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় ট্রাস্টের অধীন অলাভজনক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। যে কোনো মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার রেওয়াজ থাকলেও বাই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর ক্ষেত্রে ইউজিসি এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি।

এ বিষয়ে স্টেট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মফিজুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ট্রাই সেমিস্টার পদ্ধতির অনেকগুলো সুবিধা আছে। এর মধ্যে চার মাসে সেমিস্টার হলে কোর্স লোড কমে যায়। ছয় মাসের সেমিস্টারে অনেকগুলো কোর্স একসঙ্গে পড়ানো হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে কোনো কিছু শিখতে পারে না।

তিনি বলেন, ট্রাই সেমিস্টার পদ্ধতির দ্বিতীয় সুবিধা হলো- একজন শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে ফেল করলে তাকে আর ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয় না। তিন মাস পরই ফেল করা বিষয়ে ‘রিটেক’ নিতে পারে। এতে করে সময়য়ের ব্যবধান কমে আসে। এছাড়া ৪ মাসের সেমিস্টার হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তিন কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের সুযোগ পায়। এসব বিষয় বিবেচনায় ট্রাই সেমিস্টার পদ্ধতিতে ফেরা উচিত বলে বলে মনে করেন তিনি। 

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ট্রাই সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে শিক্ষার্থীরা সারা বছর পড়ালেখার মধ্যে থাকে। এতে ছাত্র-ছাত্রীরা সেশনজট ছাড়াই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারে। বাই সেমিস্টার পদ্ধতির ফলে শিক্ষার্থীরা অনেক অবসর সময় পায়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি মোটেও ভালো না।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence