১৫ শতাংশ আয়কর কীভাবে আদায় হবে— জানালেন উপাচার্যরা
- মুনতাসির রহমান
- প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪৩ PM , আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৪৭ AM
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫ শতাংশ আয়কর দেওয়ার রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ।
জানা গেছে, আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে আয়করের অর্থ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া যাবে না মর্মে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস না থাকায় এই অর্থ শিক্ষার্থীদেরকেই বহন করতে হবে কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
১৫ শতাংশ আয়করের অর্থ কীভাবে আদায় এবং পরিশোধ করা হবে সে বিষয়ে জানতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস দেশের একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে কথা বলেছে। তারা বলছেন, অতিরিক্ত যে অর্থ ধার্য করা হয়েছে সেটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আদায় করা হবে।
এ বিষয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর এম. লুৎফর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব কোনো আয় নেই। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র টাকায় সবকিছু পরিচালনা করা হয়। কাজেই ১৫ শতাংশ আয়কর পরিশোধের যে কথা বলা হচ্ছে সেটি হয়তো শিক্ষার্থীদেরই বহন করা লাগবে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর যখন ট্যাক্স আরোপ করা হবে, তখন এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর চলে আসবে। এতে করে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বেড়ে যাবে। সরকারের উচিৎ ছিল সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অডিটের আওতায় নিয়ে আসা। অডিট সম্পন্ন হওয়ার পর যদি কোনো সারপ্লাস অ্যামাউন্ট থাকে তখন সেই অর্থের ওপর আয়কর আরোপ করা যেত। এতে করে এই অর্থ শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করতে হত না।
এ বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিষ্ঠাতা-উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবিইস) ভাইস চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, আপিল বিভাগের রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য করার সুৃযোগ নেই। ১৫ শতাংশ ট্যাক্স কীভাবে আদায় করা হবে সে বিষয়ে আলোচনা করতে সভা ডাকা হয়েছে। সভার আগে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুন মাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারের ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায় সংক্রান্ত আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আয়কর আদায় থেকে বিরত থাকতে আপিল বিভাগের আদেশ বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে আয়কর আদায় নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দায়ের করা ৪৬টি রিট হাইকোর্টে চূড়ান্ত শুনানির আদেশ বহাল রাখা হয়।
২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারের ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের দুই প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ আপিল নিষ্পত্তি না পর্যন্ত এ আয়কর আদায় থেকে বিরত থাকতে এনবিআরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০০৭ সালের ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। তখন ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয় যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের উদ্ভূত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনর্নির্ধারণ করা হলো। ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর হবে।’
২০১০ সালের ১ জুলাই আরেক প্রজ্ঞাপনে এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা শুধু তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের উদ্ভূত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের হার হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।’ এরপর বিভিন্ন দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে ৪৬টি রিট করা হয়েছিল।
এর আগে দেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয়গুলোর রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত বিগত ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর ধার্য করাকে অবৈধ ঘোষণা করেন। এর বিরুদ্ধে সরকারের আপিলের পর আপিল বিভাগ ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এক আদেশের মাধ্যমে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর আরোপ না করার আদেশ দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে গত ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আয়কর দিতে হবে না বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত রিট আবেদনগুলোর হাইকোর্টে চূড়ান্ত শুনানির আদেশও বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।