বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ক্যাডারভিত্তিক বিষয়ে মন নেই

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা  © টিডিসি ফটো

দেশে উচ্চশিক্ষায় বিষয় নির্ধারণে (সাবজেক্ট চয়েজ) বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পছন্দের শীর্ষে থাকে প্রকৌশল, ব্যবসায়, আইন, চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগগুলো। তবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে বেছে নিতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আসন সংখ্যা অনেক হওয়ার কারণে কম যোগ্যতায়ও পছন্দের এসব বিষয় পড়ার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। ফলে মৌলিক বিজ্ঞান, মানবিক ও কলা বিভাগের বিষয়গুলো হারিয়ে যেতে বসেছে বেসরকারি এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। কিন্তু বিষয়ভিত্তিক চাকরি বিশেষ করে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে বিষয়গুলোর গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। তবে এই সংকট সৃষ্টির কারণ হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা এবং শিক্ষা ক্যাডারবিষয়ক বিভাগের প্রতি তাদের অনাগ্রহকে দুষছেন শিক্ষাবিদরা। 

৪১তম বিসিএস নিয়োগে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিভিন্ন ক্যাডারে আসন ছিল ২ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে মৌলিক বিজ্ঞানে দুটি প্রকৌশল বিষয় বাদে ১৩টি, মানবিক ও কলা বিভাগ বিষয়ক ১৫টি এবং অন্যান্য ৩টি বিষয়সহ শিক্ষা ক্যাডার ছিল সবচেয়ে বেশি। এ সংক্রান্ত মোট পদ ছিল ৯০৫টি। পাশাপাশি টেকনিক্যাল ক্যাডারে কৃষি, মৎস্য ও পশু সম্পদে পদ ছিল ৩২১টি। প্রতি বিসিএসে এই পদ সংখ্যা প্রায় কাছাকাছিই থাকে। ফলে অর্ধেকেরও বেশি আসনে এই সংক্রান্ত পদে ক্যাডার নিয়োগ হয়। অথচ এই বিষয়ক বিভাগগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশি পরিসরে রাখলেও, বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয়ে এর সংখ্যা অনেকাংশেই কম।

টেকনিক্যাল, ফার্মেসিসহ চাকরির বাজারে চাহিদা আছে এমন বিষয়গুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেশি রাখার চেষ্টা করে। আর বিসিএস ছাড়া অন্যান্য চাকরিতে মানবিক ও সাধারণ বিজ্ঞানের বিষয়গুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হয় না। তবে সব ধরনের বিষয়গুলো চালু করতে আমরা তাদের অনুপ্রাণিত করি কিন্তু বাধ্য করতে পারি না—অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, সদস্য, ইউজিসি

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষা ক্যাডার থাকা সামাজিক বিজ্ঞান, মৌলিক বিজ্ঞান, কলা ও কৃষিবিজ্ঞানে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যার মধ্যে বেশির ভাগই ইংরেজি ও অর্থনীতির দখলে। অন্যদিকে, দেশে ৪৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার্থীর হার ৫৯ শতাংশ।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সব খরচ শিক্ষার্থীকেই বহন করতে হয়। যে কারণে শিক্ষার্থীর কাছে এবং চাকরির বাজারে কম চাহিদা সম্পন্ন বিষয়ে কম শিক্ষার্থী নিয়ে কোনো বিভাগ চালানোর খরচ কাটিয়ে উঠে না। তবে প্রতি বিভাগে সকল বিষয় মিলিয়ে অন্তত ১০টি কোর্স মাইনর হিসেবে রাখতে হয়। কৃষি এবং সাধারণ বিজ্ঞানের বিষয়গুলো চালু করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন থাকায় তা চালু করা সব ক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে ওঠে না।

ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা ৯৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার ১০৭ জন। তাদের মধ্যে প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের শিক্ষার্থী ছিল সবচেয়ে বেশি। এ অনুষদে শিক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮৪ জন। এছাড়া বাণিজ্যিকে ছিল ৭১ হাজার ৩৮৬ জন, আইনে ছিল ১৯ হাজার ১৫৫ জন এবং ফার্মেসিতে ১০ হাজার ৪৪৮ জন শিক্ষার্থী। ফলে এই অনুষদ ও বিভাগুলোতেই শিক্ষার্থী ছিল মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭৬ শতাংশ। অথচ বেশির ভাগ শিক্ষা ক্যাডার থাকা সামাজিক বিজ্ঞান, মৌলিক বিজ্ঞান, কলা ও কৃষিবিজ্ঞানে শিক্ষার্থী ছিল মাত্র ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে আবার বেশির ভাগই ইংরেজি ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। ফলে বিভাগ দুটি বাদ দিলে মৌলিক বিজ্ঞান, মানবিক  কলা ও কৃষি বিষয়ক বিভাগে শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, মানবিক নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা মানুষকে মিথ্যা, অন্যায় ও অসৎ পথ পরিহার করতে সাহায্য করে। আর এই বিষয়গুলো নিশ্চিতে কার্যত ভূমিকা রাখে মানবিক ও কলা বিষয়ক বিভাগগুলো। এছাড়া আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি যেহেতু কৃষি। তাই কৃষি নির্ভর বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করতে দরকার এই বিষয়ক একাডেমিক পাঠ্যক্রমে মনোযোগ বৃদ্ধি। একজন যোগ্য ও সংবেদনশীল মানুষ তৈরি করার ক্ষেত্রে আমাদের সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একেবারেই তোয়াক্কা করছে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত  ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে। ফলে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসি’র কোনো নির্দেশনা সরাসরি পালনে বাধ্য নয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ২০১৭ সালে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ এবং ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’ নামের দুটি বিষয় যোগ করার নির্দেশনা জারি করে ইউজিসি। কিন্তু নির্দেশনার ছয় বছর পার হলেও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় তা মানেনি।

সামাজিকভাবে এবং চাকরির বাজারে প্রকৌশল, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও বাণিজ্য বিষয়ক বিভাগে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীদের কদর বেশি। তাই শিক্ষা ক্যাডার এবং সরকারি চাকরিতে মানবিক, কলা ও বিজ্ঞানের সাধারণ বিষয়গুলোর বড় সংখ্যক প্রভাব থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পড়াতে চরম অনীহা-বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইউজিসির ২০২১ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথমসারিতে থাকা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে সব চেয়ে বেশি মোট ২২ হাজার ১০৬ শিক্ষার্থীর ১৯ হাজার ২১৬ জনই প্রকৌশল ও কারিগরি, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন ও ফার্মেসির। আর বাকি ২ হাজার ৮৯০ জন মানবিক, কলা ও সাধারণ বিজ্ঞানের যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৩ শতাংশ। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সব খরচ শিক্ষার্থীকেই বহন করতে হয়। যে কারণে শিক্ষার্থীর কাছে এবং চাকরির বাজারে কম চাহিদা সম্পন্ন বিষয়ে কম শিক্ষার্থী নিয়ে কোনো বিভাগ চালানোর খরচ কাটিয়ে ওঠেনা—অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান, সাবেক চেয়ারম্যান, ইউজিসি

মানবিক ও কলা বিভাগে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে। এর ৪ হাজার ৬২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৬০ জনই মানবিক, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞানের যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭৫ শতাংশ। 

শিক্ষার্থী বিবেচনায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সর্বমোট ১৭ হাজার ১০৫ শিক্ষার্থীর মাত্র ১ হাজার ৮২৩ জন মানবিক ও কলা বিষয়ের যা সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক দিয়েও দ্বিতীয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থী বিবেচনায় এই হার মাত্র ১০ শতাংশের কিছু বেশি। 

দেশের আরেক প্রথম সারির অন্যতম বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মোট ১৩ হাজার ৫৪৪ শিক্ষার্থীর মাত্র ২ হাজার ৫৭৯ জন মানবিক, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও কৃষির যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯ শতাংশ। 

বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির মোট ৮ হাজার ৭০৪ শিক্ষার্থীর মাত্র ১ হাজার ২৭৭ জন মানবিক, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞানের যা এ সংক্রান্ত বিষয়ে  মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৪ শতাংশ।

আরেক বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির মোট ১২ হাজার ১৯৫ শিক্ষার্থীর মাত্র ২ হাজার ১৯১ জন মানবিক, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞানের যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৮ শতাংশ। 

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, টেকনিক্যাল, ফার্মেসিসহ চাকরির বাজারে চাহিদা আছে এমন বিষয়গুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেশি রাখার চেষ্টা করে। আর বিসিএস ছাড়া অন্যান্য চাকরিতে মানবিক ও সাধারণ বিজ্ঞানের বিষয়গুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হয় না। তবে সব ধরনের বিষয়গুলো চালু করতে আমরা তাদের অনুপ্রাণিত করি কিন্তু বাধ্য করতে পারি না। 

তবে বিভাগ অনুমোদনে ইউজিসির তদারকিও প্রবল থাকে পাশাপাশি আসন সংখ্যা নির্ধারণেও ইউজিসির শক্ত নির্দেশনা আছে। যদিও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তা পুরোপুরি মানছে না। তবে অটোমেশন চালু হলে এটি আর হবে না। এছাড়া সকল বিষয়ের সমন্বয় করতে অন্তত ২৫ শতাংশ ভিন্ন বিষয় যেমন, কলা, মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান ইত্যাদি সকল বিভাগের পাঠ্যক্রমে রাখতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি এবং তা কার্যকরও হচ্ছে— যুক্ত করেন ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা এই সদস্য।

দুয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার মতো বিষয়গুলো শুধু পরিচালনা করে থাকে—ড. তৌহিদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাবি

ইউজিসির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞানের কোনো শিক্ষার্থী নেই। অর্থাৎ এসব অনুষদ বা বিভাগ ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই। বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে কম রয়েছে কৃষি অনুষদ এবং এ সম্পর্কিত বিষয়। ৯৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে কৃষি সংক্রান্ত বিষয়।

এর মধ্যে দুটি কৃষি বিশেষায়িত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি এবং এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে এ বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী মাত্র ৪৯২ ও ২৯৬। কৃষি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও যা ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১০ ও ৪২ শতাংশ।

এই সমস্যাকে জাতীয় সংকট উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, দুয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার মতো বিষয়গুলো শুধু পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া প্রায় সব ধরনের বিষয় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে ইউজিসির ভূমিকা এবং প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন নির্দেশনা মানছে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। 

“একজন শিক্ষার্থী যেই বিষয়েই স্নাতকে অধ্যয়ন করুক না কেনো তার এই পড়ার মধ্যে সকল বিষয় নিয়ে একটা সমন্বিত ধারা থাকতে হবে। চাকরির জন্য একজন শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়লেও পরিবার, সমাজ ও ব্যক্তিগত আদর্শিক উন্নতি সাধনে তাকে মানবিক ও কলার বিষয়গুলোও পড়তে হবে। এটি বাস্তবায়িত না হলে একজন শিক্ষার্থীর সমাজে বসবাস করতে কর্মজীবনকে সহজেই মানিয়ে নিতে, সম্পর্ক গঠনে এবং সার্বিক জ্ঞান তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করবে যা তাকে স্বার্থপরতার দিকে ঠেলে দিবে। সর্বোপরি একজন যোগ্য ও সংবেদনশীল মানুষ তৈরি করার ক্ষেত্রে আমাদের সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একেবারেই তোয়াক্কা করছে না”— যোগ করেন এই সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় কার্যত ব্যবস্থা নিতে ইউজিসি আসলেই অসহায়। এর কারণ রাজনীতি ও ক্ষমতা। এছাড়া ইউজিসিতে দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত থাকায় এই সংকটের কার্যত সমাধান হচ্ছে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত না করে ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা আইনগুলো ততটুকুই মানে যতটুকুতে তাদের লাভ। এ সংকট মোকাবেলায় সরকারকে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে ইউজিসি আরও শক্তিশালী হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence