‘বাধ ভাঙা উল্লাসে’ মেতেছেন পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েটরা

‘বাধ ভাঙা উল্লাসে’ মেতেছেন পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েটরা
‘বাধ ভাঙা উল্লাসে’ মেতেছেন পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েটরা  © টিডিসি ফটো

দীর্ঘ কয়েকবছর পর সেই পুরনো বন্ধু, শিক্ষকসহ ক্যাম্পাসের পরিচিত সব মানুষের সাথে দেখা, আবেগ আর স্মৃতিমাখা এ এক অন্যরকম মিলনমেলা। স্মৃতির পাতায় কতশত গল্পগুলো যেন ফের জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই মিলনমেলায়। কেউ কপালে চুমু খাচ্ছেন, কেউ একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরছেন, কেউ বাবা-মাকে জড়িয়ে ছবি তুলছেন, আবার আবেগে কারো কারো চোখে জল ছলছল করছে। চারিদিকে একটা উৎসবের আমেজ বইছে। এমনই চিত্র দেখা গেলো বেসরকারি পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় সমাবর্তনে।

কালো গাউন আর কালো টুপি পরে একে একে জড়ো হচ্ছেন প্রাক্তন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা। বেলা গড়াতেই গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকার নেভি কনভেনশন সেন্টার।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো চারটি বছরের পরিসমাপ্তি হবে একটু পর। গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা তাই বাধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে রাঙিয়ে তুলেছে পুরো নেভি কনভেনশন সেন্টার। বর্ণিল আয়োজনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনের পর এবার ফের চার বছর পর অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন।

আরও পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ বছরে এগারো সমাবর্তন

এবার দ্বিতীয় সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি একাডেমিক বিভাগের ১৩টি প্রোগ্রামের ৫ হাজার ৬৪৯ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৫১৭ জন শিক্ষার্থী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশ নেন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল ও ১৩ জন শিক্ষার্থীকে ফাউন্ডার গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ থেকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল অর্জন করেন ফারজানা আক্তার ও সামিরা আলিম। একই বিভাগ থেকে ফাউন্ডার গোল্ড মেডেল অর্জন করেন তৌহিদুল ইসলাম আবির।

দুপুর গড়াতেই শুরু হয় সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা। এবার সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে এ সমাবর্তনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থেকে গ্র্যাজুয়েটদের পদক ও সনদ বিতরণ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

সমাবর্তনে  বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। সমাবর্তন বক্তা হিসবে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম। 

সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বাংলাদেশ সরকার উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। তাই আমি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পাঠদানের মাধ্যমে একটি প্রগতিশীল সমাজ গড়ে তোলার জন্য পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে ধন্যবাদ জানাই। আজকে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশে তাদের কর্মজীবন শুরু করতে যাচ্ছে। আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবেন। 

প্রতিবেদকের কথা হয়, এক গ্র্যাজুয়েট দম্পতির সাথে। ইয়াসির সিলমি, বিশ্ববিদ্যালয়ের  সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী, স্ত্রী সামিরা আলিম ও একই বিভাগের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী। ইয়াসির সিলমি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মহা আনন্দঘন দিন, আমার স্ত্রী চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল পাচ্ছে, এই মুহূর্ত একসাথে সমাবর্তনে আসা এবং উদযাপন করা আসলে বলে বুঝানোর মতো না। প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে গাউন পরে কালো টুপি উড়াবে আজ আমাদের সেই দিন।

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৫ম ব্যাচের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী রিমন সাখাওয়াত বলেন, আসলে এটাতো স্বপ্নের মতো। এই যে দীর্ঘবছর পর ফের একটা মিলনমেলা তাতে আনন্দ বটে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ এটি ভাবলে খারাপ ও লাগে।

গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উৎসবে মেতেছে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়েরাও। কালো গাউন পরে কালো টুপি উড়ানোর স্বপ্ন থাকে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত প্রতিটি শিক্ষার্থীর, আর সেই মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। দীর্ঘদিন পর শিক্ষক, বন্ধু থেকে শুরু করে প্রিয় মানুষদের কাছে পেয়ে ফ্রেমবন্দী করতে ব্যস্ত ছিলেন সবাই।

আরও পড়ুন: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির তৃতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ

গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী তোফায়েলুর রহমান, বাবা-মাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। চোখে মুখে একরাশ আনন্দ ভর করছে এই শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের। শিক্ষার্থীর বাবা আব্বাস উদ্দিন বলেন, সন্তানদের সফলতা এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে। সব শিক্ষার্থীরা যেন ভালো পর্যায়ে যেতে পারে এটাই প্রত্যাশা। 

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক জুয়েল দাশ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। এই শিক্ষার্থীরা যেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করতে পারে সেইভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান তিনি। 

সময় গড়াতেই শেষ হয় সমাবর্তনের মূল আনুষ্ঠানিকতা। শেষ পর্যায়ে নেচে-গেয়ে মেতে ওঠে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা, নিজেরাই গান গেয়ে উৎসব করে বিভিন্ন বিভাগের গ্র্যাজুয়েটরা । ওয়ারফেজ, আর্টসেল, শিরোনামহীনসহ জনপ্রিয় নানান ব্যান্ডের গানে ঝর তোলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল ফোরামের সদস্যরা। মেতে ওঠে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা। 

শেষ আকর্ষণ ছিল জনপ্রিয় ব্যান্ড দল বে অব বেঙ্গলের পারফরম্যান্স। নান্দনিক সুরের মূর্ছনায় পুরো কনভেনশন সেন্টার কেঁপে ওঠে। সুর মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরাও৷ সর্বশেষ 'পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়!ও সেই চোখের দেখা প্রাণের কথা সে কি ভোলা যায়' বাঁশির সুরে আবেগঘন এক পরিবেশ তৈরি হয় গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের মাঝে। শেষ হয়ে যায় এবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠান। ক্যাম্পাস জীবনের কথা মনে করতেই সবার চোখ অশ্রম্নতে ভিজে যায়। সকলের একটাই কথা স্মৃতি হয়ে থাকবে পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষাজীবন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence