সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের ৯ম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবি

সংবাদ সম্মেলন
সংবাদ সম্মেলন  © সৌজন্যে প্রাপ্ত

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের ৯ম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবি জানানো হয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করা হয়। 

সংগঠনটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিলন মিয়া ও সদস্য সচিব আল আমিন হাওলাদার সই করা লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে এক বছর পূর্তি শেষে বাংলাদেশ এক সংস্কার ও ঢেলে সাজানোর উষার দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রব্যবস্থা বিভিন্ন অঙ্গ-কাঠামো সংস্কার ও উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা অপ্রতুল। আমরা অতীব দুঃখ ও উদ্বেগের সাথে জানাচ্ছি যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ইউএপিইও/টিএপিইও) পদে কর্মরত কর্মকর্তাগণের সাথে বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হচ্ছে। 

‘রাষ্ট্রের এই বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি সমাধানের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদপত্র/সংবাদ মাধ্যম এবং সে মাধ্যমের প্রধানতম নিয়ামক সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলের কাছে আমাদের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরাই আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছেও বিনীতভাবে বলতে চাই এই সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশের কোন বিদ্যমান সিস্টেমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানানো নয়।’

নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপজেলা/থানা উপজেলা/ সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ মানসম্মত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। ১৯৯৪ সালে সংশোধিত নিয়োগবিধি অনুযায়ী পদটি ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। তার অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি তৎকালীন ১৭তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষক পদটি ১৮তম গ্রেডে ছিল। প্রধান শিক্ষক পদটি কয়েক দফায় উন্নীত হয়ে ২০১৪ সালে ১১তম গ্রেডে এবং সম্প্রতি উচ্চতর আদালতের রায়ে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার সকল প্রক্রিয়া সমাপ্তের পথে। সহকারী শিক্ষক পদটিও চার দফায় উন্নীত হয়ে ২০২০ সালে ১৩তম গ্রেডভুক্ত হয়।

‘ইতোমধ্যে এই দপ্তরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট পদটি ৯ম গ্রেড থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডে এবং পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদটি ৩য় শ্রেণি থেকে ১ম শ্রেণি (৯ম গ্রেড) উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য দপ্তরের সমগ্রেডের কর্মকর্তারা ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদটি ১০ম গ্রেডেই অপরিবর্তিত রয়েছে। যা আমাদের জন্য সত্যি হতাশাব্যঞ্জক ও বৈষম্যমূলক বলে আমরা মনে করি।’

‘বর্তমানে উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অনুমোদিত পদসংখ্যা ২ হাজার ৬২৯টি এবং এই পদের অব্যবহিত ঊর্ধ্বতন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এর পদসংখ্যা ৫১৬টি। উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এর পদ সংখ্যা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এর পদ সংখ্যার পাঁচগুণেরও বেশি। বর্তমান নিয়োগবিধি অনুযায়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদের ৫০ শতাংশ হিসেবে মাত্র ২৫৮টি পদে অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ১ জন পদোন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর যাবৎ একই পদে চাকুরি করছেন, এমনকি অধিকাংশ কর্মকর্তা একই পদে থেকে অবসরে যাচ্ছেন। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে এবং কর্মস্পৃহা হ্রাস পাচ্ছে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি করা হলে দীর্ঘদিনের লালনকৃত প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ হবে এবং কর্মোদ্দীপনা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের সর্বোচ্চ সংখ্যক এই অফিসারদের মনে পুঞ্জীভূত বৈষম্যমূলক বঞ্চনাবোধের অবসান হবে।’

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি ১৯ মার্চ ২০১৪ হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের জন্য আদালত চূড়ান্ত রায় প্রদান করেন। ওই আলোকে প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কিন্তু একজন উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অধীন প্রায় ৩০ জন ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রধান শিক্ষক এবং ১৬০-২০০ জন ১৩ তম গ্রেডভুক্ত সহকারী শিক্ষক থাকেন। এই শিক্ষকগণের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক তত্ত্বাবধান, মেন্টরিং, মনিটরিং, এসিআর ও ছুটি প্রদানকারী কর্মকর্তা হলেন উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ইউএপিইও)। এক্ষেত্রে উপজেলা/থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ইউএপিইও) এবং প্রধান শিক্ষক একই গ্রেড হওয়াতে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ইউএপিইও পদটি ৯ম গ্রেডে উন্নীত করা একান্ত প্রয়োজন।

‘সারা দেশে ৬৫ হাজার ৬৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রায় ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে একটি ভৌগোলিক প্রশাসনিক ইউনিট 'ক্লাস্টার' নির্ধারিত আছে যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন ইউএপিইও/টিএপিইও। এই বিদ্যালয়গুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকগণের নেতৃত্বসহ বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার, তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সূচারুরূপে সম্পাদনের জন্য তদারকি করতে হয়। সরকারের অন্য কোন দপ্তরের কোন একজন কর্মকর্তাকে মাঠ পর্যায়ের এতো বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব প্রদান করতে হয় না।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষার বৈষম্য নিরসনে গঠিত কনসালটেশন কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা এর ৪নং কলামে জনবল এবং আর্থিক ও বস্তুগত সম্পদ ব্যবস্থাপনায়। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পদের গ্রেড উন্নীতকরণের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। গত ২৩ মার্চ ৯ম গ্রেডের দাবিতে জেলা সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের ৬৪টি জেলার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। ইতঃপূর্বে এই পদটি ২য় শ্রেণি (১০ম গ্রেড) থেকে ১ম শ্রেণিতে (৯ম গ্রেড) উন্নীতকরণের পক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ১৯তম বৈঠকে সুপারিশ করেছেন। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই অদ্যাবধি এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।

 


সর্বশেষ সংবাদ