মামুন কি সংগঠনে ফিরতে পারবে?
- ইলিয়াস শান্ত
- প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২০, ০৬:২৯ PM , আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০, ০৭:৩৭ PM
সরকারি চাকরি থেকে কোটা তুলে দেয়ার দাবিতে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলন শুরু করেন কিছু শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। শেষ পর্যন্ত সরকার সব ধরণের সরকারি চাকরি থেকে কোটা তুলে দিতে বাধ্য হয়। এই আন্দোলনের সূত্র ধরেই পরবর্তীতে গড়ে ওঠে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ডাকসু নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হন সংগঠনটির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক নূর। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের জাতীয় ইস্যু নিয়ে কথা বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে তারা। তবে গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে সংগঠনটির আহবায়ক হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়; ডাকসুর সাবেক ভিপির বিরুদ্ধে এই ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগও ওঠে। এর পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সংগঠনটি।
ধর্ষণ অভিযোগের সমালোচনার জেড়ে সংগঠনটির আহবায়ক পদ থেকে হাসান আল মামুনকে অব্যহতি দেয়া হয়। ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক করা হয় সংগঠনটির ১ নং যুগ্ম আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনকে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তবে ২৪০ ঘণ্টা পার হলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তারা। এর কারণ হিসেবে তদন্ত কমিটি ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী হাসান আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করতে না পারাকেই দায়ী করেছেন। যদিও কয়েকদিন আগে অভিযোগের বিষয়ে হাসান আল মামুনের বক্তব্য নিতে পেরেছে তদন্ত কমিটি।
এদিকে ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই অনেকটা আড়ালে চলে গেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের অব্যাহতি প্রাপ্ত আহবায়ক হাসান আল মামুন। ঘটনার পর কারো সাথেই তেমন যোগাযোগ করেননি তিনি। এমনকি প্রায় সপ্তাহ খানেক খোদ তদন্ত কমিটিই তার কোনো খোঁজ পায়নি। মামুনের এই নীরবতায় অনেকেই তাকে ধর্ষণের ঘটনায় দোষী মনে করছেন। আবার কেউ কেউ এটিকে কেন্দ্র করে মামুনকে সংগঠন থেকে ‘মাইনাস’ করার চিন্তাও করছেন বলে জানা গেছে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের গঠনতন্ত্রও সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। সংগঠনটির গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১৭ এর অভ্যান্তরীণ শৃঙ্খলা ও বহিস্কার/ অব্যহতি/বিলুপ্তি ধারার ১ এ বলা হয়েছে, সংগঠেনের কোনো সদস্য গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র, লক্ষ্য, নীতি ও আদর্শ, মূল্যবোধ, ও নৈতিকতা বিরোধী কোন কাজে লিপ্ত হলে সংশ্লিষ্ট পরিষদ তা বিবেচনা বা তদন্ত করে অভিযুক্ত সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বা অভিযোগ হতে অব্যহতি প্রদান করতে পারবে। সকলক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি বহিষ্কার। স্থায়ী বহিষ্কারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় পরিষদের অনুমোদন লাভ করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্র অধিকার পরিষদের এক যুগ্ম আহবায়ক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ছাত্র অধিকার পরিষদ বরাবরই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরিচালিত সংগঠন। কিন্তু হাসান আল মামুনের জন্য কিছুটা হলেও সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। অনেকেই এখন ছাত্র অধিকার পরিষদকে আগের চোখে দেখছে না। তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- তার কারণে নুরুল হক নুরসহ সংগঠনের অন্য অনেক নেতার জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি। সবদিক বিবেচনা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
হাসান আল মামুন কি ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে বাইরেই থাকবে বা থাকতে পারে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, হাসান আল মামুনের বিষটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগে এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হবে।
তথ্যমতে, গত ২১ সেপ্টেম্বর ধর্ষণ ও তাতে সহায়তার অভিযোগে হাসান আল মামুনসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের ছয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রী। মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপিকে ধর্ষণে সহায়তাকারী বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলার অপর চার আসামি হলেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান ও মো. সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হিল বাকি। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে হাসান আল মামুনকে, আর অন্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।