স্মৃতি অম্লান রাখতে ১৩ দফা দাবি

শহিদ হাদির রক্তের দায় রাষ্ট্র এড়িয়ে যেতে পারে না: সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ

ওসমান হাদি ও সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ
ওসমান হাদি ও সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির খুনিদের ধরা এবং দেশের নিরাপত্তা ব্যর্থতায় সংক্ষুব্ধ উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় কাতারের সহকারী অধ্যাপক ড. হাসান মাহমুদ এবং সেক্রেটারি ও যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির তাইয়িব আহমেদ এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন। ওসমান হাদি এই সংগঠনের কম্যুনিটি সদস্য ছিলেন।

বিবৃতিতে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় শরিফ ওসমান হাদির দাফন, খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা, ফ্যাসিস্টদের গ্রেপ্তার এবং আইন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ ১৩ দফা দাবি জানানো হয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতীক, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা, সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের কমুনিটি সদস্য ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মর্মান্তিক শাহাদাতে সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ গভীরভাবে শোকাহত। মাত্র ৩২ বছর বয়সে তার এই মৃত্যু ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন হয়ে রইল। এটি কেবল একজন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীর মৃত্যু নয়, এটি মূলত পতিত ফ্যাসিবাদ ও প্রশাসনের লুকিয়ে থাকা সহযোগীদের পক্ষ থেকে জুলাইয়ের প্রজন্মের কণ্ঠ স্তব্ধ করার সম্মিলিত প্রচেষ্টা যা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

এতে বলা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরে প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত সশস্ত্র হামলার পর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তাঁকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা, ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার এবং আন্তরিক চিকিৎসা সত্ত্বেও তাঁকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আমরা শরিফ ওসমান বিন হাদির পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা ও  শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। এছাড়া চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মান ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। তবে একই সঙ্গে আমরা বলতে বাধ্য পূর্বশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও এই মৃত্যু এড়ানো যেত যদি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো তার নাগরিকের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারত।

হামলার মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগীরা ঘটনার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হওয়াকে ‘সবচেয়ে উদ্বেগজনক’ উল্লেখ করে বলা হয়, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং পরিকল্পিত পলায়ন, যার পেছনে প্রশাসনিক ব্যর্থতা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক যোগসাজশ রয়েছে কি না তা রাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জাতির সামনে তুলে  ধরে তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একজন নাগরিক, একজন শীর্ষ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মী এবং একটি আন্দোলনের মুখপাত্র এভাবে আক্রান্ত হয়ে শহীদ হওয়ার পরও যদি বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত না করা হয়, এবং খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে তবে তা হবে রাষ্ট্র, স্বাধীনতা ও গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার নৈতিক পরাজয়।

সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ দৃঢ়ভাবে মনে করে, শহিদ ওসমান হাদির রক্তের দায় রাষ্ট্র কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। জুলাইয়ের সরকার হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার, নিরেপেক্ষ- গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাই হবে এই শাহাদাতের প্রতি প্রকৃত সম্মান। আমরা শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও আইনসম্মত উপায়ে ন্যায়বিচারের দাবিতে আমাদের অবস্থান অব্যাহত রাখব। শহীদ ওসমান হাদীর আত্মত্যাগ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষার সংগ্রামে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের ১৩ দফা দাবি হল— শহিদ ওসমান হাদির হত্যায় জড়িত, মূল খুনি, পলায়নে সহায়তাকারী পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, মিডিয়া, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় তালিকাভুক্ত ও প্রমাণযুক্ত ফ্যাসিস্টদের পদচ্যুতি ও গ্রেফতার করা, ধারাবাহিক ব্যর্থতার দায়ে  আইন ও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করা, সন্ত্রাসীদের জামিনে সহায়তাকারী বিচারক, আইনজীবী ও পুলিশ সদস্যদের অবিলম্বে যথাযথ তদন্তপূর্বক বিচার নিশ্চিত করা, অভিযুক্ত খুনি ভারতে অবস্থান করছে এ বিষয়ে ভারত সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করা, প্রয়োজনে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে অথবা বাংলাদেশ মিশনের কার্যক্রম সীমিত করে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে শক্ত বার্তা দেওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে তার নামে সেমিনার রুমের নামকরণ ও বৃত্তি চালু করা, ঢাবির শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে শহিদ ওসমান হাদি হল নামকরণ করা, শাহবাগ চত্বরের নাম পরিবর্তন করে শহিদ ওসমান হাদি চত্বর নামকরণ করা, শহিদ ওসমান হাদির লাশ জাতীয় সংসদ ভবনের কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা, শহিদ ওসমান হাদির জীবন ও কবিতাকে জাতীয় পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা, তার জীবন ও কর্ম নিয়ে ডকুমেন্টারি, সিনেমা তৈরি করে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা, তার অনলাইন ও অফলাইনের সকল পোস্ট, লেখা ও বক্তব্যকে জাতীয়ভাবে আর্কাইভ করা এবং তার নামে একটি বিশ্বমানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা, যেটি  বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদ গবেষণায় নিবেদিত থাকবে। 


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!