ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ বিএনপির সমমনা-আন্দোলন শরিকরা

আসন বণ্টনে ধীরে চলো নীতি 

বিএনপি
বিএনপি  © লোগো

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য আসন সমঝোতার প্রশ্নে বিএনপির সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে শরিক জোট ও সমমনা দলের নেতারা। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বিএনপির ধীরে চলো নীতিতে দীর্ঘদিন আন্দোলনের সঙ্গী নেতারা রীতিমতো হতাশ। আসন বণ্টনে বিএনপির ধীরগতির কারণে তারা নির্বাচনি মাঠে নামতে পারছেন না। যদিও দ্রুত সমঝোতার আশায় তারা বিএনপির দিকেই তাকিয়ে আছেন।

গেল ৩ নভেম্বর গুলশানে প্রাথমিকভাবে বিএনপি ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। চরম বিতর্ক উঠায় পরদিন মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। আর ৬৩টি আসন খালি রেখে বিএনপি জানায়, এসব আসন থেকে সমমনা দল ও জোটের নেতাদের ছেড়ে দেয়ার তথ্য জানায় বিএনপি। দলের মনোনীতদের তালিকা ঘোষণার দিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানান।

সমমনা ও শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, যেসব সম্ভাব্য আসনে তারা লড়তে চান সেখানেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কাজ করছেন। এ কারণে তারা দ্বিধা-শঙ্কায় মধ্যে পড়েছেন।

আসন সমঝোতা নিয়ে সমমনা দল ও জোটের কয়েকজন সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের। তারা জানিয়েছেন, আসন সমঝোতা নিয়ে গেল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তখন আমীর খসরু জানিয়েছেন, তারা আসনগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করছেন।

বিএনপি সমমনাদের আসনগুলোর সুরাহার বিষয়ে অতি ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন দল ও জোটের নেতারা। তাদের ভাষ্য, বিএনপি এখন আন্দোলনের শরিকদের পাত্তা দিতে চাইছে না। ফলপ্রসূ আলোচনা করতে চাইছে না। জোট নেতাদের মধ্যে অনেকের আসনে বিএনপি দলীয় মনোনীত নাম ঘোষণা করেছে। এসব নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী সমমনা ও জোট নেতাদের সঙ্গে বিএনপি দলীয় স্থানীয় নেতাদের মানসিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। এসব বিষয়ে বিক্ষুব্ধ নেতারা।

সমমনা ও আন্দোলন শরিকদের আসন সমঝোতার বিষয়টি খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে বলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেন, আলোচনা চলছে। আশা করি দ্রুতই এ বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।

আসন বণ্টন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, চূড়ান্ত কিছুই হয়নি। বিএনপি মনোনয়ন নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা করছে। এনিয়ে সমমনাদের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। আগামী ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়টি মীমাংসা হবে বলে আমরাও প্রত্যাশা করছি।

আসন বণ্টনে অহেতুক কালক্ষেপণ উভয়ের জন্য (বিএনপি ও জোট শরিক) ক্ষতিকর মন্তব্য করে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইতোমধ্যেই নির্বাচনি মাঠে নেমে পড়েছে অনেক রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। এমনকি বিএনপির ঘোষিত মনোনীত প্রার্থীরাও নির্বাচনি বৈতরণি পাড় হতে যার যার এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। ঘরে ঘরে জনসংযোগ করছেন। অথচ সিদ্ধান্তহীনতার কারণে আমরা নির্বাচনি মাঠে নামতে পারছি না। যদিও এলাকার সকল কর্মসূচিতে এবং নেতাকর্মীদের পাশে আছি দীর্ঘদিন আগ থেকেই।

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র সেলিম বলেন, বিএনপির সিদ্ধান্তহীনতা কিন্তু আমাদের ভোগাবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ক্ষুব্ধতা যতটা না তার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। আমাদের প্রতিপক্ষরা প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু আমরা নামতেই পারছি না, বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। এতে আমরা নির্বাচনে পিছিয়ে পড়বো। এনিয়ে আমরা যথেষ্ট বিব্রত। তাই যত তাড়াতাড়ি জোটের আসন নিয়ে বিএনপি সিদ্ধান্ত জানাবে ততই আমাদের জন্য যেমন তেমনি বিএনপির জন্যও কিন্তু বিষয়টি মঙ্গলজনক।

সমমনা দলের নেতাদের ভাষ্য, বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বসেছিলেন। ওই সময় নির্বাচনে কীভাবে অংশগ্রহণ করবে এবং আসনের বিষয়ে বিএনপির নেতাদের কাছে জানতে চান তারা। বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কিছু স্পষ্ট করা হয়নি। যদিও গণতন্ত্র মঞ্চ তাদের ৪৮ জনের সম্ভাব্য একটি তালিকা দিয়েছিল। সর্বশেষ তারা মঞ্চের ৬ দলের ছয় শীর্ষ নেতার আসনের বিষয়ে জানতে চাইলে তাও পরিষ্কার করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এখনও সমঝোতা হয়নি। আমাদের মধ্যে ‘বার্গেইনিং’ চলছে। সর্বশেষ চারদিন আগেও আমরা বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছি। কিন্তু কোনো সমাধান আসেনি। 

তিনি বলেন, আমার আসন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা) সহ আমরা কমপক্ষে ২০/২২টি আসনের জন্য বিএনপির সঙ্গে ‘বার্গেইনিং’ করে যাচ্ছি।

দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের এক প্রশ্নের জবাবে জুনায়েদ হাবিব বলেন, সারাদেশে ইতোমধ্যেই আমরা মোট ১৫৪টি আসনে আমাদের দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছি। এসব আসনে আমরা এককভাবে নির্বাচন করার সক্ষমতা-জনবল নেতাকর্মী আমাদের আছে। আমরা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করতে চাই বলে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, বিএনপি আলোচনা করতে চায় না। তারা এখন পর্যালোচনা করছে। আমরা এ বিষয়ে বিক্ষুব্ধ।

সূত্র জানায়, আন্দোলন সঙ্গী নেতাদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ), গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম (কিশোরগঞ্জ-৫), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব (লক্ষ্মীপুর-৪) আসনে নির্বাচন করতে চান। এসব আসনে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক (ঢাকা-৮) এবং ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু (জামালপুর-৫) আসনে নির্বাচন করতে চান। এই দুটি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। এদিকে, কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর উপজেলা) আসনে নির্বাচনের জন্য অনেক আগে থেকেই ভোটের মাঠে জনসংযোগ চালিয়ে আসছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা।

এ ছাড়া সমমনা দল ও জোটদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার পিরোজপুর-১, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক চট্টগ্রাম-১৪ এবং মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ কুমিল্লা-৭, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা-১৭, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ), গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর পটুয়াখালী-৩, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান ঠাকুরগাঁও-২, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের জন্য ঢাকা-১৩, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান।

এদিকে, রাজধানী ঢাকার ১৫টি আসনের মধ্যে ৯টিতে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ৬টি আসন এখনও ফাঁকা রেখেছে। এ ছাড়াও নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা জোটের ইসলামী দলগুলোর ১২ নেতা প্রার্থী হতে পারেন। এর মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রীন সিগন্যালও দেয়া হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সঙ্গেও বিএনপির আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার গুঞ্জন রয়েছে। তবে এ নিয়ে দুই দলের পক্ষ থেকে আসন নিয়ে আলোচনার বিষয় স্বীকার করা হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ