মির্জা ফখরুলের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান অর্ধশত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৩৯ PM , আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৭ PM
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে দলটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন অর্ধশত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক যোগদান অনুষ্ঠানে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির সদস্য হন। এ সময় মির্জা ফখরুল বিএনপিতে তাদের স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানান। বিএনপিতে যোগদানকারীদের নেতৃত্ব দেন সোমনাথ দে, কপিল কৃষ্ণ মন্ডল, সমেন সাহা প্রমুখ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনরা। নতুন যোগদানকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন আমরা আমাদের মধ্যে আরও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলি।
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে কথাটা আমরা বলি সেটা হচ্ছে, শতফুল ফুটবে… সেই শতফুল থেকে একটা শ্লোগান সেই বাগান থেকে বেরিয়ে আসবে সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ। অনেক ভুল-বুঝাবুঝি হয়েছে, অনেক রক্তপাত হয়েছে বাংলাদেশে, অনেক বিভাজন হয়েছে…. আমরা এখন এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনৈতিক কাঠামো সবকিছুকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আমরা সেই ধ্বংসস্তপ থেকে একটা নতুন বাংলাদেশ দেশ তৈরি করতে চাই যা এই কথা আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ’২৪ এর ৫ আগস্ট রাতেই একটা ছোট্ট একটা বাণীর মধ্য দিয়ে বলেছিলেন যে আমরা এই দেশে আর প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা চাই না, আমরা ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষকে জয় করি একটা ঐক্যের রাজনীতি সৃষ্টি করতে চাই.. সেটাই হচ্ছে মূল কথা।
তিনি বলেন, আজকে অনেকে অনেক কথা বলবে, স্বার্থের কথা বলবে এবং বলছেও। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কথা বলছি। এখন আমাদের দর কষাকষি করছি, এখন আমাদের স্বার্থগুলো সামনে এসে গেছে…কোনটাকে মেনে নেব, কোনটাকে মেনে নেব না.. তাই না। কেউ বলছি যে পিআর করতে হবে, কেউ বলছে পিআর করা যাবে না… আমরা ওই সমস্ত পথে যেতে চাই না। আমরা ১৯৭১ সালে যে বাংলাদেশ আমরা তৈরি করেছিলাম, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম এবং ‘২৪ সালে ৩৬ জুলাই আমরা অভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশের আর্ভিভূত হলাম সেই বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। ‘২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, এই যে ভ্রান্ত ধারণা বিশেষ করে বাইরের কিছু কিছু মানুষ, কিছু দেশ, কিছু মিডিয়া তারা বাংলাদেশে ব্যাপারে একটা মিথ্যা প্রচারণা করার চেষ্টা করেছে। আমরা এই ধারণাটা পাল্টে দিতে চাই। আপনারা দেখেছেন যে দুর্গা পূজায় এবং তার আগের দুর্গা পূজাও আমাদের বিএনপির নেতা-কর্মীরা আপনাদের প্রতিটি মন্ডপে পূজা মন্ডপে আপনাদের কাছে গেছে এবং আপনাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার নিজের এলাকা ঠাকুরগাঁ এলাকায় সেথানে ২৬৫টি পূজা মন্ডপ আছে সেখানে তাদের সঙ্গে আমাদের নেতা-কর্মীরা আমরা পূজার যে আনন্দ সেটাকে ভাগ করে নিয়েছি।
কিছু মানুষ আমাদের ঐক্যে ভাঙ্গন ধরাতে চায় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের সময়টা অনেক কঠিন। কিছু মানুষ চেষ্টা করছে আমাদের যে একাত্তর সালের যুদ্ধে আমরা যে দেশ তৈরি করেছি, যে ঐক্য সৃষ্টি করেছি, ‘২৪ এর বিপ্লবে যে ঐক্য সৃষ্টি করেছি সে ঐক্যের মধ্যে ভাঙ্গন ধরাতে চায়। বিভিন্ন রকম কথা বলে, বিভিন্ন রকম কর্ম করে ভাঙ্গাতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত সচেতনভাবে এই ভাঙ্গনের বিপক্ষে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ এক, আমরা যারা এই ভূখন্ডে বাস করি আমরা সবাই এক…হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং চাকমা, মারমা, উরাং সবাই আমরা একই সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমাদের প্রতিটি সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা যেন লেখাপড়ার সুযোগ পায়, স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ পায়, কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়… সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব ২০২২ সালে যে ৩১ দফা দিয়েছেন সেই ৩১ দফায় খুব পরিষ্কার করে উল্লেখ করা আছে।
ফখরুল বলেন, আমরা সেই নেতা দেখতে চাই না যে নেতা আওয়ামী লীগের মতো পালিয়ে যাবে। আমরা সেই নেতাকে চাই, সে যে কোন মুহুর্তে সবাইকে নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেবে…এই বিষয়গুলো আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে চাই।
তিনি বলেন, কপিল-সোমনাথ বাবু বলেছেন, তারা কয়েক সাপ্তাহের মধ্যে একটা বৃহত্তর সমাবেশ করবেন যেখানে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন, কথা বলবেন। আমরা আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে চাই, যে আজ থেকে এই মুহুর্ত থেকে আপনাদের সমস্ত সুখ-দূঃখের ব্যাপারে সজাগ-সচেতন থাকব, আপনাদের পাশে থাকব।
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাহিনীকে বলতে চাই, আমরা দেখতে চাই না যে, আপনারা আমাদের এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের কোনরকম বিপদের মধ্যে ফেলেছেন, কোনোরকম সমস্যা সৃষ্টি তৈরি করেছেন…এটা আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমার কাছে অনেক খবর আছে। দয়া করে এই সম্প্রদায়ের মানুষদের কেউই কখনো হয়রানি করবেন না কোনভাবে।
তিনি বলেন, আপনারা আমাদের ভাই, আমরা আপনাদের পাশে আছি এবং সমস্ত শক্তি নিয়ে আমরা আপনাদের পাশে থাকবো।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, রমেন বাবু বক্তব্য রাখেন।