কবির ৯৩তম জন্মদিন আজ

পঞ্চাশের দশকে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হন শামসুর রাহমান

কবি শামসুর রাহমান
কবি শামসুর রাহমান  © ফাইল ছবি

কবি শামসুর রাহমানকে এদেশের আধুনিক কবিদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে মনে করা হয়। নাগরিক জীবনের নানা মাত্রিকতা কবিতায় তুলে ধরতেন বলে শামসুর রাহমানকে বলা হয় নাগরিক কবিও। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা পঞ্চাশের দশকে তিনি আধুনিক কবি হিসেবে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হন।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) কবি শামসুর রাহমানের ৯৩তম জন্মদিন। নাগরিক কবি হিসেবে তার সমধিক পরিচিতি ঘটলেও নিসর্গও উঠে এসেছে তার কবিতায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি মজলুম আদিব ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায় কবিতা লিখতেন।

পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রামে হলেও পুরনো ঢাকার মাহুতটুলিতে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন কবি শামসুর রাহমান। তার ডাক নাম বাচ্চু। বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। ১৩ ভাই-বোনের মধ্যে কবি ছিলেন চতুর্থ।

২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার ইচ্ছানুযায়ী ঢাকাস্থ বনানী কবরস্থানে নিজ মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

তিনি ছিলেন একাধারে কবি ও সাংবাদিক। ১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজে সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন। এরপর আবার ফিরে আসেন দৈনিক মর্নিং নিউজে। সেখানে তিনি ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৪ সালের নভেম্বর মাসে দৈনিক পাকিস্তানের (স্বাধীনতা উত্তর দৈনিক বাংলা) সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন এবং ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি একইসঙ্গে দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। ১৯৪৯ সালে সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায় তার কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয়।

সিন্দবাদ, চক্ষুষ্মান, লিপিকার, নেপথ্যে, জনান্তিকে, মৈনাক এসব ছদ্মনামে তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয় লিখতেন। ১৯৫৫ সালের ৮ জুলাই জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন শামসুর রাহমান। সুমায়রা আমিন, ফাইয়াজ রাহমান, ফাওজিয়া সাবেরিন, ওয়াহিদুর রাহমান মতিন ও শেবা রাহমান নামে কবির তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারাগারে তখন তাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন অসাধারণ কবিতা ‘টেলেমেকাস’। ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্প্রচার নিষিদ্ধ করলে শামসুর রাহমান তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তানে কর্মরত থাকা অবস্থায় পেশাগত অনিশ্চয়তার তোয়াক্কা না করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।

১৯৬৮ সালের দিকে পাকিস্তানের সব ভাষার জন্য আইয়ুব খান অভিন্ন রোমান হরফ চালু করার প্রস্তাব দিলে ৪১ জন কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে শামসুর রাহমানও প্রতিবাদ করেন। তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে লেখেন মর্মস্পর্শী কবিতা ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’।

১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি গুলিস্তানে মিছিলের সামনে একটি লাঠিতে শহীদ আসাদের রক্তাক্ত শার্ট দিয়ে বানানো পতাকা দেখে মানসিকভাবে মারাত্মক আলোড়িত হয়ে তিনি লেখেন ‘আসাদের শার্ট’ কবিতাটি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবার নিয়ে চলে যান নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে।

এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি লেখেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনামথিত কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনত ‘। ১৯৮৭ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয় শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence