আজ ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী

কীভাবে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ হয়ে উঠলেন দক্ষিণ এশিয়ার সুরসম্রাট?

সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ
সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ  © সংগৃহীত

আজ ৬ সেপ্টেম্বর, দক্ষিণ এশিয়ার কিংবদন্তি সংগীত সাধক ও সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৬২ সালের ৮ অক্টোবর বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্ম তাঁর। ১৯৭২ সালের এই দিনে ভারতের মধ্যপ্রদেশের মাইহারে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিশ্ব সংগীতাঙ্গনের এই অনন্য পুরুষ।

সংগীতের প্রতি টান ছিল শিশুকাল থেকেই। পিতা সদু খাঁ ছিলেন বিখ্যাত সেতার বাদক, যার হাত ধরেই ছোট্ট আলাউদ্দিনের সংগীতজগতের সঙ্গে প্রথম পরিচয়। মাত্র বারো বছর বয়সে সংগীত সাধনার জন্য ঘর ছাড়েন। যাত্রাদল ঘুরে পৌঁছান কলকাতায়। সেখানেই আশ্রয় পান ডা. কেদার নাথের বাড়িতে এবং শুরু হয় ওস্তাদ নুলো গোপালের কাছে প্রাতিষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষা।

কিন্তু সহজ ছিল না তাঁর পথ। গুরুপ্রাপ্তি ও জীবিকার টানে তিনি কাজ করেন কলকাতার মিনার্ভা থিয়েটারে, বেতন ছিল মাত্র বারো টাকা। শিখেছেন দেশি-বিদেশি প্রায় সব বাদ্যযন্ত্র। পরে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় সরোদ বাদক আহমদ আলী খাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এরপর রামপুরে ওস্তাদ ওয়াজীর খাঁর কাছ থেকে আয়ত্ত করেন দ্রুপদ, ধামার ও রাগ সংগীতের সূক্ষ্ম শৈলী। দীর্ঘ সাধনায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নিজস্ব ঘরানা—আলাউদ্দিন ঘরানা।

পরে তিনি যোগ দেন ভারতের মাইহার রাজদরবারে দরবারি সংগীতজ্ঞ হিসেবে। গড়ে তোলেন সংগীতচর্চার আশ্রয়স্থল ‘মদিনা ভবন’। বিশ্ব সংগীতজগতে প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করেন ‘সুরসম্রাট’ হিসেবে। ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশে সংগীত পরিবেশন করেন। ১৯৩৬ সালে হজ পালন করেন।

আরও পড়ুন: মবে জড়িতদের ‘ক্রসফায়ারের’ দাবি ডাকসুর ভিপি প্রার্থী ইমির, প্রতিবাদে যা বললেন কাদের

জীবনভর সাধনায় সৃষ্টি করেছেন বহু নতুন রাগ—হেমন্ত, প্রভাতকেলী, বসন্ত বেহাগ, শেখ বাহার, হেম বেহাগ প্রভৃতি। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ভারত সরকারের পদ্মভূষণ ও পদ্মবিভূষণ, বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম, ঢাকা ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট সহ বহু পদক ও স্বীকৃতি।

তিনি ছিলেন বিনয়ী, পরোপকারী ও শিকড়-সচেতন এক মহাসাধক। নিজের গ্রামে পুকুর ও মসজিদ নির্মাণ, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগসহ নানা মানবিক কাজের মধ্য দিয়েও তিনি নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন।

অন্তর থেকেই সংগীতকে ভালোবেসে যিনি নিজ সাধনার মাধ্যমে হয়ে উঠেছিলেন এক জীবন্ত প্রতিষ্ঠান—আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধায় নত হয়ে স্মরণ করছে বাংলা ও বিশ্বসংগীত জগৎ।


সর্বশেষ সংবাদ