কাল ৭৭ বছরে পা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

দেশের টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। এই দায়িত্বে আছেন দীর্ঘ সময় ধরে। ১৯৮১ সাল থেকে দেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন। ৭৬ বছরের জীবনে অনেক সংকট, চড়াই-উৎরাই পেরিয়েছেন। দেখেছেন সাফল্যের চূড়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও লম্বা সময় রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে আগামীকাল (২৮ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার ৭৭ বছরে পা দিচ্ছেন তিনি। আগামীকাল তাঁর জন্মদিন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর অনুপস্থিতিতে ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলা তুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ তিনি। গ্রামীণ পরিবেশে কাটে তাঁর শৈশব। ছোট থেকেই তিনি বড় হয়েছেন রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। 

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি সপরিবার ঢাকায় চলে আসেন। এরপর ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন কাটে।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধুকন্যার রাজনীতিতে পদচারণ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবার নিহত হন। এ সময় বিদেশে ছিলেন শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।

বঙ্গবন্ধু সপরিবার নিহত হওয়ার পর প্রবাসে শেখ হাসিনার আরেক সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। বিদেশে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে তিনি এই পদে আছেন। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসায় দলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে বলে থাকেন ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ মানবী।

দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে সেদিন লাখো জনতা বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাঁকে স্বাগত জানায়। উপস্থিত জনতার অভিবাদনের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হতে আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আজকের জনসভায় লাখো লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।’

আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ২১ বছর পর তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা এখন চতুর্থ দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। দেশের ইতিহাসে এমন রেকর্ড আর কারও নেই।

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ঐ বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন প্রথমবারের মত তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৫শ’ নেতাকর্মী আহত হন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

The Daily Campus এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন