ছিলেন অঙ্কের শিক্ষক, এখন বিশ্বসেরা কুস্তিগীর হওয়ার দৌঁড়ে

অঙ্কের শিক্ষক থেকে কুস্তিগির বনে যাওয়া অংশুল জুবলি
অঙ্কের শিক্ষক থেকে কুস্তিগির বনে যাওয়া অংশুল জুবলি  © আনন্দবাজার

বয়স ২৭ বছর, সুন্দর ছাঁটা দাড়ি। চোখেমুখে আত্মবিশ্বাসের রেখা। নাম অংশুল জুবলি। সবার কাছে তিনি পরিচিত নন। তবে খেলার দুনিয়া চিনে ফেলেছে ভারতের উত্তরাখণ্ডের এই যুবককে। অঙ্কের শিক্ষক থেকে কুস্তিগির, পরে আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপে চুক্তি। অংশুল জুবলির জন্ম উত্তরাখণ্ডের উত্তর কাশীর ভাটওয়ারি গ্রামে।

বাবা ছিলেন বিএসএফ জওয়ান। তার কর্মসূত্রে দেশের নানা প্রান্তে ছোটবেলা কেটেছে। শেষে থিতু হন দেহরাদুনে। অংশুল এখন ইউএফসির সঙ্গে।  মিক্সড মার্শাল আর্ট বা এমএমএ যোদ্ধা অংশুল  ইউএফসির সঙ্গে চুক্তি করতে কয়েকটা ধাপ দূরে। ইউএফসি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিক্সড মার্শাল আর্টের প্রতিযোগিতা।

খেলার দুনিয়ায় আসার কথা অংশুলের কল্পনাতেও ছিল না। বাবা সেনাবাহিনীতে থাকায় ছেলেরও ইচ্ছে ছিল সেনা হয়ে দেশের সেবা করবেন। দিন-রাত তার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অংশুল। কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিসেস বা সিডিএস পরীক্ষায় পাসও করেন। ইন্টারভিউ পার করতে পারেননি।

অংশুল বলছিলেন, জীবনের প্রথম লক্ষ্যই ছিল সেনা হওয়া। নেশা খেলা। শরীরচর্চার সঙ্গে চলত বক্সিং ট্রেনিং। কিন্তু এমএমএ-তে এসে পড়া আচমকাই। প্রথম বার কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিসেসে ব্যর্থ হওয়ার পর শরীরচর্চায় মন দিয়েছিলেন। ভর্তি হন দেহরাদুনের বক্সিং সেন্টারে। প্রশিক্ষণের ১৫ দিনের মধ্যে রিংয়ে লড়াই করেন অংশুল।

তবে এ সবের মধ্যে বয়স বাড়ছিল। হাতখরচের জন্য শুরু করেন গৃহশিক্ষকতার কাজ, অঙ্কের শিক্ষক। এর মধ্যে এমএমএ-এর নেশা জেঁকে বসেছে মাথায়। শারীরিক কসরত, কঠিন প্রশিক্ষণ ডুবে থাকতেন। অবসর সময়ে ইউটিউবে কুস্তিগির এবং বক্সারদের ভিডিও দেখতেন। 

কিন্তু দেহরাদুনে বসে থাকলে হবে না। ভালো ট্রেনিং নিতে হবে। এ কথা ভেবে ২০১৮ সালের এপ্রিলে দিল্লি যান অংশুলের। বড় শহরের বাড়িভাড়া থেকে হাতখরচ জোগাড় করা চাপ হয়ে যায় তাঁর। শুরু করেন টিউশন পড়ানো।  দিল্লির একটি জিমে অংশুলের সঙ্গে আলাপ হয় যাদবের। আট বারের বিজেজে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, এশিয়ার প্রথম দশ যোদ্ধা এবং পার্পল বেল্টধারী তরুণের সঙ্গে পরিচয় জীবনের মোড়় ঘুরিয়ে দেয়।

আরো পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের রোবোসাব প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ব্র্যাকইউ ডুবুরি দল

সেই তরুণকে প্রথম বার দেখে অংশুল ভেবেছিলেন ছোটখাটো চেহারা। চোখে সরু চশমা, ৬০ কেজি ওজনের যুবককে পিষে দেবেন। কিন্তু ভুল ভেঙে যায় রিংয়ে। একের পর এক রাউন্ডে হার মানতে হয় তাঁকে। অংশুল বুঝতে পারেন শারীরিক সক্ষমতা নয়, বিজেজে কৌশলের খেলা।

বিজেজে আসলে আত্মরক্ষার খেলা। ছোট এবং কম শারীরিকভাবে সমর্থ কেউ কীভাবে শক্তিশালী কাউকে প্রতিহত করবেন, তারই খেলা বিজেজে। হারের পর এই উপলব্ধি আরও দৃঢ় হয় অংশুলের। শুরু করেন ট্রেনিং।

অংশুলের সঙ্গে একই স্বপ্ন নিয়ে দিল্লি যান তাঁর এক বন্ধু। কিন্তু পারিবারিক কারণে স্বপ্ন অপূর্ণ রেখে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে। সমস্যায় পড়েন অংশুলও। টাকার অভাবে এক কামরার ঘর ভাড়া নেন। আর্থিক সমস্যা বাড়চিল, সঞ্চয় শূন্য হওয়ার পথে। 

অংশুল জানান, কয়েক জন বন্ধু না থাকলে সময়টা পেরিয়ে আসতেই পারতেন না। বেঙ্গালুরু, মুম্বাই— বড় বড় শহরে ম্যাচ থাকলে পকেটে টাকা গুঁজে দিয়েছেন বন্ধুরাই। বন্ধুদের ওই ঋণ কীভাবে মেটাব জানি না। হয়তো মেটাতে পারব না। যদি ইউএফসিতে খেলার সুযোগ হয়ে যায়।

টুর্নামেন্ট জিতেছেন একের পর এক। বাড়িয়েছেন র‌্যাঙ্ক। কঠিন পরিশ্রম, বড় কোনও প্রশিক্ষকের কাছে প্রশিক্ষণ ছাড়াই বক্সিং স্কিলকে উন্নত করেছেন। অংশুলের বিশ্বাস, চার বছরের মধ্যে তিনি ইউএফসি চ্যাম্পিয়ন হবেন। সূত্র: আনন্দবাজার।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence