যেভাবে শেষ হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ  © সংগৃহীত

সময় যত গড়াচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তত ভয়াবহ হচ্ছে। ইতোমধ্যে গোটা বিশ্বে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জেগেছে এই রক্তক্ষয়ী লড়াই কখন, কীভাবে শেষ হবে। বিশেষজ্ঞরা এ প্রশ্নের ব্যাখা দিয়েছেন। বিবিসিও এ সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পররাষ্ট্র নীতি’ বিভাগের অধ্যাপক পল পোস্ট সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিকের বিখ্যাত সাংবাদিক ডেরেব থম্পসনকে এ সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকার দেন।

আরও পড়ুন: পুতিনের মাথার দাম সাড়ে ৮ কোটি টাকা!

এতে চলমান যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাপ্তি নিয়ে পাঁচটি দৃশ্যপট অঙ্কন করেছেন পল। তিনি বলছেন, ইউক্রেন থেকে রাশিয়া সৈন্য প্রত্যাহার করলে, ইউক্রেন নিজেদের অবস্থান পাল্টালে অথবা যুদ্ধে জয়ী হলে, নতুন রুশ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হলে এবং এর জেরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ গড়ালে একপক্ষের জয় হলে এর সমাপ্তি ঘটতে পারে।

অধ্যাপক পল বলেন, মূলত বর্তমান ইউক্রেন সরকারের পতন ঘটানোয় রাশিয়ার লক্ষ্য। তাদের উদ্দেশ্য পূরণ হলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে বেলারুশের মতো ইউক্রেনীয় সরকার হতে হবে। স্টেট ডেথ' হলে সমগ্র ইউক্রেন রাশিয়ার দখলে আসবে। এরই মধ্যে ক্রিমিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তারা। ফলে যুদ্ধ শেষ হবে।

অন্যদিকে এ যুদ্ধ কীভাবে শেষ হতে পারে তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এতে পাঁচটি দৃশ্যকল্প বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ
বিবিসি বলছে, রাশিয়া বিধ্বংসী হামলার সঙ্গে তার সামরিক অভিযান জোরদার করেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। কিয়েভের পতন হলে যদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিহত বা পালিয়ে যায় তাহলে রাশিয়া মস্কোপন্থী পুতুল শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। এতে দ্রুত শেষ হতে পারে এই যুদ্ধ। তবে এটি একটি অস্থিতিশীল ফলাফল তৈরি করবে। এটি ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

দীর্ঘ যুদ্ধ
এটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে গড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। দেখা গেল রাশিয়ার সেনারা দমে গেছে, তাদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে, রসদ সরবরাহ কমে গেছে বা নেতৃত্বে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার সেনাদের কিয়েভের মতো শহর সুরক্ষিত করতে আরও বেশি সময় লেগে যাবে। কেননা, সেখানে রাস্তায় রাস্তায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে। এ যুদ্ধ ১৯৯০ সালে চেচেনিয়ার রাজধানী গ্রোজনি দখলে রাশিয়ার দীর্ঘ ও নৃশংস সংগ্রামের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: নম্বরপত্র-উত্তরপত্রসহ গোপনীয় নথি গায়েব, ৮ দিন পর তদন্ত কমিটি

যদিও রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের এ শহরে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে তবে তা ধরে রাখতে অনবরত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। হয়তো ইউক্রেনের মতো বড় দেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাশিয়া এত সেনা পাঠাতে পারবে না। দেখা গেল ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী ধীরে ধীরে কার্যকরী বিদ্রোহী গ্রুপ হয়ে দাঁড়িয়েছে যাদের সমর্থন দিচ্ছে স্থানীয় জনগণ। পশ্চিমারাও অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিতে থাকল। এর পর, হয়তো অনেক বছর পর মস্কোতে নতুন নেতা এলেন। এর পর রাশিয়ার সেনারা নত হয়ে ইউক্রেন ছাড়ল। যেভাবে তাদের পূর্বসূরীরা প্রায় এক দশক লড়াই শেষে ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিয়েছিল।

ইউরোপিয়ান যুদ্ধ
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ মোল্দোভা এবং জর্জিয়ায় সেনা পাঠাতে পারে রাশিয়া। কারণ এই দেশগুলো ন্যাটোর অংশ নয়। পুতিন ঘোষণা করতে পারেন যে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করা একটি পশ্চিমা আগ্রাসনের অংশ। এতে ন্যাটোভুক্ত ইউরোপিয়ান দেশে হামলা চালানোর ঝুঁকি নিতে পারেন পুতিন। এতে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ বেধে যেতে পারে।

কূটনৈতিক সমাধান
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ করতে এরই মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। যদিও এতে কোনো ফল আসেনি। পুতিন অন্তত আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা মেনে নিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। যদি যুদ্ধ পুতিনের জন্য খারাপ হয় তাহলে এটিকে নেতৃত্বের জন্য বড় হুমকির মনে করতে পারে। আর এতে করে তিনি যুদ্ধ থামিয়ে দিতে পারেন।

পুতিনকে উৎখাত
এটি অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। তবে বিশ্ব পরিবর্তন হয়েছে। যদি এই যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য ক্ষতির হয় তাহলে রুশ নাগরিকদের অভ্যুত্থান দেখা যেতে পারে। যারা পুতিনের কাছ থেকে এত দিন উপকৃত হয়েছে তারা যদি মনে করে যে তিনি তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবেন না, তাহলে এই ধরনের পরিণতি হতেই পারে।

আরও পড়ুন: ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রুশ বাহিনীর দখলে

লন্ডনের কিংস কলেজের যুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক স্যার লরেন্স ফ্রিডম্যান চলতি সপ্তাহে লিখেছেন, কিয়েভের মতো মস্কোতেও এখন ক্ষমতা বদলের সম্ভাবনা রয়েছে।

কেন তিনি এমন কথা বললেন। সম্ভবত, পুতিন একটি বিপর্যয়কর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। দেখা গেল যুদ্ধে হাজার হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো ক্ষতি করতে শুরু করেছে রাশিয়ার। পুতিন ধীরে ধীরে জনসমর্থন হারাতে শুরু করেছেন। যা একটি জনপ্রিয় বিদ্রোহের জন্ম দিতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ