শিক্ষার জন্য তালেবান এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে আফগান মেয়েরা

বাধ্য হয়ে শিক্ষার জন্য এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে মেয়েরা
বাধ্য হয়ে শিক্ষার জন্য এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে মেয়েরা  © সংগৃহীত

চলতি মাসে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ‍শুরুর পর থেকে তালেবান শাসনের সেই অন্ধকার যুগ যেন আবার ফিরে আসারই আলামত দেখা যাচ্ছে। হামলা-সহিংসতা বেড়েছে। উপরন্তু নতুন করে তালেবানের কোপে পড়ছে নারী শিক্ষা। বাধ্য হয়ে শিক্ষার জন্য এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে মেয়েরা।

আফগানিস্তানের তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে গ্রামের মুরব্বিদের সঙ্গে বৈঠকের পর মসজিদে ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে মেয়েদের স্কুল। এ নিয়ে তালেবান নেতাদের কাছে আবেদন, নিবেদন বা তাদের সঙ্গে বিতর্ক সবই অনর্থক।

আফগানিস্তানের উত্তরের জাউজান প্রদেশের রাজধানী শেবারগানের দক্ষিণের তালেবান নিয়ন্ত্রিত প্রত্যন্ত দুই জেলায় তিন বছর আগেই ১২ বছরের বেশি বয়সের মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

রাতারাতি ছয় হাজারের বেশি মেয়েকে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়। পুরুষ শিক্ষকদের বিনা নোটিসে চাকরিচ্যুত করা হয়। শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করার ব্যাখ্যায় ‍তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা কী করছেন? তারা মেয়েদের পড়াচ্ছেন, যেটা ইসলাম পরিপন্থি।

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, এখন পুরো আফগানিস্তান জুড়েই একই ধরনের নির্দেশ জারি হচ্ছে। বিশেষ করে তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে। দুই একটি জায়গা ছাড়া ওইসব এলাকায় ১২ বছরের বেশি বয়সের মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার আর সুযোগ নেই।

কিশোরীদের জন্য তালেবানের বার্তা হচ্ছে: কিশোরীদের উচিত বাড়িতে তাদের মায়েদের ঘরের কাজে সাহায্য করা।

তালেবানের কারণে দারজাব জেলার ১২ বছরের ফরিদাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। ১৪ বছর বয়সে সে শরণার্থী হয়ে শেবারগান যায়। এখন তার বয়স ১৬ বছর। ফরিদা বলেন, ‘দুই বছর আমি স্কুলে যেতে পারিনি। আমার বোন আমাকে জানিয়েছে, সেখানে মেয়েদের জন্য আর কোনও স্কুল নেই। তিনি একজন শিক্ষক। তখন আমি বাড়িতেই থাকতাম এবং মাকে বাড়ির কাজে সাহায্য করতাম।

তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ফরিদার মত অনেক মেয়ে শুধু লেখাপড়ার জন্য শেবারগান শহরে চলে গেছে। তারা সেখানে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছে। শেবারগানের স্কুলগুলোতে এমন অনেক শরণার্থী মেয়েরা এখন লেখাপড়া করছে।

এমন একজন ১৬ বছরের নাবিলা। নাবিলাও দুই বছর আগে মায়ের সঙ্গে দারজাব থেকে শেবারগান চলে যায়। নাবিলা বলেন, আমি আমার পরিবারকে বলেছিলাম: আমি লেখাপড়া করতে চাই, আমি সত্যি লেখাপড়া করতে চাই।

তালেবান কেন মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করতে চায় তার ব্যাখ্যায় এই কিশোরী বলেন, হয়ত তারা মেয়েদের ভয় পায়।

তালেবান একদিকে যেমন নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে। তেমনি আফগানিস্তান জুড়ে মেয়েদের স্কুলে হামলার ঘটনাও বেড়ে গেছে। কয়েকদিন আগে রাজধানী কাবুলে একটি স্কুলে তিনটি বোমা হামলায় বেশ কয়েকজন স্কুলছাত্রী নিহত হয়।

তালেবান অবশ্য হামলার দায় অস্বীকার করেছে। তবে এই হামলার মাধ্যমে অপরাধীরা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে: মেয়েদের শিক্ষার বিষয়টি তারা সহ্য করবে না।

এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান সরকারের সামরিক বাহিনী তালেবান মোকাবেলায় দ্রুতই শক্তি সঞ্চয় করে উঠতে না পারলে দেশের সর্বত্র আফগানদের জীবন কি দাঁড়াতে পারে তা এখনই আঁচ করা যাচ্ছে।

প্রতিদিনই আসছে জঙ্গি তৎপরতার দুঃসংবাদ। একের পর এক ঘাঁটি বেদখল হচ্ছে, জেলা দখল হয়ে যাচ্ছে, পুলিশ ফাঁড়ি কব্জা হচ্ছে, সরকারি কর্মী, সাংবাদিকরা খুন হচ্ছে। গত ১ মে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকেই তালেবান জঙ্গিরা দেশের প্রায় প্রতিটি অংশেই এলাকার দখল নিয়েছে।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence