ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সবুজ সংকেত

ট্রাম্প ও জেলেনস্কি
ট্রাম্প ও জেলেনস্কি  © সংগৃহীত

ইউক্রেনকে দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহে হোয়াইট হাউসকে সবুজ সংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন। প্রতিরক্ষা দপ্তর মনে করছে, এই সরবরাহ যুক্তরাষ্ট্রের টমাহক মজুতের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে। বিষয়টি সম্পর্কে জানাশোনা আছে এমন তিন মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে গত অক্টোবর মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেনকে এই ক্ষেপণাস্ত্র দিতে চান না। কারণ হিসেবে তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য যে জিনিসগুলো প্রয়োজন, সেগুলো আমরা কাউকে দিতে চাই না।’

পেন্টাগনের জয়েন্ট স্টাফ তাদের মূল্যায়ন হোয়াইট হাউসকে অক্টোবর মাসেই জানিয়েছিল ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকের ঠিক আগে। জেলেনস্কি রাশিয়ার অভ্যন্তরে আরও কার্যকরভাবে তেল ও জ্বালানি স্থাপনাগুলোয় আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য জোরালোভাবে অনুরোধ করে আসছিলেন। টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার।

যুক্তরাষ্ট্রের এই মূল্যায়ন ইউরোপীয় মিত্রদের উৎসাহিত করেছে। দুই ইউরোপীয় কর্মকর্তা বলেন, এখন ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ না করার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অজুহাত দেখানোর মতো তেমন আর কিছু নেই বলে তাঁরা মনে করেন। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কয়েক দিন আগে ট্রাম্প নিজেও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘অনেক টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা তারা ইউক্রেনকে দিতে পারে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিল, এই সিদ্ধান্তের ঠিক এক দিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। পুতিন ট্রাম্পকে জানান, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গের মতো বড় রুশ শহরগুলোয় আঘাত হানতে পারে। এটি যুদ্ধক্ষেত্রে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে না, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কের ক্ষতি করবে। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি।

তবে সূত্রগুলো সিএনএনকে আগেই জানিয়েছিল, ট্রাম্প ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি পুরোপুরি বাতিল করেননি। যদি ট্রাম্প নির্দেশ দেন, তবে দ্রুত ইউক্রেনকে সেগুলো সরবরাহ করার জন্য প্রশাসন পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছে।

সম্প্রতি শান্তি আলোচনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে পুতিনের অনীহায় ট্রাম্প এতটাই হতাশ হয়েছেন যে তিনি গত সপ্তাহে রুশ তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করার জন্য পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে যে বৈঠক হওয়ার কথা, তা আপাতত বাতিল করেছেন।

যদিও পেন্টাগনের মজুত নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই, তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এখনো ভাবছেন, ইউক্রেন কীভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নেবে ও সেগুলো মোতায়েন করবে। সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, ইউক্রেন যাতে কার্যকরভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, সে জন্য এখনো বেশ কিছু প্রায়োগিক বিষয় সমাধান করা দরকার।

যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে, তবে একটি বড় প্রশ্ন থেকে যায়, ইউক্রেন সেগুলো কীভাবে উৎক্ষেপণ করবে। সাধারণত টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধজাহাজ বা সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু ইউক্রেনের নৌবাহিনী এখন খুবই দুর্বল। তাই এসব ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভবত ভূমি থেকে উৎক্ষেপণ করতে হবে। অবশ্য মার্কিন মেরিন কোর ও সেনাবাহিনী ভূমি থেকে উৎক্ষেপণব্যবস্থা (লাঞ্চার) তৈরি করেছে, যা ইউক্রেনকে সরবরাহ করা যেতে পারে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যদি উৎক্ষেপণব্যবস্থা সরবরাহ করতে না-ও চায়, ইউরোপীয় কর্মকর্তারা মনে করেন, ইউক্রেনই একটি ব্যবস্থা তৈরি করে নিতে পারবে। একজন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, ইউক্রেনের প্রকৌশলীরা যুক্তরাজ্যের দেওয়া ‘স্টর্ম শ্যাডো’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের জন্য একটি প্রযুক্তিগত সমাধান বের করতে সক্ষম হয়েছে। স্টর্ম শ্যাডো মূলত আধুনিক ন্যাটো যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়ার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেন এটিকে তাদের পুরোনো সোভিয়েত আমলের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়ার ব্যবস্থা করতে পেরেছে।

সপ্তাহের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ দূরপাল্লার সক্ষমতা বাড়ানোর আশা করছে ইউক্রেন, যাতে দেশটির অনুকূলে ‘ন্যায্য শর্তে’ যুদ্ধের ইতি টানা যায়।

জেলেনস্কি লেখেন, ‘ইউক্রেনের অনুকূলে ন্যায্য শর্তে এই যুদ্ধ শেষ করতে বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে আমাদের সক্ষমতার মধ্যে কার্যত সমন্বয় ঘটতে যাচ্ছে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘দূরপাল্লার হামলার সক্ষমতা বাড়ানোসহ বছরের শেষ নাগাদ দূরপাল্লার হামলার সব লক্ষ্য অর্জনে আমাদের পুরোপুরি মনোযোগ দিতে হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ