ভিসাধারীদের জন্য বড় পরিবর্তন আনল যুক্তরাষ্ট্র, যেসব জানা জরুরি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৬ PM , আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৩:০২ PM
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ভিসা ইন্টারভিউ মওকুফ কর্মসূচি (ড্রপবক্স প্রক্রিয়া) নীতিতে বড় পরিবর্তন ঘোষণা করেছে, যা করোনা মহামারির আগে প্রযোজ্য যোগ্যতার মানদণ্ডে ফিরে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই পরিবর্তন কার্যকর হয়েছে।
এই কর্মসূচির অর্থ হলো, অনেক অ-অভিবাসী ভিসাধারীরা, যারা আগে সাক্ষাৎকার ছাড়াই ভিসার জন্য যোগ্য ছিলেন, এখন থেকে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎকার দিতে হতে পারে।
যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে
এখন থেকে ভিসা নবায়নের জন্য আবেদনকারীদের পূর্ববর্তী ১২ মাসের মধ্যে বৈধ ভিসা থাকতে হবে, যা আগে ছিল ৪৮ মাস পর্যন্ত।
শুধু নির্দিষ্ট ভিসা ক্যাটাগরি যেমন কূটনৈতিক (এ-১, এ-২), সরকারি কর্মকর্তা (জি-১ থেকে জি-৪, ন্যাটো ভিসা) এবং ১২ মাসের মধ্যে একই ক্যাটাগরির ভিসা নবায়নকারীরা সাক্ষাৎকার ছাড়াই ড্রপবক্স সুবিধা পাবেন।
যারা নতুন নিয়মের আওতায় পড়বেন না, তাদের মার্কিন কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে, যা দীর্ঘ প্রসেসিং টাইমের কারণ হতে পারে।
পরিবারভিত্তিক ভিসা (এইচ-৪, এল-২ ইত্যাদি) নবায়নে প্রধান আবেদনকারী এবং নির্ভরশীলদের মধ্যে যোগ্যতার পার্থক্য থাকলে ভ্রমণের বিলম্ব হতে পারে।
এইচ-১বি, বি-১/বি-২ ছাড়াও অন্যান্য ভিসা ক্যাটাগরির জন্য সাক্ষাৎকার মওকুফের সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ ভিসা প্রক্রিয়া ও সাক্ষাৎকারের অপেক্ষা বাড়তে পারে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
মার্কিন সরকার নির্দিষ্ট অ-অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীদের জন্য ইন্টারভিউ মওকুফ কর্মসূচির (ড্রপবক্স প্রক্রিয়া) মাধ্যমে সাক্ষাৎকার ছাড়াই তাদের ভিসা নবায়নের অনুমতি দিয়েছিল। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল ভিসা নবায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত করা এবং মার্কিন কনস্যুলেটে সরাসরি সাক্ষাৎকারের সংখ্যা কমানো। ৪৮ মাসের যোগ্যতার সময়সীমার মাধ্যমে আরও বেশি আবেদনকারী সাক্ষাৎকার ছাড়াই তাদের ভিসা নবায়ন করতে পারতেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাইডেন প্রশাসন কর্মসূচিটি সম্প্রসারণ করেছিল। কনস্যুলার কর্মকর্তাদের প্রথমবারের মতো এইচ-২ ভিসার আবেদনকারীদের (অস্থায়ী কৃষি ও অ-কৃষি কর্মী) জন্য ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার মওকুফের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
অন্যান্য অ-অভিবাসী ভিসার আবেদনকারীরাও যোগ্য ছিলেন, যদি তারা আগে কোনো অ-অভিবাসী ভিসা পেয়ে থাকেন (শুধু বি ভিসা থাকলে এটি প্রযোজ্য নয়) বা যদি তারা তাদের সর্বশেষ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪৮ মাসের মধ্যে আবেদন করতেন।
মার্কিন ভিসাধারীদের জন্য কী পরিবর্তন
ট্রাম্প প্রশাসন ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ড্রপবক্স প্রক্রিয়ার যোগ্যতার মানদণ্ড মহামারির আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো, ভিসা নবায়নকারী আবেদনকারীদের এখন সাক্ষাৎকার মওকুফের জন্য পূর্ববর্তী ১২ মাসের মধ্যে বৈধ ভিসা থাকতে হবে, যা আগে কোভিড-১৯ মহামারির সময় ৪৮ মাস পর্যন্ত ছিল।
এ ছাড়া কেবল নির্দিষ্ট ভিসা ক্যাটাগরিগুলো যেমন কূটনৈতিক (এ-১, এ-২), সরকারি কর্মকর্তা (জি-১ থেকে জি-৪, ন্যাটো ভিসা) এবং আগের ভিসার একই ক্যাটাগরির জন্য ১২ মাসের মধ্যে নবায়নকারীরা—এই সুবিধার জন্য যোগ্য হবেন। এই পরিবর্তনের ফলে আবেদনকারীরা এখন ভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসার জন্য ড্রপবক্স ব্যবহার করতে পারবেন না।
বিশ্বের বিভিন্ন মার্কিন দূতাবাস স্বীকার করেছে যে এই পরিবর্তন ‘কিছু ভিসার অপেক্ষার সময় দীর্ঘ করতে পারে’ এবং যারা নতুন নিয়মের আওতায় পড়ছেন না, তাদের এখন মার্কিন কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে, যা প্রক্রিয়ার দেরি করতে পারে।
পারিবারিক ভিত্তিক ভিসাধারীদের ওপর প্রভাব কী হবে?
এইচ-১বি (এইচ-৪), এল-১ (এল-২) এবং অন্যান্য অ-অভিবাসী কর্মসংস্থান ভিসাধারীদের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদেরও সাক্ষাৎকার মওকুফের জন্য নতুন ১২ মাসের নবায়ন সময়সীমা পূরণ করতে হবে। পূর্বে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪৮ মাসের মধ্যে হলে তারা সাক্ষাৎকার ছাড়াই ড্রপবক্স প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারতেন।
এই পরিবর্তন একসঙ্গে ভ্রমণকারী পরিবারগুলোর জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, মূল আবেদনকারী এবং নির্ভরশীলদের যোগ্যতার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকলে দেরি হতে পারে। যদি কোনো নির্ভরশীল ব্যক্তি ১২ মাসের নিয়ম পূরণ না করতে পারে। তবে তাদের ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে হতে পারে, যা ভ্রমণের আরও বিলম্ব সৃষ্টি করতে পারে।
এ ছাড়া যারা আগে ভিসা প্রত্যাখ্যান বা প্রশাসনিক পর্যালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের জন্য সাক্ষাৎকার ছাড়া ভিসা নবায়ন করা আরও কঠিন হতে পারে।
করণীয় কী
যদি আপনি ভিসা নবায়ন করতে চান, তাহলে নতুন নিয়ম অনুসারে আপনার যোগ্যতা যাচাই করুন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন। নতুন পরিবর্তনের কারণে সাক্ষাৎকারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার সম্ভাবনা থাকায় পরিকল্পনা মাফিক আবেদন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।