সিরিয়ায় যেমন ছিল আসাদের শেষ কয়েক ঘন্টা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৭ PM , আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৮ PM
সম্প্রতি সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল–আসাদের শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে সিরিয়াবাসী। তবে আসাদের পতনের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেও তার পালানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রায় কাউকেই টের পায়নি। উলটো অভিযোগ করেছেন বাসারের সহকারী, কর্মকর্তা এমনকি আত্মীয়রা অভিযোগ করেছেন, আসাদ তাদেরকে প্রতারিত করেছেন।
তবে মস্কোতে পালানোর কয়েক ঘণ্টা আগে স্বৈরশাসক আসাদ শনিবার (০৭ ডিসেম্বর) তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রায় ৩০জন সেনা ও নিরাপত্তা প্রধানদের নিয়ে একটি বৈঠকে আশ্বস্ত করে জানান, রাশিয়ান সামরিক সহায়তা পথে রয়েছে। সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন কমান্ডার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে রয়টার্সকে এমন তথ্য দেন। প্রতিবেদনটি রয়টার্স থেকে ভাষান্তরিত।
তবে শত চেষ্টার পরেও বাসার আল আসাদ শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকতে পারেন নি। আরব রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ আঞ্চলিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের নির্বাহী পরিচালক নাদিম হুরি বলেন, ‘আসাদ শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারেননি। এমনকি তিনি তার নিজের সৈন্যদের সমাবেশও করেননি।’ আসাদ নিজের পতনের পাশাপাশি তার সমর্থক ও কাছের লোকদেরও বিপদের মুখে ফেলছেন। নাদিম হুরি আরও বলেন ‘তিনি তার সমর্থকদের নিজেদের ভাগ্যের মুখোমুখি হতে দিয়েছেন।’
পালানোর ঠিক আগে আসাদ তার মিডিয়া উপদেষ্টা, বুথাইনা শাবানকেও ফোন করেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। মিডিয়া উপদেষ্টাকে আসাদ একটি বক্তৃতা লিখতে তার বাড়িতে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু ওই উপদেষ্টা আসাদের বাড়িতে পৌঁছে দেখতে পান, সেখানে কেউ নেই।
আসাদের সহযোগীরা জানায়, পালিয়ে যাওয়ার আগে তিনি তার ছোট ভাই মাহের কিংবা সেনাবাহিনীর অভিজাত ৪র্থ সাঁজোয়া বিভাগের কমান্ডারকেও পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেননি। পরে বিপদ এড়াতে মাহের একটি হেলিকপ্টার নিয়ে ইরাকে এবং তারপরে রাশিয়ায় যান। এসব বিষয়ে আসাদের ঘনিষ্ঠ অন্তত ১৪ জনের সাথে কথা বলে এই প্রতিবেদন তৈরি করে।
তাদের মধ্যে সিরিয়ায় আসাদের একজন সহযোগী এবং লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, তথ্য না থাকার ফলে বিদ্রোহীদের হাতে দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ যাওয়ার সাথে সাথে আসাদের মামাতো ভাই এহাব এবং এয়াদ মাখলুফও একইভাবে পিছনে পড়েছিল। পথ না পেয়ে এই দুইজন গাড়িতে করে লেবাননে পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পথে বিদ্রোহীদের দ্বারা অতর্কিত হামলায় প্রাণ হারান এহাব। গুলিতে এহাব মারা যাওয়ার পর বিদ্রোহীরা ইয়াদকে আহত করেছিল। যদিও রয়টার্স এই মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি।
৮ ডিসেম্বর আসাদ বিমানে করে দামেস্ক থেকে পালিয়ে যান। চিহ্ন এড়াতে আসাদ রাডার ফাঁকি দেয়ার পরিকল্পনা করেন। এরজন্য তিনি বিমানের ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম হন। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুই আঞ্চলিক কূটনীতিক। পালানোর সময় আসাদ প্রথমে সিরিয়ার উপকূলীয় শহর লাতাকিয়ায় রাশিয়ার হামিমিম বিমান ঘাঁটিতে এবং পরে সেখান থেকে মস্কোতে যান।
মস্কোতে যাওয়ার আগেই আসাদ পরিবারের নিকটবর্তীরা, তার স্ত্রী আসমা এবং তিন সন্তান রাশিয়ার রাজধানীতে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এই তথ্য নিশ্চিত করেন, আসাদের তিনজন প্রাক্তন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং একজন সিনিয়র আঞ্চলিক কর্মকর্তা।