মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা কেন?

মণিপুরে সহিংসতা বন্ধে মানবন্ধন করেন স্থানীয় নারীরা
মণিপুরে সহিংসতা বন্ধে মানবন্ধন করেন স্থানীয় নারীরা  © ফাইল ছবি

সম্প্রতি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে দুই সংখ্যালঘু নারীকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর থেকেই ভারতসহ বিভিন্নদেশে এর সমালোচনা চলছে। জাতিগত সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ৪০০ জন। উদ্বাস্তু হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।

মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষে অবস্থান মণিপুরের। এটি ভারতের ‘সেভেন সিস্টার’ হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোর একটি। রাজ্যের প্রায় ৩৩ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ মেইতেই গোষ্ঠীর। বাকি প্রায় ৪৩ শতাংশ কুকি ও নাগা গোষ্ঠীর মানুষ। এছাড়া ছোট ছোট আরও কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠী রয়েছে। তবে এই তিনটিই প্রভাবশালী।

স্থানীয় আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরোধ থেকেই এই অস্থিরতার শুরু। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই এবং সংখ্যালঘু কুকিদের মধ্যে জমির মালিকানা ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিরোধ এখন বলতে গেলে গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইরা মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বী বা হিন্দু সম্প্রদায়ের। মণিপুরে মেইতেইদের ‘শিডিউলড ট্রাইব’ (তফসিলি জাতিগোষ্ঠী) হিসেবে গণ্য হয় না। সে কারণে সরকারি চাকরি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থায় কোটা সুবিধার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে আসছে বলে মেইতেইদের অভিযোগ।

গত কয়েক বছর ধরে মেইতেইরা ভারতে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে লড়াই করছে। তবে তাদেরকে ‘শিডিউলড ট্রাইব’ এর স্বীকৃতি দিলে অন্য সংখ্যালঘু আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য ওই রাজ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে- এই আশঙ্কা থেকে মেইতেইদের ওই স্বীকৃতির বিরোধিতা করছে রাজ্যের অন্য আদিবাসী সংখ্যালঘুরা, যাদের একটি বড় অংশ ধর্মীয়ভাবে খ্রিস্টান।

কুকি সম্প্রদায় বলছে, মেইতেই নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নামে তাদের সম্প্রদায়কে উপড়ে ফেলার নীল নকশা তৈরি করছে। সেজন্যই তারা মেইতেই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লড়তে বাধ্য হচ্ছে।

দিল্লিতে নিযুক্ত বিবিসির সাংবাদিক গীতা পাণ্ডে বলছেন, ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নকে যেকোনও সংঘাতের অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, মণিপুরেও সেটা প্রমাণিত হলো।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দুই নারীকে অসম্মানের যে ভিডিও এখন ভাইরাল হলো, সেই ঘটনাটি আসলে ঘটেছে গত মে মাসে। ওই সময় একটা ভুয়া খবর ছড়িয়েছিল যে কুকি মিলিশিয়ারা মেইতেই গোষ্ঠীর এক নারীকে ধর্ষণ করেছে। এর জের ধরেই হয়তো বিক্ষুব্ধ মেইতেই জনতা কুকি গোষ্ঠীর দুই নারীকে বর্বর কায়দায় নির্যাতন করে। দুই নারীর মধ্যে একজনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, দুই কুকি নারীর ওপর এমন নির্মম নির্যাতন পুরো ভারতের জন্য লজ্জার। ঘটনার সঙ্গে দায়ী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। মণিপুরের কন্যাদের সঙ্গে এহেন আচরণ কোনোভাবেই ক্ষমা করা হবে না।

তবে এই মন্তব্যের পর প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে, নরেন্দ্র মোদি কেন এতদিন মণিপুর ইস্যুতে নীরব ছিলেন।

মণিপুরে প্রায় ৪০ হাজার সেনা, আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য, পুলিশ মোতায়েন করে রেখেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। তবে তারা সংঘাত দমনে হিমশিম খাচ্ছে। স্থানীয় কিছু আদিবাসী নেতা মণিপুরে কেন্দ্রের শাসন জারির দাবি তুললেও কেন্দ্রীয় সরকার তা আমলে নিচ্ছে না।

মণিপুরে এখন ক্ষমতায় আছে নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি। রাজ্য সরকারের প্রধান এন বিরেন সিং মেইতেই গোষ্ঠীর সদস্য। বিধানসভার ৬০টি আসনের মধ্যে ৪০টিই মেইতেইদের দখলে। বীরেন সিং সরকারের অভিযোগ, কুকি মিলিশিয়ারাই এই সংঘাতে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে।

তবে দুই নারীকে হয়রানির ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে স্থানীয় পুলিশের ওপরও। দুই নারীর একজন সাংবাদিকদের বলেছেন, ঘটনার দিন পুলিশ হামলাকারীদের সঙ্গেই ছিল। তারা দুই নারীকে বাঁচানোর কথা বলে প্রথমে গাড়িতে তুলে নিলেও পরে বিক্ষুব্ধ জনতার তুলে দেয়।

গত ৪ মে ওই ঘটনা ঘটে। ভিডিও ফুটেজে হামলাকারীদের চেহারাও স্পষ্ট শনাক্ত করা সম্ভব। তবে পুলিশ এই ঘটনায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই)। চার জনকে গ্রেফতারের পর তারা বলছে, শিগগিরই আরও গ্রেফতার করা হবে। তবে আড়াই মাস কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলো না সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি কোথাও।

সূত্র: বিবিসি


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence