সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ গেছে ৪৫ লাখ মানুষের

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ গেছে ৪৫ লাখ মানুষের
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ গেছে ৪৫ লাখ মানুষের  © সংগৃহীত

টুইন টাওয়ারে ২০০১ সালে ভয়াবহ হামলার জের ধরে যুক্তরাষ্ট্র কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ৯/১১ হামলার সপ্তাহে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আরোপিত সে যুদ্ধ সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে কত মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে তা নিয়ে গবেষণা করেছে আমেরিকার খ্যাতনামা ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট। 'যুদ্ধের খরচ' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এ গবেষণায় সহ পরিচালক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সিনিয়র গবেষক স্টিফেনি সাভেল। প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের সূত্র ধরে আল-জাজিরার ইনসাইড স্টোরি অনুষ্ঠানের জন্য সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি করেন আলেকজান্ডার বায়াজড।

এতে বলা হয়, টুইন টাওয়ারে হামলার পরবর্তী সময় গুলোতে ইরাক-আফগানিস্তানে মার্কিন হামলা অসংখ্য মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। বছরের পর বছর চলা বিধ্বংসী সে যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ। বিচার ছাড়াই হাজারো মানুষকে আটক করে অবৈধভাবে অন্য দেশের কারাগারে বন্দী ও নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়।

২০২১ সালের ৩০ আগস্ট মধ্যরাতে ২ দশকের যুদ্ধ শেষে অবশেষে আফগানিস্তান ছেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ সামরিক বিমান। এর মাধ্যমে দেশটিতে আমেরিকার ২০ বছর ধরে অবস্থানের অবসান হয়। তারও আগ থেকে যুদ্ধ থেকে ফিরতে শুরু করে ন্যাটোর অন্যান্য সদস্য দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।

আরও পড়ুন: চোখের পলকে গুঁড়িয়ে গেল ৪০তলা টুইন টাওয়ার (ভিডিও)

৯/১১ হামলার দুই দশক পেরিয়ে গেছে আরও ২ বছর আগে। সে হামলার সূত্র ধরে ২টি ভয়াবহ, বিধ্বংসী ও ব্যয়বহুল যুদ্ধের জন্ম হয়েছিল। আল-কায়েদা যোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার কথা বলে ২০০১ সালের নভেম্বরে আমেরিকা এবং তার মিত্ররা মিলে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে আক্রমণ শুরু করে। আকাশ এবং ভূমি উভয় দিক থেকে শুরু হয় ভয়াবহ বোমা হামলা। লাখো মানুষ মারা যায় আর কয়েক মিলিয়ন মানুষ তাদের ভিটেমাটি, দেশ ছাড়া হতে বাধ্য হয়।

একইভাবে ২০০৩ সালে একই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ প্রকল্পের আওতায় আমেরিকা ইরাক আক্রমণ শুরু করে। ইরাকের আলোচিত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল তার কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে। ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে বিতর্কিত এক বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঈদের রাতেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় সাদ্দাম হোসেনের। কিন্তু যে অস্ত্রের খোঁজে হামলা করে পুরো ইরাক লণ্ডভণ্ড করে দেয়া হয় সে গণবিধ্বংসী অস্ত্র পেয়েছে এমন ঘোষণা কখনোই দিতে পারে নি আমেরিকা।

ইরাকি ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে সাদ্দাম হোসেনকে বিলীন করে একতরফা জয় ঘোষণা করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। তখন তিনি বলেছিলেন, "ইরাকে মূল যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এতে ইরাকের মুক্তি হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা জয়ী হয়েছে।" ইরাকের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, হানাহানি শুরু হওয়ার আগেই এ ঘোষণা দিয়েছিলেন বুশ প্রশাসন।

কথিত সে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ পুরো মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের জন্য ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনে। কিন্তু তথাকথিত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ শেষ করার কোনো ধরনের ঘোষণা এখনো আসেনি। সীমাহীন দুর্ভোগ, ধ্বংস, হানাহানিতে ক্ষত-বিক্ষত মানুষ গুলোর ক্ষত মুছতে কিছুই করেনি কেউ।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইনস্টিটিউট থেকে 'কস্ট অব দ্যা ওয়ার' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে উঠে এসেছে কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং এখনো পর্যন্ত চলমান পরবর্তী প্রেক্ষাপটে অন্তত ৪৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সে প্রতিবেদনে সিরিয়া, পাকিস্তান, সোমালিয়া এবং ইয়ামেনে ঝরে যাওয়া প্রাণ গুলো হিসাবে আনা হয়েছে। সে যুদ্ধে কারা মারা গেছেন তার হিসাব রাখেনি কেউ। কিন্তু প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সরাসরি যুদ্ধের চেয়েও অনেক বেশি মানুষ মারা গেছে পরোক্ষভাবে। পরোক্ষ মৃত্যু বলতে এতে যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক, মানসিক এবং পরিবেশগত বিপর্যয়কে দায়ী করা হয়।

এদিকে, ২০ বছরের যুদ্ধ শেষে আফগানিস্তান থেকে গুটিয়ে পালিয়েছে আমেরিকা ও তার মিত্ররা। হামলার সময় ক্ষমতায় থাকা তালেবান আবারও ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে এসেছে। আন্তর্জাতিক দাতারা আফগানিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আটকে দিয়েছে এবং দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে সে গবেষণা প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, আজকের আফগানিস্তানের এ ধরনের মৃত্যুগুলো কি কোনোভাবে আমেরিকার সে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের থেকে বিচ্ছিন্ন বলা যাবে? দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতির শিকার আফগানিস্তানের মানুষ আসছে দিনে হতে থাকবে তা কি সে যুদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন?


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence