বয়স ও নিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় গ্রন্থাগার পেশায় চাকরি প্রত্যাশীরা

চাকরি প্রত্যাশীরা তরুণরা
চাকরি প্রত্যাশীরা তরুণরা  © ফাইল ফটো

গত ২৮ মার্চ নতুন সংশোধিত এমপিও নীতিমালা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে সহকারী গ্রন্থাগারিকদের শিক্ষক ও গ্রন্থাগারিকদের প্রভাষক (গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান) পদমর্যাদা দেয়া হয়। শিক্ষক পদমর্যাদা হওয়ায় এই পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে চলে যাওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। এতে করে নিয়োগ কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফলে এই পদে চাকরির অপেক্ষায় থাকা কয়েক হাজার চাকরি প্রত্যাশী চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

তথ্যমতে, ২০১৩ সালে সহকারী গ্রন্থাগারিকদের নন টিচিং স্টাফ থেকে বাদ দেয়া হয়। তবে তাদের কোন ক্যাটাগরিতে রাখা হবে সেটি ঠিক না হওয়ায় নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছিলেন এই পদে কর্মরতরা। তবে ২০২১ সালে সহকারী গ্রন্থাগারিকদের শিক্ষক পদমর্যাদা দেয়া হয়। এতে করে দীর্ঘ বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি মিললেও শিক্ষক পদমর্যাদার হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। কেননা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব এনটিআরসিএর উপর ন্যাস্ত। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সহকারী গ্রন্থাগারিক পদটি শিক্ষক পদমর্যাদা পাওয়ায় এর নিয়োগ প্রক্রিয়া এনটিআরসিএতে চলে যেতে পারে। কেননা এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে এনটিআরসিএ।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক-৩) মো. কামরুল হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের আইনেই বলা আছে যে, এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া এনটিআরসিএর মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে নতুন নীতিমালায় গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দশনা দেয়া হবে বলে বলা হয়েছে। এনটিআরসিএতে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করে ঠিক করবেন।

এদিকে চাকরি প্রত্যাশী তরুণরা বলছেন, সহকারী গ্রন্থাগারিক ও গ্রন্থাগারিক পদ দুটিতে ইতোপূর্বে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হতো। এতে করে এই পদগুলোতে খুব দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হত। তবে শিক্ষক পদমর্যাদা দেয়ার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া যদি এনটিয়াআরসিএর হাতে চলে যায়, তাহলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ধীরগতি আসবে। তখন অনেক প্রার্থীর বয়স শেষ হয়ে যাবে। 

তারা বলছেন, শিক্ষক পদমর্যাদা দেয়ায় আমরা অনেক আনন্দিত, তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কেননা অনেকের চাকরির বয়স শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এই অবস্থায় যদি এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে পুরো নিয়োগ কার্যক্রম দুই/তিন বছরের জন্য আটকে যাবে। ফলে অনেকের যোগ্যতা থাকার পরও বয়স সংক্রান্ত জটিলতায় চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এই অবস্থায় আগের নিয়মেই এই পদে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা।

গ্রন্থাগার পেশায় চাকরি প্রত্যাশী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক নীতিমালার এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক মনে করলেও তার মতে, শিক্ষক-প্রভাষক মর্যাদার ফলে পদদুটির নিয়োগ এনটিআরসিএর অধীনে যাবার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে আর এতে করে নিয়োগ জটিলতার সৃষ্টি হবে। এরূপ পদমর্যাদা দেওয়া হলেও নীতিমালা অনুযায়ী কার্যত পদদুটির সুযোগ সুবিধা, বেতন-ভাতা ইত্যাদি পূর্বের ন্যায় বহাল থাকবে। সংশ্লিষ্ট পদের কোনো পাঠ্যবই নেই তাই পদদুটি নন-টিচিং। তাছাড়া পদ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের দায়িত্বেরও মূলত কোনো পরিবর্তন হবে না। তাই পদদুটি প্রকৃত শিক্ষক প্যাটার্নের সাথে সাংঘর্ষিক।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষক নিবন্ধন মূলত কোন পাঠ্যবিষয়ে প্রার্থীর শিক্ষকতার যোগ্যতা যাচাইয়ের সাথে সম্পৃক্ত। তাই পাঠ্যবই ছাড়া সে বিষয়ের নিবন্ধনের কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। তাছাড়া এনটিআরসিএর নিয়োগ দীর্ঘসূত্রতা সবার জানা। তাদের একটি চূড়ান্ত নিয়োগ (গণবিজ্ঞপ্তি) প্রসেস করতে ২-৩ বছর সময় লাগে। বর্তমান লাইব্রেরি সায়েন্স কোর্সধারীদের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশের বয়স ৩২-৩৩ বছরের উপরে। এতে করে অনেকের বয়স সীমা শেষ হয়ে যাবে। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী ভবিষ্যতে এনটিআরসিএ বিলুপ্ত হয়ে স্থায়ী জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন হবার কথা, তাই এনটিআরসিএর অস্তিত্বও অনিশ্চয়তায় আছে। তাই এখনি এনটিআরসিএর অধীন দেওয়া মানে পদদুটির নিয়োগ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে, যা চাকরি চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য কাম্য নয়। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় পদ দু'টির নিয়োগ আপাতত কমিটির অধীন চলমান রাখা বাঞ্ছনীয়।

এদিকে মন্ত্রণালয় বলছে, গত ২৮ মার্চ সংশোধিত যে এমপিও নীতিমালা জারি করা হয়েছে তার পূর্বে যে নিয়োগ কার্যক্রম গুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, সেগুলোতে আগের নিয়মে কমিটির মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হবে। তবে ২৮ মার্চের পর কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে সেগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। কীভাবে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে সে বিষয়ে নীতিমালায় বলা আছে। আমরা শিগগিরই এই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence