পদ্মা সেতু: রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূরণে আওয়ামী লীগের মাইলফলক

পদ্মাসেতু
পদ্মাসেতু   © সম্পাদিত

পদ্মা সেতু জনগণের অর্থে নির্মিত হয়েছে, সুতরাং এর মালিক জনগণ। এই সেতু এখন আপামর বাঙালির গর্ব। এই অর্জন বাঙালি জাতির। তবে এই উচ্চাভিলাষী ও দূরদর্শী প্রকল্প বাস্তবায়নে যেমন অভ্যন্তরীণ রাজনীতি-ব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্র ছিল, তেমনি মুষ্টিমেয় উগ্রবাদী ও গণস্বার্থবিরোধী বাঙালির কূটচালের জন্যই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে বিশ্বব্যাংকের মতো সহযোগী প্রতিষ্ঠানও এই প্রকল্প বানচালের চেষ্টা করেছিল।

তবে, আওয়ামী লীগ সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত এবং জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের অর্থে এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিশ্বের সর্বোচ্চ স্রোতস্বিনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশের এই ঘোষণাকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি দেশজুড়েও রাজনৈতিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করা শুরু করে অন্য দলগুলো।

কিন্তু কিংবদন্তি ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর মতো আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান ও বিজ্ঞ প্রকৌশলী তার বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে নিমগ্ন চিত্তে নদী শাসন থেকে শুরু করে সেতুর পাইলিং, সর্বোপরি পুরো পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের স্থাপত্যকলা ও নকশা প্রস্তুত করেন। ব্যক্তিজীবনে তীব্র সততা ও দক্ষতার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের রোডম্যাপ তৈরি করে দেন তিনি। আর অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার ব্যাপারে তাকে নিয়মিত আশ্বস্ত করে যান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

অবশেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এই সেতুর কাজ শুরু ও সফলভাবে শেষ হয়। বিরোধীদের সেট করা এজেন্ডা অনুসারে, রাজনৈতিকভাবে সবসময় এই সেতু আলোচনায় থাকার কারণে, এর প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা ও স্থাপত্যশৈলী মতো যৌক্তিক বিষয়গুলো মানুষের আলোচনায় আসার সুযোগ পায়নি কখনো।

যেহেতু পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়া কিংবা না হওয়ার বিষয়টি শুরু থেকে ক্রমান্বয়ে চূড়ান্তভাবে একটি রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক কমিটমেন্টের কারণেই এই সেতু নির্মাণের মতো অবিশ্বাস্য কাজ অবশেষে সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে।

একারণে এই সেতু বাস্তবায়নের সাফল্য সরকার হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যেমন, তেমনি রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে শেষ পর্যন্ত জনগণকে দেওয়া নিজেদের রাজনৈতিক কমিটমেন্টের প্রতি অবিচল থাকার কারণে দল হিসেবে সমানভাবে আওয়ামী লীগও এই সেতু বাস্তবায়নের কৃতিত্বের দাবিদার।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে, কয়েক বছর ধরে প্রমত্ততা পদ্মায় সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর, ২০০১ সালে মাওয়া-জাজিরা প্রান্ত নির্ধারণ শেষে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর এই সেতু নির্মাণ সম্ভব নয় বলে সেই কাজ থামিয়ে রাখে। এরপর বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে দেশজুড়ে খাম্বা স্থাপন করে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেশবাসীর।

২০০৮ সালে আবারো আওয়ামী আবারো সরকার গঠনের পর পুনরায় শুরু করে সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ। তখন তারা পদ্মা সেতু হবে না বলে নিয়মিত উপহাস শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারকে। কিন্তু দেশের সেরা ও সৎ প্রকৌশলী, নদী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অদম্য মনোবলে কাজ এগিয়ে নিতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রমত্ততা পদ্মার অনিঃশেষ প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার পাশাপাশি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রও মোকাবিলা করতে হয়েছে পুরো সময়-জুড়ে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা নিঃশঙ্কচিত্তে জনগণকে দেওয়া তার রাজনৈতিক কমিটমেন্ট বাস্তবায়নে এগিয়ে গেছেন। কোনো সেতু নির্মাণ করে দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে গিয়েও যে অজস্র রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, গুজব, নোংরামি হতে পারে; তা সম্ভবত এই দেশের অযোগ্য, মানবিকতা ও দেশপ্রেমহীন কতিপয় উগ্রবাদী দল ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও সম্ভব নয়।

একারণেই এই সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা জয় করা, নিজস্ব ফান্ড থেকে অর্থ জোগান, প্রকৌশল ও স্থাপত্য, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়, দেশের বিজ্ঞ-দক্ষ-সৎ ব্যক্তিদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধান করা যেমন সরকারের কৃতিত্ব। তেমনি সার্বিক ষড়যন্ত্র ও গুজব মোকাবিলা করে দেশের মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া, জনগণ ও সরকারকে সাহস দেওয়া, এমনকি সবসময় এই সেতু নির্মাণের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা-- প্রভৃতি কারণে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের মতোই কৃতিত্বের সমান অংশীদার রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

কারণ, কোনো রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া জাতীয় কোনো বড় পরিবর্তন সম্ভব হয় না, বিশ্বে কখনো হয়নি, হবেও না। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ঘোষণা ও চ্যালেঞ্জ ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। সুতরাং এই সেতুর মালিক যেমন আপনি আমি আমরা সব জনগণ, তেমনি এটি বাস্তবায়নের কৃতিত্বটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগকে কারো ভালো লাগুক বা নালাগুক, এটাই বাস্তবতা।

লেখক: কবি আলীম হায়দার, জাতীয় কবিতা পরিষদ


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence