করােনার বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, খুলে দাও

  © টিডিসি ফটো

করােনার এই সংকটকালে বন্ধ হয়ে আছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। একবার তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে আমার এক বন্ধু বলে উঠলাে, করােনারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলাের হলগুলোতে ডিম ফুটিয়ে তাতে তা’ দিচ্ছে আর ক্যাম্পাস খুললেই করােনার বাচ্চারা হামলা করবে আমাদের উপর। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলােকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

সত্যি বলতে বাংলাদেশের সরকারি অফিসগুলাে থেকে শুরু করে গার্মেন্টস পর্যন্ত সবকিছু খুলে দেয়া হলেও খুলছেনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলাে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হলে তালা ভেঙে হলে প্রবেশের বিষয়টি বেশ ভালোবাসা কুড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাবিপ্রবি, ইবি শিক্ষার্থীরাও হল খোলার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা।

বাস, রেল, কল-কারখানা, পাড়ার স্টেডিয়ামের লােকসমাগম দেখলে বুঝার জো নেই যে আমরা মহামারির সংকটে আটকে আছি। যেসব শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস বন্ধ বলে বাসায় অবস্থান করছে তারা মােটেও গৃহবন্দী সময় কাটাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা, যেই শিক্ষার্থী করেনা আক্রান্ত হবে বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হচ্ছে না ধরে নিলাম সেই শিক্ষার্থী তাঁর ঘর থেকেই বের হয় না! কিন্তু নিজ ঘরে অবশ্যই সে কোয়ারান্টাইনে থাকে না। ঘুরতে যাওয়া, টিউশনি করাসহ পারিবারিক কাজে সময় দিচ্ছে তারা। শুধু হচ্ছেনা পড়াশােনা।

কওমী মাদরাসাগুলাে যখন খােলা হচ্ছিলাে তখন অনেকেই গলা ফাটিয়ে বলেছিলেন যে, করােনায় দেশ ভরে যাবে এবং মাদরাসাগুলাে বারান্দায় লাশের স্তুপ জমে থাকবে! কই, এমন তাে কিছুই হয়নি। সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে প্রায় এক বছর হারিয়ে গেলাে। হতাশা তাড়া করে বেড়াচ্ছে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদেরকে।

অনলাইন ক্লাস কখনাে বাস্তব ক্লাসের বিকল্প হতে পারেনা বলেই মনে করছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। ইন্টারনেট স্পিডের কথা যদি বলি, সেক্ষেত্রে গ্রাম্য পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত ডেটা স্পিড পাচ্ছেন না একদমই। সিম অপারেটর কোম্পানিগুলাের বিজ্ঞাপন শুধুই বিজ্ঞাপন মাত্র যা গ্রামে বসে অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে প্রত্যক্ষ করছেন শিক্ষার্থীরা। আবার অন্যদিকে ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের জন্য দরিদ্র এবং ধনী শিক্ষার্থীর আর্থসামাজিক বৈষম্যে দৃশ্যমান হচ্ছে!

করােনা দেশ থেকে বিদায় নেয়নি যতােটা সত্যি ততটাই সত্যি যে, স্বাস্থ্য সচেতন হলে করােনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাবে এটাও অস্বীকার করার কথা নয়। স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রশ্নে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিঃসন্দেহে কম সচেতন নন। যদি করোনার বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েই থাকে। সবকিছু চলছে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ। তাহলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদেরকে ভ্যাকসিন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিন।

যে বাবা পরিবারের হাল ধরতে করােনার এই সময়ে বাহিরে যান তার সন্তান হয়ে আমি কিভাবে ঘরে বসে অলস সময় কাটাবাে বলুন? আমাকেও যে পরিবারের হাল ধরতে হবে। প্রত্যেকটি মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের অর্তনাদ শােনার বুঝি কেউ নেই!

লেখক: শিক্ষার্থী, যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগ, হাজী মােহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ