সাড়ে ৩ বছরে রাবি ভিসি কেন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিলেন না?

লেখক
লেখক  © টিডিসি ফটো

২০১৭ সালের ৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেয়ে প্রথমেই শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা শিথিলের উদ্যোগ নেন এবং শিথিলকৃত নিয়োগ নীতিমালায় উপাচার্য তার কন্যা ও জামাতাকে নিয়োগ দেন। তাছাড়া উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের সন্তানেরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। রাবি উপাচার্যের কন্যা ও  জামাতাসহ ৩৪ জন নিয়োগ প্রাপ্তদের পূর্বের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনের যোগ্যতা ছিল না।

গত ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে রাবিতে সকল প্রকার নিয়োগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, তার আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাড়ে তিন বছরের অধিক সময় পেয়েছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে নিয়োগ দেওয়ার।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ জানুয়ারি অফিস চলাকালে জালাল নামে একজনকে সেকশন অফিসার পদে অ্যাডহকে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিষয়টি জানতে পেরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে সামনে অবস্থান নেয়  চাকরি প্রত্যাশী ৩০-৩৫ জন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। পরে চাকরি প্রত্যাশীরা উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। এসময় উপাচার্যের বাসভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। 

১২ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের ফটকের সামনে অবস্থান নেন চাকরিপ্রত্যাশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নিয়োগের দাবিতে রাবি প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

আন্দোলনকারীদের অন্যতম রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘প্রশাসনিক’ কারণ দেখিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। সেই ‘প্রশাসনিক’ কারণটা কি?  আমরা তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য যদি দুর্নীতি করে থাকেন, তাহলে তার দুর্নীতির কেন বিচার হচ্ছে না? একজন দুর্নীতিবাজ উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। অথচ উপাচার্য দায়িত্বে আছেন কিন্তু নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন এটা করেছে আমরা তার ব্যাখ্যাও দাবি করছি।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে প্রতিবন্ধী একটা ছেলেকে চাকরি দেয়ার জন্য। যেহেতু নিয়োগ বন্ধে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে, তাই আমি বিষয়টি সচিবকে জানিয়েছি। তিনি আমাকে নিয়োগ দিতে বলেছেন এবং নিয়োগ দিয়েছি। এর প্রেক্ষিতে সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ নেতারা এসে চাকরির দাবি করে। আমি জানিয়েছি, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন আমি নিয়োগ দিতে পারব না।’

নিজের মেয়ে ও জামাতাকে শিথিল শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় নিয়োগ দেওয়া সত্ত্বেও, গত সাড়ে তিনবছরে রাবি উপাচার্য কেন কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে নিয়োগ দিলেন না? সাড়ে তিন বছর অনেক সময় নিয়োগ দেওয়ার জন্য।গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সেখানে আন্দোলনরত দু’জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে উপাচার্য আমাদেরকে চাকরি দেবেন বলে আশ্বস্ত করে আসছেন। কিন্তু চাকরি দেওয়া হচ্ছে না। 

সর্বশেষ খবরে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যৌথভাবে কাজ করবে এমন আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ১৩ জানুয়ারি দুপুরে উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের বৈঠক শেষে চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

লেখক: প্রফেসর, ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ