সুস্থ এক সকালে চায়ের আড্ডায় মেতে উঠব তিতুমীরে
- মোঃ মাইদুল ইসলাম
- প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২০, ০২:১৯ PM , আপডেট: ৩০ জুন ২০২০, ০২:২৫ PM
"প্রভাতের নিস্তবধতা গলি জুড়ে" সকালে ঘুমের আড়মোড়া ভাঙতে না ভাঙতে, ঘুম চোখেই প্রস্তুত হয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যেতাম। জনপদ থেকে তুরাগ বাস ধরে, যেতাম পুলিশ ফাঁড়ি। তুরাগ বাসে উঠে মোবাইল ডাটা চালু করার সঙ্গেই মেসেন্জার গ্রুপে বন্ধুদের মেসেজ কে কোথায় আছিস। দুই একজনকে কল দিয়া জাগানো লাগতো! ৭টা ২৫ এ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে কলেজ বাস উঠেতেই আলাদা আমেজ।
ততক্ষণে গেট এ কয়েকজন গান শুরু করে দিত। কেউ পড়ালেখায় ব্যস্ত, কেউ বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা তো কেউ ঘুমের দেশে হারিয়ে যেতেই লিংক রোডের জ্যাম পেরিয়ে ৮ টার দিকে বাস কলেজে প্রবেশ করতো। তিতুমীর লেখাটা চোখে পড়তেই সকল আড্ডা-ব্যাস্ততা ছেড়ে নামার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত।
ক্যাম্পাসে এসে সকলে এক হতেই সময় দীর্ঘায়িত না করে যেতাম প্রধান ফটকের অপর পাশে টং এর দোকানে। শুরু হতো প্রানবন্ত চায়ের আড্ডা। এরপর বিজ্ঞান ভবনের ১৩১৫ নম্বর রুমে ক্লাস করা, ক্লাস শেষে রুমে, মাঠে ক্যাম্পাসের অলিতে-গলিতে বসতো আড্ডার আসর, ভাঙা গলা মিলিয়ে শুরু হতো গান "তোরা আছিস তোরা ছিলি তোরাই থাকবি"।
ঠিক যেক এক মধুর স্মৃতিতে পরিনত হয়েছিল ক্যাম্পাসের শুরুর লাইফটা। তবে সেটা দীর্ঘায়িত হতে না হতেই বিপত্তি বাঁধলো মহামারী করোনা। ১৭ ই মার্চ লঞ্চে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হওয়ার পর আজ ৩ মাসের বেশি আটকে আছি বাড়িতে। মেসেন্জার গ্রুপে ভূরি ভূরি মেসেজের মাধ্যমে আড্ডা চললেও তাতে তৃপ্তির খোরাক জমেনা।
তাইতো আরেকটা সকাল চাই! যে সকালের দু'দিন আগেই লঞ্চে করে ঢাকায় পা রাখবো আমি, করোনার অন্ধকার কাটিয়ে সুস্থ, স্বাভাবিক রাজধানীর সদরঘাটে নেমে মাস্কবিহীন মুখে প্রাণভরে নিশ্বাস গ্রহণ করবো।
দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে যাবো সে জন্য হয়তো আগের রাতে নানা কল্পনায় ঘুমতে ঢের দেরি হবে। মোবাইলের এলার্মের শব্দে হুর মুড়িয়ে উঠে তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বের হবো! তখনো যাত্রাবাড়ী থাকবে শুনশান, জনমানবহীন গলি পেরিয়ে তুরাগ বাসে উঠবো দৌড়ে। সেদিন ছাত্র ভাড়া না দিয়ে পুরো ভাড়া দিবো কন্ডাকটরকে মামাও সেদিন থাকবে আনন্দ মেজাজে কারণ তার বাসে এখন আর দূরত্ব মেনে কম মানুষ নিতে হয়না, কানায় পূর্ণ তার বাস।
সেদিন থাকবেনা কোন সামাজিক দূরত্বের বালাই, কারও মুখে থাকবেনা মাস্ক পড়া। পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বাসে উঠেই জরিয়ে ধরবো বন্ধুদের। বাসে সিট খালি থাকা সত্ত্বেও আমি আর আমার বন্ধু গেটে দ্বাড়িয়ে গলা মেলাবো "আমরা করবো জয় একদিন"।
ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে দৌড়ে মাঠে যেয়ে বসে পড়বো সবুজ ঘাসে ছেয়ে যাওয়া মাঠে। চোখ বুঁজে অনুভব করবো এতদিনে আমার পরশ না পাওয়া ঘাসগুলোকে। বিজ্ঞান ভবনের সামনে যেয়ে মামাকে জিগ্যেস করবো কেমন আছেন? জানি মামাও সেদিন খুব ভালো থাকবে, এতদিন পর আমাদের পেয়ে মামাও খুশিতেই থাকাবে।
ততক্ষনে বন্ধুরা একে একে সকলে এসে জমা হবে শহীদমিনারের সামনে। সকলকে নিয়ে যাবো আবারও চায়ের আড্ডায় মেতে উঠতে। টং এর মামাকে বলবো চিনি বেশি দিয়ে রং চা দিতে। বন্ধহমহলে চাখোর খেতাব পাওয়া আমি হয়তো অনেকদিন মামার চা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় দু'কাপ তৃপ্তি নিয়ে পান করে ফেলবো।
৮টা ৪০ বাজার আগেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে দ্বাড়াবো সামনের শাড়িতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য। আমাদের সামনে দাঁড়ানো থাকবে শিক্ষকবৃন্দ, সকলে গলা ছেড়ে গেয়ে উঠবো,-'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি'।
এরপরেই দৌড়ে চলে যাবো ক্লাস রুমে, ক্লাসে এতদিন পর অভিভাবকতূল্য শিক্ষক এবং ভালবাসার সহপাঠীদের পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হবো। এক বেঞ্চে বসবো গাদাগাদি করে। ক্লাস শেষে রুমেই সকলের সঙ্গে জুরে দিবো আড্ডা।
সেদিন ক্যাম্পাস থাকবে কানায় কানায় পূর্ণ, সকলে ব্যাস্ত থাকবে এতদিন পর বন্ধু বড় ভাই-বোনদের পেয়ে মাঠে, বেলায়েত চত্বরে, ছাত্র সংসদের সামনের গোল চত্বর সবজায়গায় আড্ডায় মশগুল। সেখানে বেশিরভাগেরই কথা হবে লকডাউনের আনন্দ-দুঃখের স্মৃতি নিয়ে। বরকত মিলনায়তনে বসবে বিতর্ক ক্লাবের যুক্তিতর্কের মেলা, এতদিন পর ক্যাম্পাসে এসে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার চেয়ে বাঁধন সদস্যদের দেখা যাবে কোন অসুস্থ ব্যাক্তির জন্য রক্তের খোঁজে বের হতে।সেদিন রক্ত দিতে ভয় পাওয়া ছেলেটাও আনন্দে রক্ত দেয়ার সাহসটা করে ফেলবে। ফলে বাঁধনের ভাইয়া আপুদের রক্তদাতা খুজে পেতে কষ্ট হবেনা। ক্লাস শেষে বিজ্ঞান ভবন থেকে বের হতেই অডিটোরিয়াম থেকে ভেসে আসবে শুদ্ধস্বরের গান-তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে। আমরা ক'জন নবীন মাঝি হাল ধরেছি,শক্ত হাতে রে।
ছাত্র সংসদের সামনে থেকে শুরু হওয়া ছাত্রলীগের স্লোগানে মুখরিত হবে ক্যাম্পাসের অলিগলি। সাংবাদিক সমিতির ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদের দেখা যাবে খবর সংগ্রহে ব্যাস্ত।
সেদিন জমে থাকবে রাজ্যের কথা তাই ক্লাস শেষ হলেও বাসায় আসবো না আড্ডা দিবো বিকেল পর্যন্ত। বন্ধুমহলে কেউ যদি বলে বাসায় যেতে হবে, তার সে আকুতিতে ভ্রুক্ষেপ কেউ করবেনা, বাধ্য হয়ে থাকতে হবে তাকেও। সেদিন বিচরন করবো ক্যাম্পাসের প্রতেকটা অলি-গলিতে। হঠাৎ মাঠে বসে সকলে একসঙ্গে ধরব গান। এভাবেই কেটে যাবে দিনটি।
শিগগিরই সুস্থ হয়ে ওঠো হে ধরা। আমি ফিরতে চাই ব্যাস্ত ঢাকা শহরে। আমি আবারও ফিরতে চাই প্রিয় ক্যাম্পাসে, ক্লাস করতে চাই ১৩১২ নম্বর রুমে বসে, আড্ডায় মেতে উঠতে চাই বড় ভাইবোন, বন্ধুদের সঙ্গে তিতুমীরে।
লেখকঃ শিক্ষার্থী ,সরকারি তিতুমীর কলেজ।