করোনা সঙ্কটকালীন বাজেট ভাবনা
- মোঃ ফাহাদ হোসেন হৃদয়
- প্রকাশ: ১০ জুন ২০২০, ০১:৫১ PM , আপডেট: ১০ জুন ২০২০, ০২:১০ PM
মহামারী করোনা কারণে স্থবির অর্থনীতির চাকা। গোটা পৃথিবীর জুড়ে একই দৃশ্য। লকডাউনের কবলে দীর্ঘদিন ছিলো পৃথিবীর অর্ধেকও বেশি মানুষ। বাদ পড়েনি প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ। বিগত বছরের তুলনায় কমে গেছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। সরকার ঘোষিত লম্বা সাধারণ ছুটির কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির প্রতিটি খাতে। এরই মধ্যে ঘনিয়েছে জাতীয় বাজেট ঘোষণার সময়। কিছুদিনের মধ্যেই স্বাধীনতার ৪৯ তম বছর পেরিয়ে এবার দেশের ৫০ তম বাজেট ঘোষণা করা হবে। অন্য বাজেটসমূহ থেকে এবারের বাজেট অনেকটাই ভিন্ন।
সঙ্কটাপন্ন পরিবেশের মধ্যেই সরকারকে ঘোষণা করতে হবে এবারের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট।নিঃসন্দেহে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে চ্যালেন্জিং বাজেট। একদিকে সরকারকে বিভিন্ন খাতে অর্থনৈতিক প্রণোদনা দিতে হবে সংকট মোকাবেলা জন্য। অন্যদিকে, রাজস্ব খাতে আয়কে বৃদ্ধি করে বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি, ঘোষিত বিশাল অঙ্কের করোনাকালীন অর্থনৈতিক প্রণোদনা যথাযথ বন্টনও সরকারের জন্য এক বিশাল চ্যালেন্জ।
অর্থবছরের বাজেটের সাথে গোটা একটি বছরের সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বরাদ্দ জড়িত। আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে স্বাস্থ্যখাত। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দৃশ্যমান হয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশ তুলনায় স্বাস্থ্যসেবা খাতে আমরা এখনো পিছিয়ে। অন্যান্য বাজেটসমূহে স্বাস্থ্যখাতে কখনোই জিডিপির এক শতাংশের বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়নি। দেশের গ্রামীণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বৃদ্ধি করতে হবে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ। পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা মান উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু করা এখন সময়ের দাবি। শুধুমাত্র বরাদ্দ বৃদ্ধি করলেই চলবে না। বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ ও বিদেশি সহায়তা যেন দুর্নীতিমুক্তভাবে এ খাতে ব্যয় হয়, সেজন্য সরকারি উচ্চ মহলের জিরোটলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে।
‘শিক্ষা জাতি মেরুদণ্ড’ এ কথা যেমন সত্য। ঠিক তেমনি, দুর্বল শিক্ষাব্যবস্হা জাতি মেরুদণ্ডকে ধ্বংস করে দিতে পারে। বিগত ১১ বছরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে শিক্ষাখাত। পাশাপাশি এ খাতে আমরা অর্জন করেছি বৈপ্লবিক উন্নয়ন। শিক্ষাখাতে উন্নয়নে ধারা বজায় রাখতে হবে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণাখাতে বরাদ্দ খুব কম। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ব্যবস্হা গড়ে তুলতে হলে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কারিগরি ও প্রযুক্তি খাতেকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার জোরালো দাবি রইল সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের প্রতি।
খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে গেলে কৃষিখাতে সামষ্টিক উন্নয়ন সাধন অপরিহার্য। কৃষি খাতে সাম্প্রতিক বাজেট গুলোতে(২০১২-১৩ থেকে ২০১৮-১৯) ভাল বরাদ্দ রাখলেও তা শতকরা হিসাবে কমে এসেছে (১১.৩ থেকে ৫.৭ শতাংশে নেমে এসেছে)। করোনাকালে তা ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অন্যদিকে বিগত বছরগুলোতে খাদ্য উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেলেও কৃষকেরা তাদের ফসলের ভালো দাম পায়নি। এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে কৃষকেরা তাদের নায্য মূল্য পাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে সরাসরি কৃষকদের নিকট হতে শস্য ক্রয় বাড়াতে হবে। সরকারি ভর্তুকি বাড়াতে হবে যেন কৃষকেরা কম দামে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, সার ও কীটনাশক পায়। পাশাপাশি শস্যবীমা চালু ও কৃষকদের কৃষি প্রশিক্ষণের জন্য আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রয়োজনীয়।
সামাজিক সুরক্ষা বাজেটের আওতায় এসেছে দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ। যা সত্যি প্রশংসা দাবিদার। দারিদ্রতা নিরসনের জন্য নিম্ন আয়ের মানুষ, বঞ্চিত জনগণের জীবন-জীবিকা, সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি শিক্ষিত বেকারদের কল্যাণে আসন্ন বাজেটে সরকারকে দৃষ্টি প্রদান করতে হবে । তাদের জন্য কম সুদে ব্যাংক ঋণ, কারিগরি সহায়তা, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য পরামর্শ সেবামূলক কার্যক্রমে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো এখন সময়ের দাবী।
করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা মধ্যে বড় বাজেট বাস্তবায়ন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যাংক ঋণের উপর অধিক নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতি জন্য ক্ষতিকর। বিগত বছরগুলো বড় বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকারকে অধিকমাত্রায় ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে। ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীলতা কমানো জন্য সংস্কার করতে হবে রাজস্ব খাতকে।
সেজন্য বিলাসবহুল পণ্য যেমন; বিদেশি গৃহস্থালির পণ্য, সিরামিকস, ইলেকট্রনিকস পণ্য প্রভৃতি খাতে কর বাড়াতে হবে। রেস্তোরাঁ খাবার, ধূমপান, গাড়ির যন্ত্রাংশে উপর শুল্ক বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কর ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। দেশ থেকে অর্থ বিদেশে পাচার রোধে কার্যকারী ব্যবস্থা নেওয়া হবে আসন্ন বাজেট থেকে এমনটাই প্রত্যাশা দেশের সচেতন মহলের।
লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়