পুরুষদের তাকানোর মাঝেই তো ধর্ষণের মনোভাব

আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী গত রাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এই মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে তার বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলো। কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামার পর অজ্ঞাত ব্যক্তি তার মুখ চেপে তাকে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এই মেয়েটি এখন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। এইবার দেশে আসার পর একটা বিষয় নিয়ে লিখেছিলাম। আবারও লিখতে হচ্ছে বিষয়টা নিয়ে।

দীর্ঘ ১৭ বছর ইউরোপে থাকি। সেখানেও পুরুষ বাস করে। সেখানেও পুরুষদের যৌন আকাঙ্ক্ষা আছে। সেখানেও তাদের যৌন চাহিদা আছে। সেখানে যে ধর্ষণ হয় না; এমনও না। এর সব কিছুই আছে। যেটা নেই, আমি বরং সেটা বর্ণনা করি। দেশে আসার পর পরই আমার সব চাইতে বেশি অদ্ভুত লেগেছে বাংলাদেশের পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং চাহনি। গত এক মাস ধরে এই গবেষণা করলাম। আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করেছি, প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ বাংলাদেশি পুরুষ সরাসরি ধর্ষণ কাজে লিপ্ত হতে না পারলেও তাদের চোখ দিয়ে, তাদের চাহনি দিয়ে রাস্তা ঘাটে বের হওয়া সকল নারীদের তারা প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করছে।

ধরুণ রাস্তা দিয়ে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে, প্রতিটা পুরুষ তার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে- দেখে মনে হয় এক্ষুনি ধেয়ে আসবে! আপনি তাকাতে পারেন; তাতেও আমার কোন আপত্তি নেই। চোখ তো যেতে'ই পারে। কিন্তু তাই বলে এভাবে? দেখে মনে হয়- মেয়েটার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে ... এই পরিস্থিতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। দেশে এসে আমি সব চাইত বেশি ধাক্কা খেয়েছি এই ব্যাপারে!

ইউরোপে এতো বছর ধরে থাকছি। নিজে ছাত্র ছিলাম। পড়াশুনা করেছি। এখন শিক্ষকতা করছি। রাস্তা ঘাটে কোন দিন আমি কোন পুরুষকে তো এভাবে তাকতে দেখিনি। এমনকি মেয়েরা যদি খুব ছোট ড্রেস পড়েও হাঁটাহাঁটি করে, এর পরেও না। হ্যাঁ, অবশ্যই তাকাবে ছেলেরা। তবে সেই তাকানোর মাঝে এক ধরনের ভদ্রতা আছে।

আপনার তাকানোর মাঝেই যদি এক ধরনের ধর্ষণের মনোভাব থাকে' তাহলে তো সমস্যা। যেটা বাংলাদেশের প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ পুরুষের মাঝে আছে ( আমার গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ হলে সেটি আরও ভালো জানতে পারবেন।) এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ইউরোপের ছেলেপেলেদের কি যৌন চাহিদা নেই? তারা ভদ্র চোখে তাকায় কেন?

আপনি হয়ত এসে বলতে পারেন- ইউরোপের ছেলেপেলেরা ওদের যৌন চাহিদা যে কোন সময় মেটাতে পারে; এই জন্য হয়ত ওদের আচরণ এমন। বাংলাদেশের ছেলে-পেলেদের হয়ত সেই সুযোগ নেই। এই যুক্তিটাও ভুল।

বাংলাদেশে যেই পুরুষগুলো রাস্তায় মেয়েদের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকে; এদের সবার বয়েস তো ২০-২৫ না! ৩৫, ৪৫, ৫৫ এমনকি ৬০ বছরের বৃদ্ধও এমন ভাবে তাকাচ্ছে মেয়েটার দিকে! ওই চাহনির মাঝে'ই সে ধর্ষণ করে ফেলছে মেয়েটাকে। এরা তো সবাই বিবাহিত। এদের কারো কারো দুই দিনটা করে বউও আছে! এরপরও কেন এরা এভাবে তাকাচ্ছে? এর কারণ হচ্ছে মানসিকতা। বাংলাদেশের বেশিরভাগ পুরুষ, মেয়েদেরকে মানুষ না; শুধু যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের মাধ্যম মনে করে। যার কারণে এরা এদের চাহনির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মেয়েদের ধর্ষণ করছে।

আর যখনই সুযোগ পেয়ে যায়; তখন এরা শারীরিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে মেয়েগুলোর উপর। ঠিক যেমনটা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রীটির উপর। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হন; শিক্ষক হন, ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হন। এই দেশের পুরুষরা আপনাকে শুধু তাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের মাধ্যম হিসেবেই ভাবে। পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।

রাস্তায় পুরুষগুলো এমন ভাবে তাকাচ্ছে! এখন ভাই-বোন, মামা-ভাগ্নি এক সাথে হাঁটতে সঙ্কোচ বোধ হয়। আর কয়দিন পর মনে হয় মা-ছেলে এক সাথে হাঁটতেও সঙ্কোচ বোধ হবে!

লেখক: আমিনুল ইসলাম
বর্তমানে ইউরোপে শিক্ষকতা করছেন
সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ