বিশ্ব উষ্ণায়ন মানুষের জন্য আত্মহত্যা স্বরুপ
- আবদুর রহমান
- প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০১৯, ১২:০৩ PM , আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯, ১২:০৩ PM
বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) বর্তমান বিশ্বে পরিবেশগত প্রধান সমস্যাসমূহের অন্যতম। এটি জলবায়ুগত এমন এক পরিবর্তন আসন্ন করছে, যা প্রক্রিয়াগতভাবে গ্রিনহাউজ প্রভাবের সাথে তুলনীয়। সমস্যাটিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।
ছবিটি জার্মানির উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত Cologne নামক এক শহরের। ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনজন মানুষ তাদের গলায় ফাঁসির দড়ি বেধে দাঁড়িয়ে আছেন। ছবিতে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তারা বরফের টুকরোর উপর দাঁড়িয়ে আছে।তাদের এহেন আচরণের কারন হলো, তারা বিশ্ব ব্যাপী এই বার্তা দিতে চায় যে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং আমাদের জন্য ধ্বংস স্বরুপ।(আত্মহত্যা স্বরুপ)
কারন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিগত ৮০০০ বছর ধরে এই তাপমাত্রা প্রায় স্থির ছিল । কিন্তু গত ১০০ বছরের হিসেবে প্রমাণিত যে এই তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । গবেষণা করে দেখা গেছে, বিগত ১০০ বৎসরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ০.৫° C বৃদ্ধি পেয়েছে ।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১.৫°-২.০° C পর্যন্ত এবং ২১০০ সালের মধ্যে ১.৮°C থেকে ৬.৩° C এর মতো বৃদ্ধি পেতে পারে । কোনো না কোনো সময় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারনে বরফ গলে জল হয়ে যাবে তার ফল অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু ঠিক মৃত্যু নয়, আত্মহত্যা ।
বিশ্ব উষ্ণায়ন-এর কারণ
ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ মানুষ। হ্যাঁ আমরাই সভ্যতাকে ক্রমশ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। শিল্প, নগরায়ন, প্রগতির পথে এগিয়ে লাগামছাড়া উন্নয়নের প্রচেষ্টায় নিজের ক্ষতি নিজেরাই ডেকে আনছি আমরা। যেসব কাজের ফলে গ্রিণ হাউজ গ্যাসের বৃদ্ধি ও ওজোন স্তরের ক্ষতি হচ্ছে, সেগুলি হল-
ক) কলকারখানা, যানবাহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সবকিছুতেই জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
খ) কলকারখানা- যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, ট্যানারির বর্জ্য পদার্থ, জেট বিমান, রকেট উৎক্ষেপণ– এইসব থেকে নাইট্রাস অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফারের কণা উৎপাদন হয়, যা ক্ষতিকারক।
গ) এয়ার কন্ডিশনার, ফোম শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প ইত্যাদিতে ব্যবহৃত ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ওজোন স্তরের ক্ষতির অন্যতম কারণ।
ঘ) গাছপালার পচন, কৃষিজ বর্জ্য এবং জীব জন্তুদের বর্জ্য থেকে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের পেছনে সবথেকে বড় কারন অরণ্যচ্ছেদন। গাছপালা কেটে ফেলার জন্য বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
ঙ) রোগের প্রকোপ বৃদ্ধিঃ ম্যালেরিয়া, গোদ, কলেরা ডেঙ্গু প্রভৃতি রোগের প্রকোপ বাড়বে; তার কারণ জল বাড়লে মশা বাড়বে । আরো ভিন্ন রোগ ফিরে আসবে ,নতুন রোগ আসবে । কেনিয়ার উচ্চভূমিতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে অতীতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ প্রায় ছিল না বললেই চলে । ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ৬৯০০ ফুট উচ্চতায় এইপ্রথম ম্যালেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে।কলম্বিয়ার আন্দিজ পর্বতমালায় ৭০০০ ফুট উচ্চতায় ডেঙ্গু ও পীতজ্বর সংক্রামক মশার সংখ্যা বাড়ছে ।
নিয়ন্ত্রণ
মানব সভ্যতা ধ্বংসের মুখে প্রায়। এই নিয়ে পরিবেশবিদ্ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র সবদিক থেকে চাপ বাড়ছে সমস্যার সমাধানের জন্য। ট্রাইবুনাল, গ্রিণ বেঞ্চ ইত্যাদি গঠন হয়েছে। কিছু আশু সমাধানও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। যেমন::
⦁ কলকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।
⦁ কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে হবে।
⦁ মিথেন গ্যাস নির্গমনের উৎসগুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
⦁ জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমিয়ে অপ্রচলিত শক্তির প্রচলন করতে হবে।
⦁ গাছ-ই আমাদের টিকে থাকার অন্যতম উপায়। অরণ্য গড়ে তোলার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত করতে হবে। শক্তিসাশ্রয়ী আবাসন গড়ে তুলতে হবে।
এছাড়াও পরিবেশ রক্ষা চুক্তিগুলির বাস্তব রূপায়ণ প্রয়োজন। বিকল্প ও পরিবেশবান্ধব দ্রব্য ব্যবহার।
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বাংলাদেশে অধিক বৃষ্টিপাত, ব্যাপক বন্যা, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়, খরা প্রভৃতি জলবায়ুগত পরিবর্তন সাধিত হতে পারে। বিশ্ব উষ্ণায়ন নিঃসন্দেহে পৃথিবীর জন্য অভিশাপ। আমরা নিজেরা নিজেদের চাহিদা পুরনের জন্য বিশ্বকে উত্তপ্ত করে তুলছি প্রতিনিয়ত। জলবায়ু পরিবর্তনের অবহেলা যে মৃত্যু নয় আত্মহত্যা তা এই ছবি দ্বারা সুস্পষ্ট ।
আমার আপনার সহ সমগ্র বিশ্বের ভাবা উচিত জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। পরিবেশ রক্ষা নাগরিকদের মৌলিক দায়িত্ব । তাই বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং সৃষ্টিকারী উপাদানগুলি যাতে পরিবেশে কম পরিমানে উৎপাদিত হয়, সে বিষয়ে সকলকেই দায়িত্বশীল হতে হবে ।
সবশেষে সুকুমার রায়ের বক্তব্য দিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই–
“তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।”
লেখক: আবদুর রহমান
গণমাধ্যমকর্মী।
abdurrhaman424@gmail.com