পরীক্ষার হল প্রত্যবেক্ষণে আমানতদারির বরখেলাপ ও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া
- ড. মো. এরশাদ হালিম
- প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৩ AM
পরীক্ষার হলে প্রত্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন একজন শিক্ষকের জন্য বস্তুত একটি বড় মাপের আমানতদারি। দায়িত্বটি সঠিকভাবে পালন করতে না পারলে একদিকে যেমন কর্তব্য কর্মে অবহেলা করা হয়, অন্যদিকে তেমনই শিক্ষার্থীরা নিয়মানুবর্তিতার অনুশীলনে সঠিক পন্থায় পরীক্ষা সম্পন্ন করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠে না। ফলশ্রুতিতে পরীক্ষার মূল দর্শন সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রেই তারা অজ্ঞ রয়ে যায়।
পরীক্ষার হলে যেনতেনভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে, এমন বদ্ধমূল ধারণা পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার মূল দর্শণ থেকে বিচ্যূত করে। ফলশ্রুতিতে তারা বিভিন্ন অসৎ পন্থা অবলম্বনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত অনেকেই ভালো ফলাফল করেও থাকে যা মূলত সততার মূল্যবোধে দীপ্তমান একটি সুশিক্ষিত জাতি গঠনের পথে এক বিরাট অন্তরায়।
এতে করে সঠিক পন্থায় লেখাপড়া করে যারা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে, আর যারা পাশাপাশি বেঞ্চে বসে দেখাদেখি বা বলাবলি করে লিখে অথবা ওয়াশ রুমে গিয়ে সেখানে রেখে আসা বইপত্র পড়ে এসে বা নিজ পরিধেয় বস্ত্রের ভিতর লুকিয়ে রাখা প্রশ্নোত্তর কপি করে মনের মাধুরী মিশিয়ে পরীক্ষার উত্তরপত্র পরিপূর্ণ করে এবং একই কোর্সে সমান স্কোর অর্জন করে তখন মেধা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই দুই সম্প্রদায়ের মাঝে আদতে কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না, ঠিক যেভাবে শ্রাবনের ভরা মৌসুমে বাধ ভাঙ্গা বন্যা প্রসূত প্লাবনের ঢলে ঢাকার অভিজাত পাড়ার বিলাশবহুল ফোয়ারার পানি আর রাস্তাঘাটের উন্মুক্ত ম্যানহোল থেকে নির্গত বুড়ীগঙ্গার দুষিত পানি মিলে একাকার হয়ে যায়। এটাই রূঢ় বাস্তবতা।
ফলশ্রুতিতে প্রতি বছরেই অনেক বিভাগের পরীক্ষার্থীরা অনভ্যস্ত হওয়ার কারনে অন্যান্য বিভাগের মাইনর কোর্সের পরীক্ষাগুলোতে হলে আরোপিত কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যে পরীক্ষা চলাকালে হলের নিয়ম-কানুন বুঝে উঠতে পারে না। এদের অনেকেই পরীক্ষার হলে তাদের নিজ বিভাগে পূর্ব থেকে অনুশীলনরত অসদুপায় অবলম্বন করে থাকে। ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হয়। অনেক পরীক্ষার্থী অবচেতন মনেই ঘটে যাওয়া অসদাচরনের দায়ে হলে দায়িত্বরত প্রত্যবেক্ষক কর্তৃক প্রচলিত বিধানে কখনো বিভিন্ন সাময়িক শাস্তি আবার কখনো-বা বহিস্কারের মুখোমুখী হয়। এতে করে প্যারেন্ট ডিপার্টমেন্টের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের কর্তব্য-কর্মের প্রতি নিষ্ঠা দারুনভাবে প্রশ্নেবিদ্ধ হয়। বিষয়টি আসলেই চরমভাবে নিন্দনীয় ও হতাশাজনক।
তাই বিষয়টি এড়ানোর লক্ষ্যে নিজ নিজ বিভাগে বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বিভাগের বর্তমান ও সাবেক দায়িত্ববান ছাত্র উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী মনিটরিং টীম গঠন করে প্রথম বর্ষে ভর্তির পরপরই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিধি বিধানগুলোর ব্যাপারে উপযুক্ত কাউন্সেলিং দেয়া অত্যাবশ্যক। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য যখন বিভাগ থেকে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয় ঠিক তখনই বিভাগের চেয়ারম্যান মহোদয় সম্মেলন কক্ষে বিষয়টি উত্থাপন করে মনিটরিং টীমের সকল সদস্যের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করে দিতে পারেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের সঠিক ম্যানারিজমের আওতায় আনা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। তারপরেও বিচ্ছিন্ন ঘটনা তো কিছু ঘটবেই যদিও আমাদের উদ্দেশ্য থাকবে সেটা যতটা কমিয়ে আনা যায়। সবশেষে শাস্তির ব্যবস্থা কিংবা আইনের প্রয়োগ তো থাকবেই।
অন্যদিকে প্রত্যেক বিভাগে যারা সঠিকভাবে প্রত্যবেক্ষনের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন করে তাদেরকে এমন গুরু দায়িত্ব থেকে দূরে রাখাটাই সমীচিন। প্রয়োজনবোধে বিভাগের নিষ্ঠাবান শিক্ষকগন যদি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন কিংবা অন্যান্য বিভাগ থেকে নিষ্ঠাবান প্রত্যবেক্ষকগনকে চেয়ে পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে ভালো পরীক্ষা কনডাক্ট করার জন্য সেটাই শ্রেয়। বিভাগের শিক্ষক হলেই তাকে প্রত্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিতে হবে সময়ের প্রয়োজনে এমন বাধ্যবাধকতা থেকে বেড়িয়ে আসাটাই উত্তম। তবে প্রশ্নপত্র প্রণেতা ও কোর্স শিক্ষকের উপস্থিতির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
একজন প্রত্যবেক্ষকের জন্য পরীক্ষার হল পরিদর্শন মূলত আমানতদারির একটি জায়গা। এটা কোন ফাজলামি বা আড্ডাবাজির প্ল্যাটফর্ম নয়। আমাদের অনেকেই আছেন যারা পরীক্ষার হলে এসে প্রথমেই বিল ফর্মে সই করেন। তারপর কিছুক্ষণ মঞ্চেই উপবিষ্ট থেকে খাজুরে আলাপ করেন অথবা নিচে নেমে নিজের পছন্দের প্রজেক্ট বা থিসিস স্টুন্ডেন্টের ছোটখাট খোঁজ-খবর নিয়ে আবার স্টেজে বসেন অথবা নাশতা-পানি খেয়ে নিজস্ব ধান্ধায় বেড়িয়ে পড়েন। কেউ কেউ আবার পরীক্ষার হলে অনিয়ম দেখলেও অনেকটা কেয়ারফুল কেয়ারলেস সেজে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাদের ধারনা হয়তো-বা পরীক্ষার হলে বেশী কড়াকড়ি করলে তাদের পছন্দের শিক্ষার্থীরা তাদের রিসার্চ গ্রুপে আসবে না, অথবা তাদের অপশোনাল কোর্সগুলোকে বয়কট করবে। পক্ষান্তরে এইসব শিক্ষকরাই আবার তোষামোদির বদান্যতায় পাওয়া বিভিন্ন টক শোর টেবিলে বসে অথবা শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মশালায় প্রধান বা বিশেষ অতিথির আসন অলংকৃত করে সুশিক্ষিত জাতি গঠনে সততা, নৈতিকতা ও শিক্ষা বিষয়ে হতভাগা এই জাতিকে দিক-নির্দেশনা দেন। আসলে এই দেশে জন্মই আমার আজন্ম পাপ।
অনেকে আবার স্টেজে বসে চা-নাশতা পর্বে আড্ডাবাজির মাঝে ল্যাপটপে বসে ব্যক্তিগত কাজকর্ম, যেমন বিভিন্ন প্রোজেক্ট প্রোফাইল তৈরী কিংবা সেগুলোর চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরী করেন। মনে হয় স্টেজ থেকে একটু নিচে থেমে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গেলে নিজেদের পদমর্যাদার অবনমন হয় ঠিক যেভাবে রসায়নের ভাষায় এক কঠিন যৌগের সাথে অন্য যৌগের মিশ্রনে মূল যৌগের গলনাংকের অবনমন হয়। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকলে পরীক্ষার হলে অরাজকতা প্রতিষ্ঠিত হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। বিশেষ করে প্রতিটি কোর্সের পরীক্ষায় শেষের আধা ঘন্টা সময় ধরে পিছনের সারিগুলোতে হরিলুটের বাতাসার ঝনঝনানি শুরু হয়ে যায়। একজনের লুজ শীট পর্যন্ত পাশের টেবিলে শেয়ার করে দেয়। ফলশ্রুতিতে অনেকেরই পাপ্ত নম্বর গড়ে প্রায় ২৫% বেড়ে যায় এবং প্রাপ্ত গ্রেড এ+ এর সংখ্যা অনেকটাই দ্বিগুন হয়ে যায়। এতে করে যারা লেখপড়া করে নিজ চেষ্টায় পরীক্ষায় সন্তোষজনক স্কোর অর্জন করে তারা মূলত নানাবিধ অসদুপায় অবলম্বনে একই স্কোর অর্জনকারীদের নিকট মেধা যাচাইয়ের প্রতিযোগীতায় রীতিমত বৈষম্যের শিকার হয়।
অন্যদিকে ১০০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য ৫ জন করে প্রত্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও বাস্তবে দেখা যায় পুরোটা সময় মনপ্রাণ দিয়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন মাত্র ২/৩ জন শিক্ষক। ৫ জন শিক্ষকের দায়িত্ব কখনো ২ জন শিক্ষক দিয়ে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয় না ঠিক যেভাবে ৫ জনের খাবার ২ জন কখনো হজম করতে পারে না। সেখানে রীতিমত বদ হজম হবেই। আমাদের পরীক্ষার হলগুলোতেও অনেক ক্ষেত্রে একই অবস্থা বিরাজ করে। তবে সব বিভাগের ক্ষেত্রে এমন গর্হিত অনিয়ম প্রযোজ্য নয়। অনেক বিভাগেই প্রত্যবেক্ষকগন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে সুচারুরূপে পরীক্ষার হলগুলো ম্যানেজমেন্টের মত গুরু দায়িত্ব পালন করেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি তাদের সশ্রদ্ধ সালাম ও শুভেচ্ছা জানাই।
মূলত যেসব বিভাগে শিক্ষকগন নিষ্ঠার সাথে প্রত্যবেক্ষনের দায়িত্ব পালন করেন সেসব বিভাগের মাইনর কোর্সের পরীক্ষাগুলোতে যখন উপরে উল্লেখিত কথিত বিভাগগুলোর ছেলেমেয়েরা হরহামেশাই পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে তখন তারা মারাত্মক দুর্বিপাকের শিকার হয়। লঘু শাস্তি থেকে নানা ধরনের গুরু শাস্তির শিকার হয়। অনেকের শিক্ষা জীবন পক্ষাগাতগ্রস্ত হয়ে যায়। এমনকি অনেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ে।
এক্ষত্রে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, মাইনর কোর্সের বিভাগগুলোতে পরীক্ষার্থীর নকল ধরার সময় অনেক ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষকদের বডি ল্যাংগুয়েজ বা কথাবার্তায় মাত্রাতিরিক্ত রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে যার জের ধরে একজন ভীত সন্ত্রস্ত পরীক্ষার্থী ভুল বুঝাবুঝির কারনে অবচেতন মনে যেকোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। কারন এই সময়ে পরীক্ষার্থী পরোপুরি সুস্থ স্বাভাবিক মষ্কিকে থাকে না। তাই শিক্ষার্থীদের মানসিক ও আবেগিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় কথিত শিক্ষদেরকেও প্রয়োজনে বিভাগের পক্ষ থেকে উপযুক্ত কাউন্সেলিং দেয়া অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে, পরীক্ষার হলে অপরাধ সংঘটনকারী একজন পরীক্ষার্থী একজন শিক্ষকের নিকট সবচেয়ে বেশি অসহায় অবস্থায় থাকে ঠিক যেভাবে নিজ স্বামীর কাছে অসহায়ত্ব বরন করে একজন সত্যিকারের অবলা নারী ধর্ষিত হওয়ার পরে। কাজেই এই অবস্থায় কোন অসহায় পরীক্ষার্থীর উপর আরোপিত জুলুম কাপুরুষতার নামান্তর মাত্র।
অন্যদিকে মাইনর কোর্সের বিভাগীয় শিক্ষকদের দোষারোপ করার পূর্বে নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্যের দায়বদ্ধতার ব্যাপারে আমাদের শতবার ভাবা উচিত। পরীক্ষার হলের পুরোটা সময় মূলত পরীক্ষার্থীদের ভালো মন্দ দেখভালে ব্যস্ত থাকাই দায়িত্বরত শিক্ষকদের প্রধান কর্তব্য। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা কেবল স্টেজে বসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক আলোচনায় ব্যতিব্যস্ত থাকেন। কেউ কেউ শো অফ করার স্বার্থে স্টেজে বসেই মাঝে মধ্যে একটু আধটু হাই হৈ দিয়ে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেন।
অনেকেই আছেন যারা এখানে বসে অন্য শিক্ষকের নিম্নমানের গবেষণা প্রবন্ধ, দুর্বল ক্লাস পারফরম্যান্স বা তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানাবিধ কুৎসিত আলোচনায় মত্ত থাকেন। এই কাজগুলো মূলত তারাই করেন যাদের নিজেদের মধ্যে বহুবিধ দুর্বলতা রয়েছে অথবা ব্যাক ডোর দিয়ে শিক্ষক হয়েছেন অথবা বিভিন্ন গ্রুপের সাথে জোড়াতালি দিয়ে গবেষণা প্রবন্ধ করে নিজেদের গবেষণা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার দেউলিয়াপনা ঢাকার চেষ্টায় উদগ্রীব থাকেন।
উপরন্তু পরীক্ষার হলে শিক্ষকদের মোবাইল ফোনের ব্যবহারও সীমিত করে দেয়া উচিত। অনেকেই আছেন যারা ফোনে সাইলেন্ট মোডে ভিডিও চালু রেখে বন্ধু মহলে চ্যাট করেন। অনেকে আবার ব্যস্ত থাকেন ভিডিওতে বোট ক্লাবে কোন নায়িকার ভাংচুরের দৃশ্য অথবা জেলখানায় কোন পুলিশ অফিসারের সাথে কথিত নায়িকার বার্থ ডে পালনের অজুহাতে সংঘটিত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের লীলাখেলা কিংবা কোন বিশেষ জেলার প্রাক্তন ডেপুটি কমিশনারের ভাইরাল হওয়া অশ্লীল ভিডিও উপভোগে।
কেউ কেউ আবার আগের রাতে স্বগৃহে রান্নার উপাদেয় আইটেম ও মনগড়া রেসিপির তালিকা চা খেতে খেতে অন্যদের সাথে শেয়ার করে বাহাবা পেয়ে খুশিতে গুলগুলা হয়ে যান। অনেকে আবার অনলাইন শপিং এর মাধ্যমে কোথায় নিত্য নতুন শাড়ি-চুড়ি বা প্রসাধনী সামগ্রী সস্তায় পাওয়া যায় সেগুলোর খবরাখবর নিয়ে বেশ ওয়াকিবহাল থাকেন।
ফলশ্রুতিতে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা বিশেষ করে পিছনের দিকের সিটগুলোতে পরীক্ষার্থীরা যা না করার, তা-ই নির্দ্বিধায় করে বেড়ায়। এতে করে প্রতি ব্যাচে over all GPA, CGPA 3.5 এর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
তাই আর দেরি নয়। এখন থেকেই এ ব্যাপারে সোচ্চার না হলে মেজর ও মাইনর বিভাগগুলোর মাঝে অপ্রত্যাশিত এক সংঘাত অনিবার্য। অন্যদিকে মেধার মূল্যায়নে সত্যিকারের মেধাবী ও নিষ্ঠাবান শিক্ষার্থীরা অসৎ শিক্ষার্থীদের নিকট প্রতিযোগীতার বাজারে ধরাশায়ী হবে যা কোনভাবেই কাম্য নয়, যা মূলত সুশিক্ষিত ও বৈষম্যমুক্ত একটি জাতি গঠনের পথে প্রধান অন্তরায়। কাজেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের মাঝে পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি তাদের সততা, নৈতিকতা ও কর্মনিষ্ঠার ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়ার ব্যাপারে প্রচারনা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন কর্মশালা, সিম্পোজিয়াম অথবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষন প্রোগ্রামের আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষিত এক দুষ্টু চক্র তৈরি হবে যারা বিদ্বান হলেও সমাজের নিকট থাকবে পরিত্যাজ্য ও পরিত্যাক্ত। এতে করে সৎ ও যোগ্য বুদ্ধিজীবী শ্রেণি তৈরি না হওয়ায় রাষ্ট্রীয় প্রলয় যজ্ঞ হবে অবধারিত। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুমতি দান করুন। আমীন।
লেখক: অধ্যাপক ও গবেষক, সিনথেটিক অর্গানিক কেমিস্ট্রি এ্যান্ড কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালস, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়