মাজার ভাঙা থেকে লাশ পোড়ানো, নীরবতার দায় কার?
- ড. নাদিম মাহমুদ
- প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৮ PM
ছোটবেলায় বিটিভিতে এক সিনেমা দেখেছিলাম। ছবির নাম মনে নেই, তবে খলঅভিনেতা রাজীব কবরে গিয়ে লুকিয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়েও রক্ষা হয়নি। তার সেই ডায়ালগ ছিল, “শান্তি নাই, শান্তি নাইরে, কবরে গিয়েও শান্তি নাই।”
সিনেমার ঘটনার রাজীব জীবিত ছিল, কিন্তু মৃত মানুষকে শেষ আশ্রয়স্থল কবরে শায়িত করার পরও তার আত্মীয়-স্বজনদের মনে শান্তি থাকছে না। ঠিক এক বছর আগে জাসদ নেতা মইনউদ্দীন খান বাদলের কবর ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল, যিনি ওই ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর আগেই মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু (অ)মানুষের বাচ্চা এই জঘন্য কাজটি করেছিল, সরকার তখন ছিল নীরব।
আজ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার কবর থেকে লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে মানুষরূপী পশুরা। একই দিন রাজশাহীতে খানকা শরিফে হামলা-ভাঙচুর করেছে তারা।
প্রশ্ন হলো, কারা এই বর্বর কাজটি করছে? এই উত্তর খুঁজতে হলে গত বছরের পত্রিকাগুলো পড়ুন। সরকারের নীরব ভূমিকায় দেশজুড়ে যে মাজার ভাঙার মিছিল চলছিল, এইসব ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা। সেই সময় অনেক মাজারে শায়িত ব্যক্তিদের একই কায়দায় অপমান করা হয়েছে। এই দেশের এই জনতারা মনে করছে, দেশে ভিন্নমতের মানুষ থাকতে পারবে না, ভিন্ন ধর্মের মানুষ থাকতে পারবে না, ভিন্ন চিন্তার মানুষ থাকবে না। এই দেশটা কেবল ওদেরই। ফলে মাজার ভাঙা, কবর থেকে লাশ তোলা, পুড়িয়ে দেওয়া তাদের অধিকার বনে গিয়েছে।
এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার পর সরকার বিবৃতি দিয়েছে। প্রতিটি মানুষের জীবনের পবিত্রতা, জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলছে। এখন প্রশ্ন উঠবে, সরকার কি অতীতের অর্ধশতাধিক মাজার ভাঙার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পেরেছিল? কাউকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে পেরেছিল? নাকি বিপ্লব-পরবর্তী ক্ষোভ বলেই ঘটনাগুলো প্রশমিত করেছিল?
আমরা এমন এক বর্বর যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা, মৃত্যুর পরবর্তী সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কায়। মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ চুলোয় উঠেছে। আষ্টেপৃষ্ঠে অসহিষ্ণুতার গালগল্প আমাদের সভ্যতাকে গিলে ফেলছে। ফ্যানাটিক মবিলাইজেশন আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রটাকে গিলে খাচ্ছে। এই থেকে পরিত্রাণের সুযোগ কি? আমরা কি অন্ধকার থেকে বের হতে পারব না?
ড. নাদিম মাহমুদ: লেখক ও গবেষক; ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ই–মেইল: nadim.ru@gmail.com
(মতামত লেখকের নিজস্ব)