জুলাই অভ্যুত্থান: গণমানুষের আকাঙ্খা, রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও পিআর পদ্ধতি

পিআর পদ্ধতির নির্বাচন
পিআর পদ্ধতির নির্বাচন  © টিডিসি সম্পাদিত

জুলাই-২০২৪ মাসটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাস- যখন জনগণের সুদীর্ঘ ক্ষোভ, প্রত্যাশা ও সংগ্রাম এক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা দেয় গণ-আন্দোলনের ঢেউ, সহস্রাধিক তাজা প্রাণের বিনিময়ে যার সফল পরিণতি ঘটে গণঅভ্যুত্থানে। বছরের পর বছর ধরে আওয়ামী শাসন ব্যবস্থায় বহুবিধ সমস্যার মধ্যে অন্যতম দুর্নীতি, প্রশাসনিক অকার্যকারিতা, বিচারহীনতা, বিচার ব্যবস্থার রাজনৈতিক প্রভাব, পুলিশের মাধ্যমে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাহীনতা, সামাজিক বৈষম্য, সন্ত্রাস, ফ্যাসিবাদ, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি, একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা- এসব কিছু একত্রে জনমানসে গভীর অসন্তোষের জন্ম দেয়। সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতা আওয়ামী শাসনের জাঁতাকলে রুদ্ধ হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থী, তরুণ সমাজ, শ্রমজীবী মানুষ ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে তৈরি হয় এক অভিন্ন উপলব্ধি- এই ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। জুলাই ২০২৪-এ ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সম্মিলিত আন্দোলন সেই হতাশা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। রাজধানী থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ, আন্দোলন। বৈষম্যহীন একটি মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আশায়, ন্যায়ভিত্তিক ও অংশগ্রহণমূলক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আশায় এই অভ্যুত্থান ছিল কেবল একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেষ্টা নয়, বরং ছিল একটি গভীর সামাজিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ। বহুদিনের ক্ষোভ, বঞ্চনা ও চাপা কষ্টের বিস্ফোরণে সংঘটিত এই গণঅভ্যুত্থান। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিয়মের বিরুদ্ধে এ অভ্যুত্থান শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনার বহিঃপ্রকাশ ছিল না, বরং এটি ছিল সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের জমে থাকা আকাঙ্ক্ষার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।

তরুণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বনির্ভর, ব্যাপক নাগরিক অংশগ্রহণ সমৃদ্ধ এই গণঅভ্যুত্থান গণতান্ত্রিক সংস্কার, রাজনৈতিক সচেতনতা ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করে দিয়েছে। এই আন্দোলনের পেছনে সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি ছিল গণমানুষের মুক্তি ও ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা। ভোটের অধিকার, জবাবদিহিমূলক সরকার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতির অবসান, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, প্রশাসনে জবাবদিহিতা ও দুর্নীতির শাস্তি নিশ্চিত করা, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা, সংবিধানিক সংস্কার ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের দাবিগুলো কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং তা গণমানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদা ও সামাজিক ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষা থেকে উৎসারিত। জনগণের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা এখন শুধুমাত্র সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং সম্মানজনক জীবন, নিরাপদ ভবিষ্যৎ, অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতাও গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, নির্বাহী বিভাগের প্রভাব, দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন, মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন; আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে প্রশাসনিক সংস্কার; স্বাধীনতা ও সময়মতো বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার সংস্কার; শক্তিশালী ও স্বায়ত্তশাসিত করার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংস্কার তথা রাষ্ট্র সংস্কারের এক ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী এদেশের আপামর মানুষের চাওয়া শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে জনগণের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত হবে, এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা জনগণের শাসক না হয়ে সেবক হবে, এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন কাঠামোগত ও দীর্ঘস্থায়ী সংস্কার। একটি অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এরূপ রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্ভব। উন্নত গণতন্ত্র তথা জবাবদিহিতা ও সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন আবশ্যক।  

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation, সংক্ষেপে PR) হলো এমন একটি নির্বাচন পদ্ধতি, যেখানে সংসদ বা পার্লামেন্টের আসনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর মোট ভোটের আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হয়। অর্থাৎ যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে তারা আসন পাবে।  সংসদে ৩০০টি আসন আছে। একটি দল যদি ৩০% ভোট পায় তবে তারা ৯০টি আসন পাবে; আরেকটি দল ১০% ভোট পেলে, তারা ৩০টি আসন পাবে। এতে ছোট ছোট দলও সংসদে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাবে। PR পদ্ধতির বেশকিছু ধরন আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত দুটি হলো: (১) List PR System ও (২) Mixed-Member Proportional (MMP)।  List PR System আবার দুই ধরনের: (ক) Closed List: ভোটাররা কেবল দলকে ভোট দেন। কোন প্রার্থী সংসদে যাবেন, তা দল ঠিক করে; (খ) Open List: ভোটাররা দলকেও ভোট দেন, আবার প্রার্থীর নামও বেছে নিতে পারেন। কে সংসদে যাবে, তা ভোটারের পছন্দে নির্ধারিত হয়। Mixed-Member Proportional (MMP) পদ্ধতিতে কিছু আসন হয় সরাসরি নির্বাচনের (First-Past-The-Post), বাকি আসন হয় আনুপাতিকভাবে। এতে সরাসরি নির্বাচনের উপকারিতা এবং PR-এর ভারসাম্য থাকে। যেমন, জার্মানিতে এই পদ্ধতি আছে। PR পদ্ধতির বহুবিধ সুবিধা আছে, যেমন ছোট দলগুলোরও সংসদে যাওয়ার সুযোগ হয়, এতে জনগণের বিভিন্ন মতামত প্রতিফলিত হয়; ভোটের অপচয় কম হয় অর্থাৎ বর্তমানের First-Past-The-Post (FPTP)-এর মতো “হারলেই শূন্য” অবস্থা হয় না, ভোটের চূড়ান্ত ফলাফলে প্রায় সব ভোটের মূল্য থাকে; একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন ফলে বিভিন্ন দলকে মিলেমিশে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হয় এবং এতে একনায়কত্বের ঝুঁকি কমে যায়। জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সুইডেন, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে PR পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। PR পদ্ধতির মূল অসুবিধা হলো ছোট দলের সহজেই সংসদে ঢোকার সুযোগে সরকারে চরমপন্থী দলের প্রবেশ ঘটতে পারে ও তাদের প্রভাব বেড়ে যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে লেখকের নিজস্ব মতামত হলো সংস্কারেই এরূপ নিয়ম সংযোজন করা উচিত যে, কোনো দল ১৫% বা ১০%-এর কম ভোট পেলে বা আইনানুযায়ী কোনো দলকে চরমপন্থী দল হিসাবে ঘোষণা করা হলে তারা সংসদে কোনো আসন পাবে না। সংসদে চরমপন্থী দলের অনুপ্রবেশের এই অসুবিধাটি ছাড়া গণতন্ত্রের উন্মেষের জন্য PR পদ্ধতির বিকল্প নাই। তাই বিশ্বের বহু দেশেই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিকে গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের আরও সঠিক উপায় মনে করা হয়।

Closed List PR পদ্ধতিতে যেহেতু সারাদেশই একটি  constituency, ভোটাররা যেহেতু কোন ব্যক্তিকে নয় বরং দলকে ভোট দেন এবং দল এমপি নিয়োগ প্রদান করে, তাই আশা করা যায় অযোগ্য, অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত, চরিত্রহীন, কালো টাকার মালিক বা সন্ত্রাসী কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য হতে পারবে না। এতে করে ভোটচুরি হবে না, স্থানীয় পর্যায়ে ব্যক্তির প্রভাব নিয়ে মারামারি-হানাহানিও থাকবে না, থাকবে না ভোটের মাঠে কালো টাকার দৌরাত্ম্য। মোদ্দা কথা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায্য নির্বাচন পদ্ধতি, যা ভোটারদের মতামত ও রাজনৈতিক বৈচিত্র্য সংসদে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়। অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র গড়তে PR পদ্ধতি একটি কার্যকর পন্থা।

PR পদ্ধতিতে সংস্কার প্রক্রিয়ায় বহু চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, সংস্কারের যাত্রা দীর্ঘ ও কণ্টকাকীর্ণ হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো গোষ্ঠীর সংস্কারকে দমন করার প্রচেষ্টা, বিভ্রান্তিমূলক প্রচার ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, আন্দোলনে  বিভাজন বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।  কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের ভেতরে জুজুর ভয় যে PR পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচনে ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের ন্যায় জনগণের উপর ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ব ফলাতে পারবে না, জুলুম করতে পারবে না, একচ্ছত্র দাপট দেখাতে পারবে না! এছাড়াও দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ে তোলার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে কেননা কেউ তা করলে কোয়ালিশন সরকারের ভেতর থেকেই কথা উঠবে। কেউ কেউ সমালোচনার জন্যই শুধু সমালোচনা করে বলছে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। মূলত সব নির্বাচনই একটি জটিল প্রক্রিয়া, তাই বলে কী নির্বাচন বন্ধ আছে? মানলাম PR পদ্ধতির নির্বাচন একটি জটিল প্রক্রিয়া, এটা কী হার্টের বাইপাস সার্জারির চেয়েও জটিল প্রক্রিয়া? কারো প্রয়োজন হলে হার্টের বাইপাস সার্জারি কী বন্ধ করে রাখা হবে? রাষ্ট্রযন্ত্র যখন কলুষিত স্বৈরতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ, লুটপাটের জাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তখন জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তার শুশ্রূষা করতে হবে বৈ কি!   

PR পদ্ধতির নির্বাচনী সংস্কারে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দিয়েছে দেশের একটি বড় দলের অনীহা ও বিরোধিতা। সংস্কারে বড় দলটির বাঁধা দেওয়ার কারণ তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি মূলত ক্ষমতা কেন্দ্রিক। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে। হাজার হাজার শহীদ ও আহতদের রক্তের সাথে বেঈমানি করে তারা রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আসলে আওয়ামী লীগ ও তারা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ক্ষমতায় না যেতেই তারা যেভাবে দলবদ্ধ ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড (মহাখালীর ঘটনা), দখলবাজি শুরু করেছে তাতে আরেক ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতায় না যেতেই তারা যেভাবে জুলাই অভ্যুত্থানকে পাশ কাটিয়ে সংস্কারের বিরুদ্ধে স্ট্যান্ড নিয়েছে, ক্ষমতায় না আরোহণ করতেই যেভাবে দেশটাকে নিজেদের সম্পত্তি ভাবা শুরু করেছে, লুটপাটের লোভে সংস্কারের দাবিকে উপেক্ষা করা হচ্ছে,  তাতে  গণতন্ত্র তথা রাষ্ট্রীয় সংস্কার, গণতন্ত্রের বিকাশ আতুর ঘরেই মুখ থুবড়ে পড়বে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে! আর তা দেশের জন্য বড় অশনিসংকেত মনে হচ্ছে। সেই বড় দলটি কী চায় না বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উন্মেষ ঘটুক, গণতন্ত্র বিকশিত হোক- গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্তরণ হোক; তারা কী চায় না কোনো একনায়ক ফ্যাসিস্ট যেন ক্ষমতায় না যেতে পারে; দেশে আধুনিক শাসন-ব্যবস্থা প্রবর্তন হোক, লুটেদের হাত থেকে মানুষ নিরাপদ থাকুক? তারা যদি মানুষের কল্যাণ সত্যই চায় তবে তাদেরকে সংস্কারে অবশ্যই অংশ নিতে হবে। নয়তো তারাও একদিন মানুষের আদালতের রায়ে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। দেশটা কোনো দলের একার সম্পত্তি নয়, দেশটা ১৮ কোটি মানুষের সম্পদ। এখানে একক কোনো রাজনৈতিক দলকে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য, কল্যাণের জন্য লিখে দেয়া হয়নি। জুলাই অভ্যুত্থান দেখিয়েছে, জনগণই দেশের প্রকৃত মালিক যা সকল রাজনীতিবিদদের মনে রাখতে হবে।

জুলাই অভ্যুত্থান শুধু আন্দোলন নয়, সুসংগঠিত রূপান্তর প্রচেষ্টা, জনসচেতনতা, ঐক্য ও নেতৃত্ব সংস্কারের দিকনির্দেশনা। জুলাই অভ্যুত্থান শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে বিদায় নয় বরং এটি দেশ পরিবর্তনের এক টার্নিং পয়েন্ট। এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক রূপান্তর নয়; বরং একটি রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার গণভিত্তিক পুনর্গঠনের রূপরেখা তৈরি করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।  দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে না পারলে, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনা সম্ভব না হলে জুলাই অভ্যুত্থানের সহস্রাধিক শহীদদের রক্তের সাথে গাদ্দারী করা হবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সংস্কারগুলো যদি ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় এবং জনগণের সম্পৃক্ততা বজায় থাকে, তবে বাংলাদেশ সত্যিকারের একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে এবং শহীদদের আত্মত্যাগ ও আহতদের রক্তদান, আন্দোলনকারীদের প্রচেষ্টা সফল হবে।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক


সর্বশেষ সংবাদ