ভারতের পিএইচডি ছাত্রের চেয়ে বাংলাদেশের প্রভাষক-সহকারী অধ্যাপকের বেতন কম

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন  © টিডিসি সম্পাদিত

দ্য নিউ ইন্ডিয়ান পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে আইআইটি-দিল্লি তাদের পিএইচডি ফেলোশিপ বাড়িয়ে প্রতি মাসে ৬০ হাজার ভারতীয় রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ৮৩ হাজারের বেশি করেছে। এই ফেলোশিপই ভারতে সর্বোচ্চ। এর আগে ছিল ৫০ হাজার রুপির আশেপাশে। তার সাথে আবার আছে একটি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট’র সুবিধা।

আর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক বেতন পান ৮০ হাজার টাকার আশেপাশে। তাহলে বুঝুন একজন প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক ভারতের একজন পিএইচডি ছাত্রের চেয়ে কম বেতন পান। মাত্র কয়েক দিন আগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখলাম, তারা পিএইচডি ফেলোশিপ বাড়িয়ে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা করেছে, যা সম্ভবত বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ ভারতের অর্ধেক। 

তাহলে একজন পিএইচডি ছাত্রের মাসিক ফেলোশিপ ৪০ হাজার টাকা যদি দেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষককে কত দেবেন? যার পিএইচডি আছে এবং যিনি সহকারী অধ্যাপক তাকে কত দেবেন? আর  যার পিএইচডি আছে এবং পোস্ট ডক্টরাল অভিজ্ঞতা আছে, তাকে কত দেবেন? মনে রাখতে হবে, ৪০ হাজার দিয়ে একদিকে যেমন ব্রেইন ড্রেইন থামাতে পারবেন না, অন্যদিকে ভালো মানের গবেষনাও হবে না।

ভারত যে ৮৩ হাজার টাকা দেয়, সেই টাকা দিয়ে ভারতে তার যে ক্রয় সক্ষমতা হয় সেটা বাংলাদেশে ১ লাখ টাকার বেশি দিয়ে সেই সক্ষমতা অর্জন সম্ভব। অথচ বাংলাদেশের একজন অধ্যাপক যার পিএইচডি আছে, গবেষণার অভিজ্ঞতা আছে, শিক্ষার্থী মেন্টরিং করে তাকে দেন ১ লাখ টাকা। ভারতে একজন পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো পায় ৮০ হাজার রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় অধ্যাপকের বেতনের চেয়ে বেশি। আর ক্রয় সক্ষমতার কথা বাদই দিলাম। 

তাহলে কীভাবে আশা করবেন মেধাবীরা এই দেশে থাকবে? কীভাবে আশা করেন শিক্ষকরা পার্ট টাইম পড়াবে না। এই স্যালারি স্ট্রাকচার বাধ্য করে শিক্ষকদের একাধিক জায়গায় পার্ট টাইম কিছু করতে। আর সেটা না করলে ধান্দাবাজি করে হলেও সে কিছু আর্থিক সুবিধা অর্জন করবে। খোঁজ নিয়ে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল সংখ্যক শিক্ষক অন্যত্র পার্ট টাইম পড়ায়। 

আরো পড়ুন: হৃদরোগের জাতীয় প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র গবেষণা, প্রকাশ হয় না জার্নালও 

কেউ আনন্দে ঘুরতে ঢাকার জ্যাম পেড়িয়ে অন্যত্র গিয়ে পড়িয়ে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে বঞ্চিত করে না। স্রেফ বাধ্য করা হয়। যতদিন না এই সমস্যাকে মেরামত করা হবে, ততদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের উন্নতি হবে না। অন্তত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মান বিবেচনা করে একটা সম্মানজনক বেতনতো দেবেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই পোস্ট ডক নাই। বর্তমান বিশ্বে এটি কি ভাবা যায়? বিদেশি পোস্ট -ডক ফেলো ও বিদেশি পিএইচডি ছাত্র আনতে হলেওতো ফেলোশিপের অর্থের পরিমান বাড়াতে হবে। এটি বাড়াতে গেলে বাই ডিফল্ট শিক্ষকদের বেতন স্যালারি বাড়াতে হবে। এ জন্যই আমি বলে আসছি, সব শ্রেণীর শিক্ষকদের জন্য একটা উন্নত স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা ছাড়া এই জাতির উন্নতি সম্ভব নয়।

এখন প্রশ্ন হলো, আমরা দেশে ভালো মানের গবেষণা হোক, পিএইচডি ডিগ্রি হোক, সেটা কি চাই? যদি চাই, তাহলে দেশি ও বিদেশি মেধাবীদের আকৃষ্ট করে এমন ফেলোশিপ দিতে হবে। তাহলে পিএইচডি ফেলোশিপও ন্যূনতম ৭০ থেকে ৮০ হাজার করতে হবে। যদি এইটা ফিক্সড হয়, তাহলে পোস্ট ডক ফেলোকে নিশ্চই ন্যূনতম ১ লাখ টাকা দেবেন। 

এটা যদি ফিক্সড হয়, তাহলে পিএইচডি ডিগ্রীধারী একজন সহকারী অধ্যাপককে নিশ্চই ন্যূনতম ১ লাখ ২০ হাজার দেবেন। এর মানে হলো, সব শ্রেণির শিক্ষকদের জন্য একটা স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা জরুরি। এখানেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রাণভোমরা।

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(ফেসবুক থেকে নেওয়া


সর্বশেষ সংবাদ