হৃদরোগের জাতীয় প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র গবেষণা, প্রকাশ হয় না জার্নালও 

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল  © টিডিসি ফটো

ঢাকার শের-ই-বাংলা নগরের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল হৃদরোগের (হার্ট) চিকিৎসায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান। তবে এখান থেকে হৃদরোগ সর্ম্পকিত কোনো জার্নাল প্রকাশিত হয় না। খুবই সীমিত ও নামমাত্র গবেষণা (থিসিস) কার্যক্রম চলে। ইনস্টিটিউটের রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম ২০১৫ সালে শুরু হয়ে এক দশক পার করলেও এ খাতে নেই দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি। ধুকে ধুকে চলছে প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমও।

সম্প্রতি চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ও জার্নাল নিয়ে কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ উল্লাহ ফিরোজের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, এখানকার বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে গবেষণা করেন। তবে এখান থেকে কোনো জার্নাল প্রকাশিত হয় না। 

ইনস্টিটিউটের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের বিষয়ে মেডিকেল অফিসার ডা. জেড এম হাসান বলেন, এই ইনস্টিটিউট দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড়। এখানে যারা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী, তারা নিয়মিত থিসিস করেন। তাদের গবেষণার ফলাফল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়।

ইনস্টিটিউটটিতে ২০১৫ সালে রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম শুরু হয়। এরপর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ১৫০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন কোর্সে অধ্যয়নরত আছেন। তারা বিভিন্ন চিকিৎসা শাখায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্ডিওলজি বিভাগে ১৩টি ইউনিট রয়েছে। হার্টের রিং ও ভাল্ব সংক্রান্ত চিকিৎসায় যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি। রিং বসানোর জন্য সরকারি প্রসিডিউর চার্জ হিসেবে ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে কিছু রোগী এবং কিছু সরকার খরচ বহন করে। হার্টের রিং কেনার জন্য খরচ পড়ে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া এখানে এন্ডোস্কোপির জন্য সরকারি খরচ ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়।’

জার্নালের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের এখানে কোনো জার্নাল প্রকাশিত হয় না। তবে আমরা ভবিষ্যতে এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথা ভাবছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজগুলোকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য একটি মানসম্পন্ন জার্নাল প্রকাশ করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে মূল সমস্যা হলো, স্পেশালাইজড কার্ডিওলজিস্টের অভাব। আমাদের বেডের সংখ্যা ১২শ হলেও রোগী ভর্তি হয় প্রায় তিন হাজার। এর সঙ্গে আরেকটি সমস্যা হলো, যারা ফ্লোরিং করে, তাদের সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা।’

প্রথিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচ ধরনের কোর্স রয়েছে বলে জানান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাসান। সেগুলো হলো, এমডি (অভ্যন্তরীণ চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ তৈরি করে), এমএস (শল্যচিকিৎসকদের জন্য), ডিকার্ড এমএস ভাসকুলার (কার্ডিওভাসকুলার সার্জারির ওপর গুরুত্ব দেয়), এমডি কার্ডিয়াক (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের জন্য) ও এমডি পেডিয়াট্রিক (শিশুদের চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়)। এসব কোর্স আমাদের এখানে চিকিৎসা শিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, এখানে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৩০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তারা বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীনে তাদের আ্যকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় শিক্ষার্থীরা উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান অর্জন করে।

ইনস্টিটিউটটিতে ২০১৫ সালে রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম শুরু হয়। এরপর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ১৫০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন কোর্সে অধ্যয়নরত আছেন। তারা বিভিন্ন চিকিৎসা শাখায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এভাবে ইনস্টিটিউটটি প্রতি বছর নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে তাদের চিকিৎসা ক্ষেত্রের বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষিত দেয়, যোগ করেন তিনি। 

এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট যথেষ্ট উন্নত এবং এখানে মোট আটটি ল্যাব রয়েছে। তবে ইনস্ট্রুমেন্টের পরিমাণ যথেষ্ট না থাকায় কিছুটা ব্যত্যয় ঘটে। এ বিষয়টির উন্নতির জন্য আমরা কাজ করছি, যাতে শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ করা যায়।’

তাঁর ভাষ্য, প্রfকটিক্যাল ক্লাসগুলোয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনিটরের মাধ্যমে দূর থেকে একজন রোগীর মৌলিক চিকিৎসার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করেন। তারা পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইডের মাধ্যমে প্রাথমিক ধারণা নেন। এরপর মনিটরের সাহায্যে আরও বিস্তারিত বিষয়ে শেখানো হয়। এভাবে শিক্ষার্থীরা থিওরি ও প্র্যাকটিক্যাল ধারণা সমন্বিতভাবে অর্জন করতে পারেন।  

তিনি বলেন, প্রতি বছর এখানে হার্টের বিদেশি এক্সপার্টরা এসে বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন এবং হৃদরোগ সম্পর্কিত তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। এ ধরনের প্রোগ্রামগুলো সাধারণত বছরে এক বা দুবার অনুষ্ঠিত হয়। কিছুদিন আগে জাপান থেকে আগত ২-৩ জন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এখানে এসেছিলেন। তারা তাদের হৃদরোগ সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যা শিক্ষার্থীদের এবং পেশাদার চিকিৎসকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

এ প্রতিষ্ঠানটি মূলত হৃদরোগ বিষয়ে দেশের একটি প্রধান ইনস্টিটিউট। এখানে ১০৫ জন চিকিৎসক এবং ১৫টি বিভাগ নিয়ে আ্যকাডেমিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ইনস্টিটিউটটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। যেখানে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে, তিনি যোগ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনস্টিটিউটের একজন রেসিডেন্ট (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী) বলেন, ‘এখানে গবেষণা বলতে মূলত থিসিসের কাজকে বোঝানো হয়। অন্য কোনো ধরনের গবেষণা কার্যক্রম এখানে পরিচালিত হয় না। তাছাড়া দেশের সেরা হৃদরোগ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখান থেকে নিয়মিত জার্নাল প্রকাশিত হওয়া উচিত, যা আমাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘লজিস্টিক সাপোর্টের ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি রয়েছে, যা আমাদের গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। আমরা আশা করি, প্রশাসন এ চ্যালেঞ্জগুলো দ্রুত সমাধান করবে, যাতে আমরা চিকিৎসাক্ষেত্রে অর্জিত জ্ঞান ও গবেষণার ফল যথাযথ প্রয়োগ করতে পারি।’

আরো পড়ুন: কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি-সদস্যদের সম্মানী বন্ধ, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর

শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরি সুবিধা ও ধারণক্ষমতা নিয়ে জানতে চাইলে হেড অব লাইব্রেরিয়ান আনিছুল হক বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে গবেষণার পরিবেশ তেমন উন্নত নয়। যদিও ব্যক্তিগতভাবে কিছু গবেষণা পরিচালিত হয়, তবে কোনো জার্নাল নেই। আগে গবেষণা সম্পর্কিত একটি অর্গানাইজেশনাল ডিভিশন ছিল। তবে পরে এর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে এবং তারা মাঝে মাঝে এখানে ভিজিট করে। বিশেষ করে, কার্ডিওলজি বিষয়ে যেসব বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, তারা এখানে এসে ধারণা দেন। অতীতে মন্ত্রীসহ সবাই এখানে চিকিৎসা নিতেন। কিন্তু এখন প্রাইভেট সেক্টরের উন্নতির কারণে এখানে রোগীর সংখ্যা কমেছে। 

আনিছুল হক সরকারের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরে বলেন, এখানে উন্নত মেশিনারীজের প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের বিদেশে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া এবং শিক্ষাক্ষেত্রের যথাযথ উন্নয়ন করা দরকার। এছাড়া লাইব্রেরির বর্তমান ধারণক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত এবং লাইব্রেরির সেবা সম্প্রসারণের প্রয়োজন রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence