রাজনীতিতে অহমিকা বা দম্ভোক্তি মূল্যহীন

সাইদুর রহমান
সাইদুর রহমান  © টিডিসি সম্পাদিত

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অহমিকা বা দম্ভোক্তি মূল্যহীন। বাস্তবতার আলোকে অগ্রসর হতে হবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। বাস্তবতাকে অবজ্ঞা বা অগ্রাহ্য করলে খারাপ পরিণতি ডেকে আনে। রাজনীতি লুটপাট, অবৈধ অর্থ ইনকাম, অন্যায়, অবিচার, ফ্যাসিবাদ পুর্নবাসন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, গুন্ডামি, চুরি বা ছিনতাইয়ের ঢাল হতে পারে না। জনগনের চাওয়া, মানসিক পরিস্থিতি বুঝতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে। রাজনীতির যে ধারা শুরু হয়েছে তাতে আগামীতে  রাজনীতিবিদদের জনগণের কাছে যেতে হবে,দুয়ারে গিয়ে মনজয় করতে হবে। এর কোন বিকল্প নাই। অবৈধভাবে বা বল প্রয়োগ করে অর্থ আয়ের দিন শেষ হচ্ছে।  

জুলাই-আগস্ট গণবিপ্লবের পর অনেক রাজনীতিক দ্বিতীয় জীবন পেয়েও প্রথম জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেনি। বরং পুরাতন স্টাইলের ডনগিরি রাজনীতির ফরমেটে গিয়ে নিজের এবং পরিবারের ভাগ্যে উন্নয়নে মনোযোগী হয়ে পড়েছেন। অপমান-অপদস্ত করে যাচ্ছেন শিক্ষিত সমাজকে। চোর-বাটপার-টাউটদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কখনো সীমান্ত দিয়ে আওয়ামী লীগের তথা ফ্যাসিবাদের বড় বড় নেতাদের পার করে দিয়ে অর্থ নিচ্ছেন, আবারো কখনো সেরা করদাতাদের মঞ্চে তুলে পুলকিত হচ্ছেন, আবার কখনো ফ্যাসিবাদের দোসর উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার সাথে নিয়ে অহরম দহরম সম্পর্ক রেখে লাভবান হচ্ছেন। এতে বরং নেতা লাভবান হয়েছে ঠিকই কিন্তু ক্ষতি হয়েছে দলের। কারণ যাদের কাছে থেকে নেতা সুবিধা নিয়েছেন তাতে তাদের দ্বারা তো দুর্দিনে দলের কর্মীরা নির্যাতিত-নিপীড়িত। 

আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য যে, অর্থের লোভ আর লালসায় পড়ে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ব্যক্তিরাও বর্তমানের সাথে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছে। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপির কিছু নেতা অর্থের দিকে ঝুঁকি পড়েছে। লোভের কাছে নিজেকে অর্পন করেছেন। বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে কোন কিছু লুকিয়ে থাকে না। অবৈধ সম্পদের মোহে নেতারা নানা অপরাধের চেয়ে অপরাধের প্রতিবাদকে বড় করে দেখছেন। কোন নেতার কাছে যখন "ধর্ষণ করার চেয়ে শুনা" অপরাধ মনে হয় তখন আল্লাহ স্বয়ং ওই নেতার উপর অসন্তুষ্ট হন। 

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনবাজি রেখে মুক্তিসেনানীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো, লাখ লাখ শহীদ এবং মা-বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময় একটি মানচিত্র পেয়েছিলাম। সেই মানচিত্রটি শকুনেরা কুরেকুরে খেয়ে ফেলছিলো। বাংলাদেশে দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচারের উর্বরভূমিতে পরিণত হয়েছিলো। কেড়ে নেয়া হয়েছিলো ভোটাধিকার, মানবাধিকার এবং সকল প্রকার বাকস্বাধীনতা। 

পাকিস্তানীদের ২৪ বছরের শোষন-বঞ্চণা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলো ১৯৭১। তেমনি ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের দু:শাসন, অর্থলোপাট, ভোটডাকাতি চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়েছিলো। জুলাই-আগস্ট বিপ্লব আমাদের মুক্তি দিয়েছে। মুক্তির পথ দেখিয়েছে। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বিগত ৫ আগস্টের গণবিপ্লব কেন হয়েছিলো সেটি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উপলব্ধি করতে হবে। যিনি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হবেন, তিনি আগামীর রাজনীতি থেকে ছিটকে যাবেন। 

অনাকাঙ্খিক সুবিধাভোগী হয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিপীড়ক-নির্যাতকের ভূমিকায় থাকলে হবে না। পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাঠের কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। হাইব্রিডদের চিহ্নিত করে নেতার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে। ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ যেটা করেছিলো সেটির পুর্নরাবৃত্ত করা যাবে না। যারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনৈতিক বার্তা বুঝতে ভুল করছেন, তারা ভুলপথে আছেন। সাময়িক লাভের আশায় নিজেকে বির্সজন দিবেন না।

বড় বড় রাজনীতিক কর্তৃক ত্যাগীদের অবমূল্যায়নে হাইব্রিডরা ফ্রন্টলাইনে। ঘাঠে-মাঠের নিয়ন্ত্রণ হাইব্রিডদের। বিশাল বিশাল বাহিনী করে অর্থ আয়ের গোমর ফাঁস হচ্ছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর ত্যাগীদের প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের এমন অনাচারের বিচার হচ্ছে এবং হবেও। ত্যাগীদের কষ্ট দিতে নেই, তাদের অসম্মান করতে নেই। তারা আমাদের সম্পদ। এই ত্যাগীদের রক্ত ঘামের উপর ভিত্তি করেই ফ্যাসিবাদের পতন। বর্তমান রাজনীতি করতে হলে আগে ত্যাগীদের চোখের ভাষা, বডি ল্যাংগুইজ বুঝতে হবে। 

কেন্দ্র এবং তৃণমূলের বিএনপির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বুঝতে হবে, জনাব তারেক রহমান কি বলছেন, কি বোঝাতে চাচ্ছেন? উনার বক্তব্য ধারণ করতে না পারলে রাজনীতিক হিসেবে অনেকেই পিছিয়ে পড়বেন। গতানুগতিক রাজনীতিক কর্মকান্ডে হারিয়ে যাবেন অনেক বটবৃক্ষও। যদি জনগনের ভোটে তারেক রহমান ক্ষমতাসীন হন তাহলে অপশাসন এবং জঞ্জালমুক্ত নতুন বাংলাদেশ বির্নিমান করতে চান। সবধর্মের, সবমতের মানুষকে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চান। তিনি অনাচার, অবিচার, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বদ্ধপরিকর। 

লেখক: রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ক সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক


সর্বশেষ সংবাদ