ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে প্যাঁচের দায় কার?

আশরাফুল ইসলাম
আশরাফুল ইসলাম  © টিডিসি ফটো

বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আমরা সবাই কমবেশি জানি। যুক্তরাজ্যের ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্নাতক পর্যায়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের সংখ্যা ৪৩। এ ছাড়া রয়েছে ৩৬টি আধা স্বায়ত্তশাসিত কলেজ। কোনো দিন কি শুনেছেন অক্সফোর্ডের অধীন কোনো একটি কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসে অক্সফোর্ড শহর ঘেরাও করেছে, নিজের শহরের মানুষকে জিম্মি করেছে। তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কেন রাস্তায় নেমে মারামারি বাধাচ্ছে, শহর অচল করে দিচ্ছে? কারা তাদের আজ এ অবস্থায় ঠেলে দিল?

কারণ খুঁজতে গেলে প্রথমেই আসবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং তার তৎকালীন মাথামোটা শিক্ষা প্রশাসন। ২০১৪ সালে ‘বিনা ভোটের’ নির্বাচনের পর ক্ষমতায় থাকা পাকাপোক্ত করতে তৎকালীন ঢাবি উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের ‘চিপা’ বুদ্ধিতে মূলত এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। ব্যক্তিগতভাবে এই সিদ্ধান্ত ছিল আরেফিন সিদ্দিকের জন্য একটা মাস্টারস্ট্রোক।

প্রথমত, এর মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশীদকে টেক্কা দেওয়া সহজ হয়েছিল তার জন্য। নীল দলপন্থী হলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক হারুন স্যারের সঙ্গে আরেফিন সিদ্দিকের দ্বন্দ্ব ছিল অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। দ্বিতীয়ত, ঢাকার সাত কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর নিয়ন্ত্রণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাবি প্রশাসনের হাতে নিয়ে আসা। ব্যাপারটা ছিল অনেকটা ট্রেড ইউনিয়ন নেতার শ্রমিক নিয়ন্ত্রণের মতো।

আরও পড়ুন: রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়: স্থায়ী ক্যাম্পাস আর কত দূর?

শেখ হাসিনাকে আরেফিন সিদ্দিক বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, এই এক লাখ শিক্ষার্থীকে ঢাবির অধীনে নিয়ে এলে পড়ালেখার মান ভালো হবে, তাদের সার্টিফিকেটের দাম বাড়বে। অথচ এই লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে কীভাবে ঢাবি প্রশাসন সেবা দেবে, সেটার কোনো পরিকল্পনা না করেই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। ‘লাঞ্চের পরে আসেন’-খ্যাত ঢাবি রেজিস্ট্রার অফিসের সেই সামর্থ্য বা ইচ্ছা কোনোটাই তখনো ছিল না, এখনো আছে বলে মনে হয় না। নিজের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাবি থেকে এমবিএর একটা সার্টিফিকেট তুলতে আমাকে যে পরিমাণ সময় ব্যয় করতে হয়েছে, সাত কলেজের একজন শিক্ষার্থীর তাহলে কী পরিমাণ যন্ত্রণা, অপমান অথবা হয়রানি পোহাতে হয়, এটা সহজেই অনুমেয়।

কাগজে-কলমে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি আমি। তার একটি ঢাবি। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হলো, চাকরির বাজারে ঢাবির সার্টিফিকেটের চেয়ে আইবিএর সার্টিফিকেটের দাম বেশি। কারণ, চাকরির বাজারে যেটা দেখা হয়, সেটা হলো ‘আপনি কী পারেন?’ কী পারেন বলতে আপনি কোন কাজে দক্ষ। যেকোনো একটা কাজে আপনি যদি বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তাহলে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, আপনাকে চাকরি খুঁজতে হবে না, উল্টো চাকরিই আপনাকে খুঁজে বেড়াবে।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীরা যদি রাস্তাঘাটে মারামারি করে, কীভাবে সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখব?

এ কারণেই চাকরিপ্রার্থী বেকারের সংখ্যা লাখ লাখ হলেও আমাদের দেশে প্রায় সব খাতে দক্ষ জনবলের ব্যাপক অভাব রয়েছে। এখনো ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে লোক এনে আমাদের এখানে নিয়োগ দিতে হয়। শুধু ভারতীয়রাই আমাদের দেশ থেকে কাজ করে বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স তাদের দেশে নিয়ে যায়।

সামনে এমন দিন আসছে যখন বড় করপোরেট কোম্পানিগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট দেখে নিয়োগ দেওয়ায় হয়তো বন্ধ করে দেবে। বড় বড় এমএনসি বা করপোরেট প্রতিষ্ঠান এখন চায় নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ লোকবল। সেই চাহিদা যে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ পূরণ করতে পারবে, তাদের গ্র্যাজুয়েটরাই চাকরি পাবে।

আবার যুক্তরাজ্যে যাই। আইনে স্নাতক (এলএলবি) ডিগ্রির জন্য সেই দেশের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের (ইউওএল) বিশ্বব্যাপী একটা সুনাম আছে। অথচ ইউওএলর অধীন ছয়টি কলেজ অথবা প্রতিষ্ঠান বার্কবেক, কিংস কলেজ লন্ডন, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স, কুইন মেরি, সোয়াস ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এলএলবি ডিগ্রির মর্যাদা কোনো অংশেই ইউওএলর চেয়ে কম নয়, অনেক ক্ষেত্রে বেশি। কেউ যদি বলে, আমি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের গ্র্যাজুয়েট তাঁকে বিশেষ সম্মানের চোখে এখনো দেখা হয়। এখন আমি যদি বলি, ঢাকা কলেজ বা অন্য ছয়টি কলেজ কি শিক্ষার মানে ঢাবিকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে। উত্তরটা সবারই জানা। তাহলে রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কী কোনো লাভ হবে?

আরও পড়ুন: জামায়াত-শিবিরের দাবার গুটি ছাত্ররা

এর চেয়ে এই সাত কলেজের পড়ালেখার মান বৃদ্ধিতে বেশি করে নজর দেওয়া উচিত। এখানে শিক্ষার্থীদেরও দায়িত্ব নেওয়ার বিষয় আছে। রাজধানীতে থেকে আপনি তো সব সুবিধাই পাচ্ছেন, তাহলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন কেন? একটা বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট কোনোভাবেই আপনার সাফল্য অর্জনের পথে বাধা হতে পারে না। কোনো আফসোস লীগের কানপড়ায় দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না। 

লেখক: জনসংযোগ পেশায় কর্মরত| 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence